শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১০:০৭ পূর্বাহ্ন

আউশ চাষ থেকে সরে যাচ্ছে কৃষক

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১০ মার্চ, ২০২২

এফএনএস : আউশ চাষ থেকে সরে যাচ্ছে কৃষক। মূলত ফসলের ন্যায্য দাম না পাওয়ায় আগ্রহ হারাচ্ছে কৃষক। দেশে আউশের আবাদ মূলত প্রচলিত স্থানীয় জাত দিয়ে করার কারণে উৎপাদনশীলতা বেশ কম। অঞ্চলভিত্তিক আবহাওয়াগত পার্থক্য থাকলেও ওই অনুযায়ী জাত আসছে না। জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানির অভাবের কারণে ইতিমধ্যে বোরো ধানের বেশকিছু এলাকায় আবাদ সম্প্রসারণের সুযোগ কমে এসেছে। তবে দেশের অনেক জেলায়ই স্বল্প ব্যয়ে আউশ ধান সম্প্রসারণের সুযোগ রয়েছে। আউশ চাষে কৃষককে লাভবান করতে উচ্চফলনশীল বীজের সম্প্রসারণ ও সুষম সার ব্যবহার প্রয়োজন। সেজন্য আউশের বিদেশী জাত নেরিকা ধানে প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে। কিন্তু ওই ধান উৎপাদনে তেমন লাভবান হচ্ছে না কৃষক। তাতে কৃষকরা আরো বেশি নিরুৎসাহিত হচ্ছে। ফলে আমন ও বোরো মৌসুমের মধ্যবর্তী সময় ফাঁকা জমিতে আউশ চাষ করে অতিরিক্ত ফলনের সুযোগ থাকলেও জাতের অভাবে আউশ চাষ থেকে সরে যাচ্ছে কৃষক। বরং এ সময়ে তারা অন্যসব অর্থকরী ফসল আবাদে আগ্রহী হচ্ছে। কৃষি মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, এদেশের প্রধান ফসলগুলোর মধ্যে আউশ অন্যতম। আমন ও বোরোর পাশাপাশি আউশ ফসলও খাদ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। আমন ও বোরোর তুলনায় আউশ ফসলের উৎপাদনশীলতা কম হওয়ার কারণে এ ফসলের চাষাবাদ তুলনামূলক কম হয়। সমসাময়িক অন্যান্য ফসলের চাষাবাদ সহজলভ্য ও লাভজনক হওয়ায় দিন দিন সেসব ফসলের চাষাবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় এ বছর আউশ ফসলের জমি হ্রাস পেয়েছে। সূত্র জানায়, বোরোর ওপর চাপ কমানোর পাশাপাশি সেচের সুব্যবস্থা কম এমন এলাকায় আউশ ধানের বিভিন্ন জাত জনপ্রিয় করার লক্ষ্যে গত কয়েক বছর ভর্তুকি ও প্রণোদনা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। কিন্তু ওসব পদক্ষেপের পরও আউশের আবাদ ও উৎপাদন বাড়ছে না। বরং এক বছরের ব্যবধানে আউশের আবাদ ১ লাখ ৩৯ হাজার হেক্টর বা ১১ দশমিক ৬২ শতাংশ কমেছে। আর উৎপাদন কমেছে প্রায় ৩ লাখ টন বা ৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যমতে, গত ২০২০-২১ অর্থবছরে ৩২ লাখ ৮৪ হাজার ৭১০ টন আউশের উৎপাদন হলেও চলতি অর্থবছরে তা ৩০ লাখ ৮৫৭ টনে নেমে এসেছে। অর্থাৎ উৎপাদন কমেছে প্রায় ২ লাখ ৮৪ হাজার টন। ফলে এক অর্থবছরের ব্যবধানে উৎপাদন কমেছে প্রায় ৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ। গত ২০২০-২১ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৪ হাজার ৯৯৮ হেক্টর জমিতে আউশের আবাদ হয়েছিল। কিন্তু চলতি অর্থবছরে আউশের আবাদ হয়েছে মাত্র ১১ লাখ ৫৯ হাজার ৮০ হেক্টর জমিতে। ফলে এক অর্থবছরের ব্যবধানে আউশের আবাদ কমেছে প্রায় ১ লাখ ৪৬ হাজার হেক্টর বা প্রায় ১১ দশমিক ১৮ শতাংশ। ওই সময় উফশী জাতের আবাদ সবচেয়ে বেশি কমেছে। গত এক অর্থবছরের ব্যবধানে উফশী জাতের আবাদ কমেছে প্রায় ১ লাখ ৩৯ হাজার হেক্টর বা ১১ দশমিক ৬২ শতাংশ। তবে চলতি অর্থবছর আউশের হেক্টরপ্রতি ফলন বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরের ফলন হারের প্রাক্কলিত হিসাব প্রতি হেক্টরে ২ দশমিক ৫৮৯ টন, যা ২০২০-২১ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ৫১৭ টন বা প্রায় ২ দশমিক ৮৬ শতাংশ বেশি। সূত্র আরো জানায়, সার্বিকভাবে ধান ফসলের মোট উৎপাদন বৃদ্ধি করতেই আউশ আবাদ বাড়াতে চায় সরকার। এক একর স্থানীয় জাতের আউশ আবাদে কৃষকের খরচ হয় প্রায় ৩০ হাজার টাকা। আর হাইব্রিড জাতের বোরো আবাদে খরচ প্রায় ৫০ হাজার ৪৮৩ টাকা। আউশ আবাদে বোরোর তুলনায় খরচ কমে প্রায় ৪২ শতাংশ। বিগত ২০১৮ সালে আউশ ধানের উৎপাদন বাড়াতে দেশের ২ লাখ ৩৭ হাজার ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষককে বিনামূল্যে ৪০ কোটি টাকার বীজ, রাসায়নিক সার ও উপকরণ সহায়তা দেয় কৃষি মন্ত্রণালয়। ওসব বীজ ও সার বিতরণে মোট খরচ হয় ৩৯ কোটি ৬২ লাখ ৮৩ হাজার ২৪৫ টাকা। আর ২০১৯ সালে প্রথমবারের মতো আউশে দুই ধাপে প্রণোদনা দিয়েছিল কৃষি মন্ত্রণালয়। আউশ মৌসুমে প্রথম ধাপে দেয়া হয় বীজ, সার, সেচ সুবিধাসহ নগদ অর্থায়ন। আর করোনা পরিস্থিতিতে দ্বিতীয় ধাপে সারা দেশের প্রায় ৩ লাখ ৮৩ হাজার ৪৩৪ জন কৃষককে ৪১ লাখ ৮৬০ কেজি বীজ সহায়তা দেয়া হয়েছিল। ২০১৯-২০ অর্থবছরের আউশ মৌসুমে প্রায় ৩৫ লাখ টন আউশ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নেয়া হয়েছিল। ওই লক্ষ্যে খরিপ-১ মৌসুমে উফশী আউশ উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রণোদনা কার্যক্রম নেয়া হয়। দেশের ৬৪টি জেলায় ৪ লাখ ৫৯ হাজার ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষককে ওই প্রণোদনা দেয়া হয়েছিল। মোট ৪০ কোটি ১৮ লাখ ২০ হাজার ৭৫০ টাকার বীজ, ডিএপি, এমওপি সার, পরিবহন ও আনুষঙ্গিক ব্যয় প্রদান করা হয়। ২০২০ সালে ১ লাখ ১০ হাজার কৃষককে প্রায় ৯ কোটি টাকার বেশি প্রণোদনা দেয়া হয়েছিল। আর ২০২১ সালে খরিপ-১ মৌসুমে নির্দিষ্ট জেলায় কৃষকদের মাঝে ৫ কেজি বীজ, ২০ কেজি ডিএডি ও ১০ কেজি এমওপি সার বিতরণ করা হয়। এদিকে কৃষি মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশে ১৯৭১-৭২ অর্থবছরে প্রায় ৩০ লাখ হেক্টর জমিতে আউশের উৎপাদন ছিল প্রায় ২৩ লাখ ৪১ হাজার টন। পরবর্তী সময়ে ১৯৭৫-৭৬ অর্থবছরে সর্বোচ্চ আবাদ ছিল। ওই সময়ে আবাদ ছিল ৩৪ লাখ ৩০ হাজার হেক্টর। তবে ১৯৭৮-৭৯ অর্থবছরে সর্বোচ্চ উৎপাদন হয়। ওই সময়ে উৎপাদন ছিল ৩২ লাখ ৮৭ হাজার টন। যদিও আবাদ হয়েছিল ৩২ লাখ ৩৪ হাজার একর। পরবর্তী এক দশক উৎপাদন ৩০ লাখ টনের ঘরে ছিল। গত অর্ধযুগের বেশি সময় ধরেই আউশ আবাদে দেয়া হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা। অন্যদিকে আউশের প্রণোদনার বিষয়ে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আবদুর রাজ্জাক সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, আউশের আবাদ ও উৎপাদন বাড়াতে সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে। ভূগর্ভস্থ পানির ভারসাম্য ধরে রাখতে আউশ আবাদ বাড়ানো হবে। উচ্চফলনশীল জাতের আউশ ধান আবাদ বৃদ্ধির মাধ্যমে কৃষকের আয় বৃদ্ধি করা হবে। তুলনামূলক কম উৎপাদন খরচ এবং সরকারের নানাবিধ ভর্তুকি সহায়তা কার্যক্রম এবং পরিবেশগত বিষয়ের কারণে আউশ আবাদ আবার জনপ্রিয় করাই কৃষি মন্ত্রণালয়ের অন্যতম লক্ষ্য।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com