রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:২৪ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::

অগ্নিঝরা মার্চ

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় বুধবার, ২ মার্চ, ২০২২

এফএনএস : আজ ২ মার্চ। উত্তাল মার্চের দ্বিতীয় দিন। এদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় লাখ লাখ ছাত্র-জনতার সামনে বাংলাদেশের মানচিত্রখচিত প্রথম স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন করা হয়। ১৯৭১-এর এই দিনে সারা বাংলাদেশ ছিল আন্দোলনমুখর। আগের দিন ১ মার্চ পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান অনেকটা অপ্রত্যাশিতভাবে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত করার পর মুহ‚র্তের মধ্যে ঢাকার পরিস্থিতি পালে যায়। বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পরদিন ২ মার্চ ঢাকায় হরতাল আহŸান করেন। বঙ্গবন্ধুর আহŸানে ২ মার্চ ঢাকায় স্বতঃস্ফ‚র্ত হরতাল পালিত হয়। রাজধানী মিছিলের নগরীতে পরিণত হয়। দলমত, পথ ও পেশা ভুলে বঙ্গবন্ধুর ডাকে সমগ্র ঢাকা এক ও অভিন্ন হয়ে গণতন্ত্র ও স্বাধিকারের দাবিতে উত্তাল হয়ে ওঠে। সকাল থেকেই রাজধানীর সব দোকানপাট, ব্যবসায় কেন্দ্র, যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। সরকারি-বেসরকারি স্বায়ত্তশাসিত কোন প্রতিষ্ঠানেই কর্মচারীরা কাজে যোগ দেননি। ট্রেন ও বিমান সম্পূর্ণ বন্ধ থাকে। হাজার হাজার মানুষ লাঠি ও রড হাতে রাজপথে নেমে আসেন। সকাল ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় ছাত্রলীগ ও ডাকসুর আহŸানে এক বিশাল ছাত্র জনসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বিকেলে বায়তুল মোকাররম ও পলনে জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে সন্ধ্যার পর অনেকটা হঠাৎ করেই ঢাকা শহরে রাত ৯টা থেকে ৩ মার্চ সকাল ৭টা পর্যন্ত কারফিউ জারি করে সামরিক সরকার; কিন্তু আন্দোলনরত সাধারণ মানুষ কারফিউ প্রত্যাখ্যান করে ‘কারফিউ মানি না মানি না’ স্লোগান দিয়ে রাজপথে নেমে আসে। বেতারে কারফিউ জারির ঘোষণা হওয়ার পর বিভিন্ন এলাকায় স্বতঃস্ফ‚র্তভাবে জনতা রাস্তায় নেমে ব্যারিকেড রচনা করে। গভীর রাত পর্যন্ত কারফিউ ভঙ্গ করে মিছিল বের করে। ‘জয়বাংলা’, ‘জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগানে রাতের ঢাকার নিস্তবদ্ধতা চ‚র্ণবিচ‚র্ণ হয়ে যায়। স্লোগানের পাশাপাশি গুলিবর্ষণের আওয়াজ শোনা যায়। রাতেই বিক্ষোভকারীদের ওপর নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে সেনারা। এতে অন্তত শতাধিক ব্যক্তি হতাহত হন। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নগরীর হাসপাতালগুলোয় বুলেটবিদ্ধ লোকের ভিড় জমতে থাকে। এই রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক বিবৃতিতে ঢাকায় নিরস্ত্র জনতার ওপর গুলিবর্ষণের কঠোর নিন্দা করে বলেন, ‘বাংলাদেশে আগুন জ¦ালাবেন না। যদি জ¦ালান, সে দাবানল হতে আপনারাও রেহাই পাবেন না।’ বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চ পর্যন্ত আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করে দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, বাংলাদেশের জনগণের স্বাধিকার অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। তিনি ৬ মার্চ পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত হরতাল পালনের আহŸান জানান। ৩ মার্চ ’জাতীয় শোক দিবস’ পালনের ডাক দেন। বঙ্গবন্ধু পৃথক এক বিবৃতিতে জাতির উদ্দেশে বলেন, সুশৃ´খল ও শান্তিপূর্ণভাবে হরতাল পালন করুন। লুটতরাজ ও অগ্নিসংযোগের মতো অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে তার প্রতি কড়া নজর রাখুন। ভাড়াটিয়া উস্কানিদাতাদের বিরুদ্ধে সজাগ থাকুন। যে যেখানেই জন্মগ্রহণ করুক, যে ভাষাতেই কথা বলুক, বাংলার প্রতিটি বাসিন্দাই আমাদের দৃষ্টিতে বাঙালি। তাদের জানমাল­ইজ্জত আমাদের কাছে পবিত্র আমানত এবং অবশ্যই রক্ষা করতে হবে। সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু তার ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাসভবনে সমবেত জনতার উদ্দেশে ভাষণ দেন, বাংলার মাটিতে যাতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি না হয় সেদিক সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। তিনি বলেন, ‘সবার প্রতি আকুল আহŸানÑ বাংলার মাটিতে যেন বাঙালি, অবাঙালি, হিন্দু, মুসলিম দাঙ্গা না বাধে। যদি এ ধরনের কোন সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধে, আমি বুকে ব্যথা পাব।’ তিনি বলেন, এখানে সবাই বাঙালি। বাংলার মাটিতে বসবাসকারী বাঙালি­অবাঙালি, হিন্দু-মুসলমান, বৌদ্ধ-খ্রিস্টান সবাই সমান। বাংলাদেশে বসবাসকারী সবাই আমাদের ভাই। করাচিতে এক সংবাদ সম্মেলনে পিপলস পার্টির প্রধান জুলফিকার আলী ভুট্টো বলেন, জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত রাখায় নিশ্চিতভাবে কিছুই ক্ষতি হয়নি। পরিষদ অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত রাখা হয়নি। দেশের দুটি প্রধান দল শাসনতান্ত্রিক ব্যাপারে কিছুটা সমঝোতায় পৌঁছামাত্রই জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনুষ্ঠিত হতে পারে। এ ছাড়া সন্ধ্যায় করাচিতে স্থানীয় আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে দেশের সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি আলোচনার জন্য পিপলস পার্টি বাদে বাকি রাজনৈতিক দলগুলোর এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে ভুট্টোর ভ‚মিকার সমালোচনা করা হয়। আগামী ৫ দিনের মধ্যে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহŸানের দাবি জানানো হয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com