শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৬:৩৪ পূর্বাহ্ন

আগামী ২০ মে শুরু নতুন ভোটারের তথ্য সংগ্রহ প্রস্তুত ইসি

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় রবিবার, ৮ মে, ২০২২

জি এম শাহনেওয়াজ ঢাকা থেকে \ আগামী ২০ মে থেকে শুরু হচ্ছে নতুন ভোটার নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহের কাজ। এ কার্যক্রম চলবে ৩ সপ্তাহজুড়ে। নির্ভুল একটি ভোটার তালিকা প্রণয়নের মাধ্যমে এ কার্যক্রম সফলভাবে সমাপ্ত করতে সব ধরণের প্রস্তুতি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এর আগে আগামী ১০ মে থেকে ভোটার হালনাগাদের সঙ্গে যুক্ত (তথ্য সংগ্রহকারী, ডাটা এন্ট্রি অফিসার ও সুপার ভাইজার) সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণ দেবে ইসি। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক কর্মযজ্ঞ শুরু হয়ে যাবে। প্রাণ-সংহারী নভেল করোনাভাইরাস (কভিড-১৯) সংক্রমণ না থাকায় দীর্ঘ দুই বছর পর নাগরিকের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে হালনাগাদ সম্পন্ন করবে ইসি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, আগামী ২০ মে থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে হালনাগাদের তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু হবে। তবে এর আগেই হালনাগাদে যুক্তদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। অতীতের মতো এবারও একটি নির্ভুল ভোটার তালিকা প্রণয়নে সব ধরণের প্রস্তুতি ও উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ইসির ভোটার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, ২০০৭ সালের ১ জানুয়ারি বা তার আগে যাদের জন্ম এসব নাগরিকদের এ বছর তথ্য সংগ্রহ করা হবে। ধাপে ধাপে ছবি তোলা, হাতের আঙ্গুলের ছাপ (বায়োমেট্রিক) ও চোখের আইরিশ নেওয়ার মাধ্যমে ভোটার হয়ে যাবেন নতুন নাগরিকরা। এ জন্য নির্ধারিত কেন্দ্র ঠিক করে দিবে ইসি। এছাড়া ভোটার তালিকা হালনাগাদ কর্মসূচি-২০২২ এ যাদের জন্ম ২০০৫ সালের ১ জানুয়ারি বা তার আগে এবং বিগত ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে যারা বাদ পড়েছেন তারা নিবন্ধন করতে পারবেন। তথ্যমতে, এনআইডি ছাড়া দেশের কোনো নাগরিকই সরকারি-বেসরকারি সেবা পান না। যার ফলে নানান সমস্যায় ভুল হওয়া এনআইডি নিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হয় সাধারণ মানুষকে। কিন্তু নির্ভুল এনআইডি করে এসব ভোগান্তি থেকে দূরে থাকা সম্ভব। এজন্য যেসব নাগরিকরা নতুন করে ভোটার তালিকায় যুক্ত হবেন, তারা অবশ্যই ফরম-২ শিক্ষাগত সনদ, জন্মনিবন্ধনের সঙ্গে মিল রেখে পূরণ করবেন। তাহলে সঠিক ও নির্ভুল এনআইডি পাওয়া সম্ভব হবে। এর আগে, নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকা হালনাগাদ কর্মসূচি-২০২২ সুষ্ঠু ও সুচারুরূপে সম্পন্নের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় করণীয়র বিষয়ে পরিপত্র জারি করেছে। সরকার বাংলদেশের তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীকে ‘হিজড়া লিঙ্গ’ হিসেবে চিহ্নিত করে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রেক্ষাপটে ভোটার তালিকায় নতুন অন্তর্ভুক্তি করতে পারবেন। তবে হিজড়া জনগোষ্ঠীকে ভোটার হিসেবে নিবন্ধনের ক্ষেত্রে তাদের শনাক্তকরণের জন্য সমাজসেবা অফিসের অথবা স্থানীয় জনপ্রতিনিধির প্রত্যয়নের ভিত্তিতে নিবন্ধন করতে হবে। এ বিষয়ে যথাযথ দৃষ্টি রাখাতে হবে যে তারা যেন ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে কোনভাবেই বঞ্চিত না হয়। ভোটার তালিকাভুক্ত ভোটারদের মধ্যে যারা ইতোমধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন অথচ ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত আছেন তাদের নাম ভোটার তালিকা বিধিমালা, ২০১২-এর ২৬(৬) মোতাবেক কর্তনের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তথ্য সংগ্রহকারীরা ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত মৃত ভোটারের নাম কর্তনের লক্ষ্যে ফরম-১২ পূরণপূর্বক সংগ্রহ করবেন। ফরম-১২ এর সঙ্গে অবশ্যই ‘মৃত্যু সনদ’ বা ডাক্তারের সনদ বা চেয়ারম্যান/মেয়র/কাউন্সিলের প্রত্যয়নপত্র সংযুক্ত করে রাখতে হবে। এ লক্ষ্যে ইউনিয়ন পরিষদ/পৌরসভা/সিটি কর্পোরেশনের জন্ম ও মৃত্যু রেজিস্টার থেকে মৃত ভোটার সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা যেতে পারে। তবে মৃত ভোটারের তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে জীবিত ভোটারের নাম লিপিবদ্ধ না হয় সে বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। এক ভোটার এলাকা থেকে অন্য ভোটার এলাকায় স্থানান্তরের লক্ষ্যে ফরম-১৩ (স্থানান্তর) পূরণপূর্বক প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদিসহ সরাসরি স্থানান্তরিত এলাকার থানা/উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে জমা দেওয়ার পর যথাযথ যাচাই-বাছাই ও তদন্ত স্বাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট ভোটারের ভোটার এলাকা স্থানান্তর করা যেতে পারে। কেন্দ্রীয় ও বিভাগীয়সহ ৭টি কমিটির নজরে থাকবে এবারের ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম। ভোটার তালিকা হালনাগাদ কর্মসূচি-২০২২ এর কার্যক্রম সুষ্ঠু ও সুচারুরুƒপে সম্পাদনের লক্ষ্যে বিভিন্ন পর্যায়ের সমন্বয় কমিটি গঠণ করেছে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়। ইসির অন্য একটি পরিপত্র থেকে জানা যায়, ভোটার তালিকা কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের লক্ষ্যে গড়ে ২ হাজার ৫০০ জন ভোটারের জন্য একজন করে তথ্য সংগ্রহকারী নিয়োগ করা হবে। আর প্রতি ৫ জন তথ্যসংগ্রহকারীর জন্য একজন করে সুপারভাইজার নিয়োগ দেবে ইসি। ভোটার এলাকার সঙ্গে সমন্বয় সাধন এবং ভৌগোলিক, প্রাকৃতিক, প্রশাসনিক, ভোটার এলাকার বিন্যাস ও অন্যান্য কারণে উলি­খিত সংখ্যর হার কমতে বা বাড়তে পারে। বিশেষ করে ভোটার এলাকা অখন্ড রাখার লক্ষ্যে ওই সংখ্যা কম-বেশি হতে পারে। ভোটার তালিকা বিধিমালা, ২০১২ এর বিধি ৪(৫) অনুসারে তথ্য সংগ্রহকারী ও সুপারভাইজার নিয়োগ দিতে হবে বলে জানিয়েছে ইসি। এনআইডি কর্মকর্তাদের তথ্যমতে, দেশে বর্তমানে ১১ কোটি ৩২ লাখ ৮৭ হাজার ১০ জন ভোটার রয়েছে। এরমধ্যে ৫ কোটি ৭৬ লাখ ৮৯ হাজার ৫২৯ জন পুরুষ, ৫ কোটি ৫৫ লাখ ৯৭ হাজার ২৭ জন নারী এবং ৪৫৪ জন তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন। ভোটার তালিকা আইন ২০০৯ এর ধারা ৩ (ক) এ নামে সংজ্ঞায় শিক্ষা সনদগুলোর পাশাপাশি জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন, ২০০৪ এর অধীন নিবন্ধিত নামকে নিবন্ধনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। ইসি সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০০৭-০৮ সালের ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়নের পর ২০০৯, ২০১২, ২০১৪, ২০১৫, ২০১৭ এবং সর্বশেষ ২০১৯-২০২০ সালে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। সেইবার একইসঙ্গে তিন বছরের তথ্য অর্থাৎ যাদের বয়স ২০০৪ সালের ১ জানুয়ারি বা তার পূর্বে ১৮ বছর হয়েছে এমন নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহ করা হয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com