এফএনএস: অন্তর্বতীর্ সরকারের সমালোচনা করবেন কিন্তু ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ব্যর্থ হতে দেবেন না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে ‘দ্রোহের গ্রাফিতি: ২৪—এর গণ—অভ্যুত্থান’ শীর্ষক বইয়ের প্রকাশনা উৎসবে তিনি এ কথা বলেন। বইটি লিখেছেন জি এম রাজিব হোসেন। রিজভী বলেন, আমাদের সবাইকে গণতন্ত্রের সপক্ষে সতর্ক পদক্ষেপ রাখতে হবে। কোনো নৈরাজ্যের কারণে কেউ যেন কোনো সুযোগ নিতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আমাদের খেয়াল রাখতে হবে, প্রতিবিপ্লব সবসময় উঁকিঝুঁকি মারে। এই উঁকিঝুঁকি যেন দিতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। তিনি বলেন, অন্তর্বতীর্ সরকারের নানান কাজ নিয়ে আমরা সমালোচনা করবো, আমরা কথা বলবো। কিন্তু, তারপরও ড. ইউনূসকে আমরা ব্যর্থ হতে দেবো না। কয়েকদিন আগে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেছেন, ড. ইউনূস হলেন আমাদের রক্তঝরা আন্দোলনের সরকার, কনস্ট্রাকটিভ (গঠনমূলক) সমালোচনা যেন হয়। আমরা সমালোচনা করছি, পাশাপাশি বসে আবার কথাও বলছি, ডেমোক্রেটিক কালচার তো এমনই হবে। রিজভী বলেন, এখন আমরা ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে কথা বলছি, অন্তর্বতীর্ সরকারের সমালোচনা করছি। কিন্তু, এটা করার পর মনের মধ্যে এই ভয়টি নেই যে আমি গুম হয়ে যাবো। কমপক্ষে এই জায়গা থেকে আমরা মুক্তি পেয়েছি। ওইটুকু নিঃশ্বাস তো আমরা নিতে পারছি। সুতরাং একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশ থাকলে অনেক কিছু হয়। সেখানে সাহিত্য, শিল্প, বিজ্ঞান প্রত্যেকটির বিকাশ হওয়া সম্ভব। বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, ভারতের মতো একটি গণতান্ত্রিক দেশে এমন নির্লজ্জের মতো কিছু মিডিয়া, কিছু সাংবাদিক বিভিন্ন বয়ান তৈরি করছে, শেখ হাসিনা যেমন করেছে। তারা সেই ফ্যাসিস্টের পক্ষ অবলম্বন করে বয়ান তৈরি করছে। অনেক দিনের গুপ্তধন তারা যেটা সঞ্চয় করেছে, সেই গুপ্তধন যেন হাতছাড়া হয়ে গেছে। সেই গুপ্তধনের ওপর মনে হচ্ছে একটা দানব শুয়ে আছে, তাদের কথার মধ্যে এটা মনে হচ্ছে। আজ দেশে গণতন্ত্রের যে চর্চা শুরু হয়েছে, এটা তারা কোনোভাবেই সহ্য করতে পারছে না। শুধু শেখ হাসিনার মুক্তি, এটা কেন? তিনি বলেন, একটা গণতান্ত্রিক দেশ থেকে আমরা এটা আশা করতে পারি না। তাদের খাপছাড়া কিছু মানুষ মিডিয়ার সঙ্গে যুক্ত। তারা বলছেন, বাংলাদেশ আর থাকবে না। পার্শ্ববর্তী একটা স্বাধীন দেশ থাকবে না, সে কথাকে এলাও করছেন কীভাবে ভারতের নীতিনির্ধারকরা? শেখ হাসিনার যে বক্তব্য, তাকে আশ্রয় দিয়েছে ঠিক আছে, দিতে পারে। কিন্তু, ফ্রি হ্যান্ড দেওয়া, সে বলবে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে, বাংলাদেশের এখানে যে পরিবর্তন হয়েছে, সেখানে সে বড় বড় কথা বলছে, উসকানি দিচ্ছে, অরাজকতা তৈরির প্রচেষ্টা চালাচ্ছে এবং সেটা চালাতে গিয়ে যে প্রতিক্রিয়া হচ্ছে সেই প্রতিক্রিয়ার পক্ষে অবস্থান নিচ্ছেন ভারতের পলিসি মেকাররা। এটা অদ্ভুত ব্যাপার। রিজভী বলেন, আজ দেখলাম গাজীপুরের সাবেক মেয়র বলছেন তাদের যদি রাজনীতি করতে না দেওয়া হয় তাহলে কেউ শান্তিতে থাকতে পারবে না। অর্থাৎ, হত্যার হুমকি দিচ্ছেন। তাদের এই সাহসটা কে দিচ্ছে? সেই সাহসটা দিচ্ছেন পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে শেখ হাসিনা এবং হাসিনাকে সাপোর্ট দিচ্ছে তাদের পলিসি মেকাররা। এটা তো বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের ওপর সরাসরি হস্তক্ষেপ, ভয়ংকর রকমের হস্তক্ষেপ। চরমভাবে আন্তর্জাতিক রীতিনীতি সব কিছু লঙ্ঘন করে এই কাজটি করা হচ্ছে। বিএনপির এই সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, যেসব ছেলেমেয়ে জীবনের উদ্যম নিয়ে দেয়ালে দেয়ালে যে গ্রাফিতি করেছে, সেই কারণেই আন্দোলন সফল হয়েছে। যে আন্দোলনে কোনো সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড থাকে না, শিল্প সাহিত্যের অবদান থাকে না, সেটা কখনোই সফল হয় না। বিপ্লব দীর্ঘজীবী হয়, বেঁচে থাকে, তার পেছনে যে সাংস্কৃতিক প্রাণ থাকে, সেই প্রাণের কারণেই বিপ্লব বেঁচে থাকে। পৃথিবীর বিভিন্ন ক্ষেত্রেই সেটা ঘটেছে। দ্রোহের গ্রাফিতি গ্রন্থটি যিনি লিখেছেন তার উদ্দেশে রিজভী বলেন, রাজিবের যে অবদান, তিনি যে কাজটি করেছেন, আন্দোলনের বিভিন্ন ঘটনাকে তিনি গ্রন্থের আকারে নিয়ে এসেছেন, এটা দ্রুত সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়বে। বৈষম্যবিরোধী ছেলেরা যে কন্ট্রিবিউশন রেখেছেন, তারা যে কাজটি করেছেন, এটা বিশাল অবদান। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি কবি হাসান হাফিজের সভাপতিত্বে প্রকাশনা উৎসবে আরও উপস্থিত ছিলেন, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী, দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ প্রমুখ।