বুধবার, ২৪ জুলাই ২০২৪, ১০:৪৭ অপরাহ্ন

অনলাইনে আবেদন নিষ্পতিতে দীর্ঘসূত্রতা \ ভোগান্তিতে নতুন ভোটাররা

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় বুধবার, ২ মার্চ, ২০২২

জি এম শাহনেওয়াজ ঢাকা থেকে \ অনলাইনে আবেদন নিষ্পতিতে দীর্ঘসূত্রতায় ভোগান্ত্রিতে পড়েছে ভোটার হওয়ার জন্য আবেদন করা নতুনরা। সারাদেশে গতকাল পর্যন্ত অনিষ্পন্ন আবেদনের সংখ্যা সোয়া এগারো লাখের উপরে। বিশ্বব্যাপী প্রাণ-সংহারী করোনা কারণে এই বাড়তি চাপ তৈরি হয়েছে। ফলে জরুরি প্রয়োজনেও অনেকেই জাতীয় ভোটার পরিচয়পত্র না পাওয়ায় দূর্ভোগে রয়েছে। নির্বাচন কমিশন (ইসি) এসব আবেদন দ্রুত নিষ্পতি করতে শিঘ্রই ক্রাশ কর্মসূচি হাতে নেবেন বলে সূত্র নিশ্চিত করেছেন। তবে, জাতীয় পরিচয়পত্রের মহাপরিচালক (ডিজি) বলছেন, যাদের তাৎক্ষণিক সেবা প্রয়োজন পড়ছে নিজ উদ্যোগে তিনি তাদের ভোটার করে দিচ্ছেন। হালনাগাদ কার্যক্রম চলমান প্রক্রিয়া। এটা বন্ধ রাখার সুযোগ নেই। এদিকে, ঢাকাসহ সারাদেশের মাঠ কর্মকর্তারা উপস্থিত ভোটারদের আবেদন এবং অনলাইন আবেদন নিষ্পতি করতেই হিমশিম খাচ্ছেন। দৈনিক দুইশ থেকে তিনশ জন নতুন ভোটার উপস্থিত হচ্ছেন স্ব স্ব থানা ও উপজেলা নির্বাচন অফিসে। কিন্তু ভোটার হওয়ার সামগ্রী অপ্রতুল হওয়ায় দিনে দিনে সবাইকে সেবা দিতে পারছেন না, এমন অভিযোগ-ও পাওয়া যাচ্ছে মাঠ অফিস থেকে। এদিকে, ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার জন্য ভোটার তথ্য সংগ্রহকারীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহের নিদের্শনা থাকলেও বিদায়ী কমিশন এ কার্যক্রম স্থগিত করেন। করোনার কারণে গত দুই বছর ধরে বাড়ি বাড়ি গিয়ে বন্ধ আছে তথ্য সংগ্রহ। এতে এনআইডি পাননি অনেক ভোটার। এতে ভোগান্ত্রি বেড়েছে। তথ্যমতে, সোয়া ১১ লাখ এর বেশি নতুন ভোটারের আবেদন অনিষ্পন্ন রেখে আজ বুধবার উদযাপন হতে যাচ্ছে জাতীয় ভোটার দিবস। বিকাল ৩টায় কমিশন সচিবের সভাপতিত্বে ভোটার দিবসের, – এ আলোচনায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালসহ অপর চার নির্বাচন কমিশনার উপস্থিত থাকবেন। রাষ্ট্রপতি মো আবদুল হামিদ এ উপলক্ষ্যে বাণি দিয়েছেন। জানতে চাইলে এনআইডির ডিজি কে এম হুমায়ুন কবির বলেন, ভোটার হওয়া বন্ধ নেই। কমিশন থেকে ক্রাশ প্রোগ্রাম নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভোটার করা হয়েছে। ভোটার হওয়ার জন্য স্বশরীরে উপস্থিত হতে হয়। যারা অনলাইনে আবেদন করে অফিসে আসছেন না তাদের ভোটার করব কিভাবে। যারা আসছেন সবাইকে ভোটার করা হচ্ছে। তিনি বলেন, আমি নিজ উদ্যোগে জরুরি অনেককে ভোটার করে দিচ্ছি। কারণ -এটি পাসপোর্ট করার জন্য, বিদেশে চিকিৎসার জন্য এবং ব্যাংক একাউন্টসহ নানা কারণে প্রয়োজন হচ্ছে। তাই সেবাটি আমরা নিরবিচ্ছিন্ন রাখার চেষ্টা করছি। সম্প্রতি ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেছিলেন, নভেল করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) কারণে নতুন ভোটারদের তালিকার্ভুক্ত করার জন্য বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হয়নি। বিদায়ী কমিশনের শেষদিকে ইউপি নির্বাচনসহ নানা ঝামেলায়, – এদিকে মনোযোগ দেননি। তবে, – আমরা প্রস্তুতি রেখেছি নতুন কমিশনের কাছে -এ বিষয়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নথি উত্থাপন করা হবে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা, মনময়সিংহ, কুমিল­া, রাজশাহী ও চট্ট্রগ্রামসহ সব বিভাগে নতুন ভোটারের অনলাইন আবেদন অনিষ্পন্ন আছে। এর মধ্যে ঢাকা, কুমিল­া ও ময়মনসিংহে সবচেয়ে বেশি। এ হিসেবে সারাদেশে অনলাইন আবেদনে অনিষ্পন্ন আছে ১১ লাখ ১৪ হাজার ৩৩টি। এর মধ্যে বরিশাল অঞ্চলে ৩৯ হাজার ৯০৯টি, চট্টগ্রামে ১ লাখ ৪৩ হাজার ১২৫৬টি, কুমিল­ায় ২ লাখ ২ হাজার ৬৮০টি, ঢাকা অঞ্চলে ২ লাখ ৯ হাজার ৮৮টি, ময়মনসিংহে ১ লাখ ৭৫ হাজার ১৬৭টি এবং রাজশাহীতে ৮০ হাজার ১১৪টি।। এ ছাড়া তালিকায় ১ লাখ ৭৯ হাজার ৮৩৮জন দ্বৈত ভোটার। রবিবার ইসির মাসিক সমন্বয় সভায় এসব তথ্য উঠে আছে। তথ্য বলছে, ২০২০ সালের এপ্রিলে থেকে গত জানুয়ারি পর্যন্ত নতুন ভোটার নিবন্ধনের জন্য অনলাইনে আবেদন করেছেন ১৯ লাখ ১০ হাজার ৪৭৩ জন। তাদের অনেকেই ইতিমধ্যে ভোটার হয়েছেন। বাকিদের দ্রুত ভোটার করার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রখেছে ইসি সচিবালয়। সদ্য যোগদান করা কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশনের কাছে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম শুরুর প্রস্তাব অগ্রাধিকার ভিত্তিতে উপস্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি, যা অতিরিক্ত সচিবের কথার মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। কমিশনের ঢাকা অঞ্চলসহ মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা বলেন, অনলাইন ও অফলাইন দুই পদ্ধতিতে নতুন ভোটার হতে উচ্ছুক ব্যক্তিরা আবেদন করছেন। দুই বছর ধরে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ না করায় মাঠ অফিসগুলোয় নতুন ভোটার হতে আগ্রহীদের চাপ বাড়ছে। প্রতিদিন গড়ে একটি থানা বা উপজেলা নির্বাচন অফিসে দেড়শ থেকে তিনশ জন মানুষ ভিড় করছেন। জনবল ও ভোটার করার সরঞ্জমাদি পর্যাপ্ত না থাকায় চাহিদা অনুযায়ী নতুন ভোটারদের সেবা দিতে পারছে না তারা। এতে একদিকে সাধারন মানুষের ভোগান্ত্রি বাড়ছে। অন্যদিকে মাঠ পর্যায়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের উপরে বাড়তি চাপ বেড়েছে। ফলে স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। আবার ২০০৪ সালের ডিসেম্বর মাসে যেসব নাগরিকের জন্ম তারাও ব্যক্তি প্রয়োজনে ভোটার হতে পারেননি। ইসি ও মাঠ অফিসে কথা বললেও তারা জানান, ইতিমধ্যে অনলাইনে আবেদন করা নতুন ভোটারদের চাপে আমরা অস্বস্তিতে আছি। নতুন কমিশন এসে ভোটার দিবস উদযাপনের পর এ বিষয়ে কর্মসূচি নিলে আপনারা যোগাযোগ করবেন, তখন সহজে ভোটার হতে পারবেন।মিরপুর-১৩ নং আবাসিক এলাকার একজন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে, এনআইডির ডিজি বিষয়টি অস্বীকার করেন। বলেন, ভোটার হওয়ার যোগ্য সবাইকে ভোটার করা হচ্ছে। এমন অভিযোগ সত্য নয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com