মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৫৩ পূর্বাহ্ন

আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

এফএনএস: আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর ‘একুশের গান’ কবিতার শেষ লাইনগুলো হলো- ‘আমার শহীদ ভাইয়ের আত্মা ডাকে/জাগো মানুষের সুপ্ত শক্তি হাটে-মাঠে-ঘাটে বাঁকে/দারুণ ক্রোধের আগুনে আবার জ¦ালবো ফেব্র“য়ারি/একুশে ফেব্র“য়ারি, একুশে ফেব্র“য়ারি…।’ মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে জোরালো দাবি তুলেছিল সর্বপ্রথম তমদ্দুন মজলিস। ১৯৪৮ সাল থেকে ভাষা আন্দোলনে তমদ্দুন মজলিসের অবদান স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। এমন কী ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস রচয়িতা বশীর আল হেলালও যখন লেখেনÑ ‘তমদ্দুন মজলিসের প্রাথমিক উদ্যোগই ১৯৪৮ সালে ভাষা আন্দোলনে বিশেষ গতি লাভ করেছিল।’ তখন বুঝতে কষ্ট হয় না উলি­খিত চিন্তার শিকড় কতদূর বিস্তার লাভ করেছে। এর প্রমাণ গত তিন-চার বছর বিভিন্ন মাধ্যমে তমদ্দুনপন্থীরা বলতে শুরু করেছেন যে, ‘তাঁরাই ভাষা আন্দোলনের জনক।’ তাই ঘটনাবলীর যথাযথ বিশ্লেষণে এ সব দাবির যৌক্তিকতা দেখে নেয়া দরকার। তমদ্দুন মজলিসের প্রকাশিত পুস্তকাদি এবং প্রতিষ্ঠাতা আবুল কাসেম ও তাঁর সহযোগীদের বিভিন্ন সময়ে প্রচারিত বক্তব্যে দেখা যায়, তাদের লক্ষ্য ছিল দেশে ইসলামী সমাজ ব্যবস্থা কয়েম করার চেষ্টা চালানো। এরা রাজনৈতিক চিন্তায় প্রগতিশীল সমাজ ব্যবস্থার ঘোরবিরোধী ছিলেন। সম্ভবত বাংলা রাষ্ট্রভাষার বিষয়টি তাদের এই বিশেষ প্রয়োজনের অংশ হিসেবেই তাঁরা চেয়েছিলেন; বাঙালী জাতিসত্তার সঙ্গে সমন্বিত করে নয়। মতাদর্শগত এই বৈশিষ্ট্যের কারণ, তাঁরা ভাষা আন্দোলনে আপোসপন্থা গ্রহণে দ্বিধা করেননি। এর প্রমাণ মার্চে জিন্নাহর পূর্ববঙ্গে সফর উপলক্ষে ভাষাবিষয়ক লক্ষ্য অর্জনে তাদের আনন্দ ও প্রত্যাশা এতই স্পষ্ট ছিল যে, কোন দূরদর্শিতার পরিচয় না রেখেই লীগ শাসনের সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে তাঁরা মাঝপথে আন্দোলন স্থগিত করে দিতে এতটুকু দ্বিধা করেননি। এমন কী জিন্নাহ চলে যাওয়ার পর লক্ষ্য অর্জনে চ‚ড়ান্ত ব্যর্থতা সত্তে¡ও সেই স্থগিত আন্দোলন শুরু করার কোন উদ্যোগ তাঁরা গ্রহণ করেননি। এ বিষয়ে সংগ্রাম পরিষদকে উজ্জীবিত করার কোন চেষ্টাও তাঁরা করেননি। তমদ্দুন মজলিসের এই ভ‚মিকার পরও ভাষা আন্দোলন নিয়ে আরও অনেক ঘটনা প্রবাহ চলতে থাকে। ২৪ মার্চ কার্জন হলে সমাবর্তন বক্তৃতায় জিন্নাহ সাহেব যখন রাষ্ট্রভাষা প্রশ্নে সেই পুরনো সুরেই কথা বলেন তখন উপস্থিত ছাত্রদের মধ্য থেকে না না (নো নো) ধ্বনির প্রতিবাদ উচ্চারিত হলো। তখন জিন্নাহ সাহেব কিছুক্ষণ চুপ থেকে তাঁর বক্তব্য শুরু করেন এবং দ্রুত শেষ করে চলে যান। বিদায়ের সময় প্রদত্ত বেতার ভাষণে তিনি উর্দু রাষ্ট্রভাষার বিষয়টি বেশ জোরের সঙ্গেই উলে­খ করেছেন। কার্জন হলে ওই না না প্রতিবাদে অংশ নিয়েছিলেন ভাষাসৈনিক আব্দুল মতিন ও তাঁর সহকর্মী ছাত্রগণ। একই দিন সন্ধ্যায় জিন্নাহ সাহেব সংগ্রাম পরিষদের প্রতিনিধিদেরÑ শামসুল হক, কমরুদ্দিন আহমদ, আবুল কাসেম, মোহাম্মদ তোয়াহা, অলি আহাদ প্রমুখের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে প্রতিনিধি দলের সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়। এর পরও প্রতিনিধি দল সঙ্গে নিয়ে যাওয়া স্মারকলিপিটি পেশ করতে ভুলে যাননি। ভাষাসৈনিক আব্দুল মতিন ও আহমদ রফিক রচিত ‘ভাষা আন্দোলন ইতিহাস ও তাৎপর্য’ গ্রন্থে উলে­খিত তথ্য তুলে ধরা হয়। একই গ্রন্থে বলা হয়েছে, ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস প্রণেতা বদরুদ্দিন উমরের মতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন হয় ১৯৫১ সালের ১১ মার্চ। বদরুদ্দিন উমর লিখেছেন, ১৯৫২ সালের ১৩ মার্চের পর কোন এক সময় পতাকা দিবস পালিত হয় এবং তাতে ৭৫০ টাকা সংগৃহীত হয়েছিল। ১৯৫২ সালের ৪ ফেব্র“য়ারি কর্মসূচী সফল করে তোলার উদ্দেশ্যে বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ এবং যুবলীগের কর্মীরা বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এদের ডাকে স্বতঃস্ফ‚র্ত উদ্দীপনায় সাড়া দেয় ঢাকার প্রতিটি স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীরা। ছাত্রদের ওই সভা থেকে সারাদেশে ২১ ফেব্র“য়ারি হরতাল, ছাত্র-ধর্মঘট ও মিছিলসহ আইন পরিষদ ঘেরাওয়ের প্রস্তাব করা হয়। কারণ ওই দিন পূর্ববঙ্গে আইন পরিষদের অধিবেশন চলার কথা ছিল।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com