সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৩ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::

আরএফইডি’র মিট দ্যা প্রেসে সিইসি হুদা \ আমি রাতের ভোট দেখিনি

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২৮ জানুয়ারী, ২০২২

ঢাকা ব্যুরো \ প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা বলেছেন, ২০১৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দিনের ভোট রাতে হয়েছিল কি না – এ বিষয়ে তিনি কোনো অভিযোগ পাননি। তাই এটি তার নজরে আসেনি। এটি অভিযোগ আকারেই থেকে গেছে। অভিযোগের তদন্ত আদালতের নির্দেশনা ছাড়া হয় না। এ ছাড়া সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ড. শামসুল হুদা নেয়া সীমানা বিন্যাস ত্র“টিপূর্ণ ছিলো, সুজন সম্পাদক বদিউল আলমের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এবং সহকর্মী ইসির জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারের কর্মকান্ড নিয়েও কথা বলেন তিনি। গতকাল বৃহস্পতিবার নির্বাচন ভবনের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ইলেকশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসি (আরএফইডি) আয়োজিত মিট দ্যা প্রেসে উপস্থিত হয়ে সিইসি এসব কথা জানান। এ বৈঠকে সিইসি তার পাঁচ বছর মেয়াদের নানা কর্মযজ্ঞ তুলে ধরেন। ‘আরএফইডি টক’ শীর্ষক এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি সোমা ইসলাম। সঞ্চালনায় ছিলেন সাধারণ সম্পাদক কাজী জেবেল। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দিনের ভোট রাতে হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে, এ নিয়ে মতামত জানতে চাইলে সিইসি বলেন, অভিযোগের ওপর ভিত্তি করে আমি কনক্লুসিভ কিছু বলতে পারি না। কারণ, আমি তো দেখি নাই। আপনিও দেখেননি যে রাতে ভোট হয়েছে। তদন্ত হলে বেরিয়ে আসত, বেরিয়ে এলে আদালতের নির্দেশে নির্বাচন বন্ধ হয়ে যেত। সারা দেশের নির্বাচনও বন্ধ হয়ে যেতে পারত। রাজনৈতিক দলগুলো কেন আদালতে অভিযোগ দেয়নি সেটা তাদের বিষয়। এ সুযোগ তারা হাতছাড়া করেছে। সিইসি বলেন, এটা এখন প্রায়ই শোনা যায়। কিন্তু এটা অভিযোগ। সংসদ নির্বাচনের সময় আদালতে যেতে বলেছিলাম প্রার্থীদের। কিন্তু কোনও রাজনৈতিক দলই কেন যায়নি জানি না। যেহেতু যাননি, তার অর্থ এটা অভিযোগ। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, নির্বাচন অনুষ্ঠানে কোনো রাজনৈতিক দলের চাপ ছিল না। কোনো রাজনৈতিক দলের প্রভাবে প্রভাবিত হইনি। ক্ষমতাসীন দলের একাধিক সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করেছি। আদালতে গিয়ে তাদের জামিন নিয়ে আসতে হয়েছে। অনেক মামলা বিচারাধীন আছে। তিনি আরও বলেন, নারায়ণগঞ্জ নির্বাচনের আগেও আমি বলেছিলাম, কোনো রাজনৈতিক দলের চাপ আগেও ছিল না, এখনো নেই। আর কুমিল­া এবং নারায়ণগঞ্জে আমাদের যে অবস্থান অন্য কোনো নির্বাচনের চেয়ে একটুও অতিরিক্ত অবস্থান ছিল না। অন্য সবগুলো নির্বাচন যেভাবে করেছি, সেভাবেই হয়েছে। একটা জায়গায় আমাদের অতৃপ্তি আছে, কুমিল­া ও নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচন ছাড়া অন্য জায়গায় সংঘাত হয়েছে। সকাল থেকে আমরা দেখি পরিচ্ছন্ন ভোট হচ্ছে। যখন ফল ঘোষণা করা হয়, তখন হানাহানি হয়। এগুলো কাম্য না। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের এ যাবৎকালের কার্যক্রম তুলে ধরে তিনি বলেন, করোনা মহামারিতে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় যেটা জনগণের ভোটাধিকার প্রক্রিয়া এবং জনপ্রতিনিধিদের পরিবর্তনের প্রক্রিয়া, এটা আমরা বন্ধ রাখিনি। অ্যাট এনি কস্ট, ঝুঁকি নিয়ে…বর্তমান নির্বাচন কমিশনের প্রায় ২০ জন লোক করোনায় আক্রান্ত, এর মধ্যেও আমরা পিছিয়ে থাকিনি। নির্বাচন আমরা সম্পন্ন করেছি। এদিকে, নির্বাচনে বিভিন্ন দলের এজেন্টদের জন্য ভোট কেন্দ্রে অনুকূল পরিবেশ ছিল না- এমন অভিযোগের জবাবে তিনি বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বেশিরভাগ সময় অভিযোগ আসে না। তিনি বলেন, বর্তমান কমিশনের আমলে স্থানীয় সরকার নির্বাচনসহ সব ধরনের নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হয়েছে, প্রতিযোগিতাপূর্ণ হয়েছে। আরেক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন শতভাগ ইভিএমে করা সম্ভব হবে না, তবে ৫০ ভাগ করা যেতে পারে। গত পাঁচ বছর দায়িত্ব পালনকালে তিনি নিজেকে শতভাগ সফল হিসেবে দেখছেন না, তবে তার আন্তরিকতার অভাব ছিল না। ইসির বিরুদ্ধে ৪২ নাগরিকের করা অভিযোগ ভিত্তিহীন ছিল মন্তব্য করে তিনি বলেন, বিভিন্ন পর্যায়ের অভিযোগ তদন্ত করা হচ্ছে। নির্বাচন কমিশন আইন হলে রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা ফিরে আসবে কি না, – এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সার্চ কমিটি ব্যবস্থা ভালো, তবে আইন হওয়া সবচেয়ে বেশি ভালো। প্রধান নির্বাচন কমিশনার গত পাঁচ বছরের রোডম্যাপে কী কী করেছেন এবং কী রেখে যাচ্ছেন সে সম্পর্কেও তুলে ধরেন অনুষ্ঠানে। শামসুল হুদা ও বদিউল আলম মজুমদারের সমালোচনায় সিইসি : সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এটিএম শামসুল হুদা ও সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের কঠোর সমালোচনা করে সিইসি বলেন, সদিচ্ছা থাকলে বর্তমান নির্বাচন কমিশন ভালো নির্বাচন করতে পারত। তাদের পারফর্মেন্স সন্তোষজনক নয়। তারা বিভিন্ন বিষয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করেছেন। ওয়ান-ইলেভেন জমানার সাবেক ওই সিইসির উদ্দেশে কেএম নূরুল হুদা বলেন, কয়েকদিন আগে এটিএম শামসুল হুদা সাহেব ছবক দিলেন। তিনি বললেন, আমাদের অনেক কাজ করার কথা ছিল, করতে পারিনি, বিতর্ক সৃষ্টি করেছি। একজন সিইসি হিসেবে তার কথা আমার কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি। ইসি ইজ ওয়ান অব দ্য মোস্ট কমপ্লেক্স ইন্সটিটিউশন। এর মধ্যে একজন বাহবা নিয়ে যাবেন বা স্বীকৃতি নিয়ে যেতে পারে- এটা সম্ভব না। তার পক্ষে সম্ভব; আমিত্ব বোধ থেকে বলতে পারেন। ২০০৭-০৮ সালে জরুরি অবস্থার সময়ে সিইসির দায়িত্ব পালন করা এটিএম শামসুল হুদা ‘বিরাজনীতির পরিবেশে সাংবিধানিক ব্যত্যয়’ ঘটিয়েছেন বলে মন্তব্য করেন কে এম হুদা। বলেন, ইসির দায়িত্ব ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করা। তিনি নির্বাচন করেছেন ৬৯০ দিন পরে। এ সাংবিধানিক ব্যত্যয় ঘটানোর অধিকার তাকে কে দিয়েছে? তখন গণতান্ত্রিক সরকার ছিল না, সেনা সমর্থিত সরকার ছিল; ইমারজেন্সির কারণে এটা করেছে। গণতান্ত্রিক সরকারের সময়ে করা সম্ভব না। এদিকে, নবম সংসদ নির্বাচনের আগে নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা সুশাসনের জন্য নাগরিককে (সুজন) প্রার্থীদের হলফনামা প্রচারের কাজ দেওয়ার সমালোচনা করে কে এম হুদা বলেন, বিরাজনীতির পরিবেশের মধ্যে তিনি (এটিএম শামসুল হুদা) এটা করেছেন। তিনি বদিউল আলম মজুমদারের কীভাবে নিয়োগ দিয়েছেন? লাখ লাখ টাকা কীভাবে দিলেন? এ রকম অনেক কিছু করা যায়। ভেবে চিন্তে কাজ করতে হবে। সব কিছুর ঊর্ধ্বে এখান থেকে গেছে, এটা সম্ভব না, ক্যানট বি। অনেক সমালোচনার আছে। সিইসি হুদা বলেন, বদিউল আলম মজুমদার এই কমিশন নিয়ে অনেক কথা বলে ফেলেন। এটার একটা ইতিহাস আছে। এখানে যোগদানের পর থেকে আমার সঙ্গে দেখা করতে চান। তাকে নিয়ে অনেক ঝামেলা, অনিয়ম। এক কোটি টাকার আর্থিক অনিয়ম, কাজ না করে টাকা দেওয়া, নির্বাচন কমিশনে সভায় অনিয়ম নিয়ে সিদ্ধান্ত আছে। বর্তমান ইসির সময়ে কাজ না পাওয়ায় ‘ক্ষুব্ধ হয়ে’ বদিউল এখন কমিশনের সমালোচনা করছেন বলে মন্তব্য করেন নূরুল হুদা। তিনি বলেন, দুই বছর আমার পেছনে ঘুর ঘুর করছেন। একা একা এসেছেন। খবর পেয়েছি প্রায় ১ কোটি টাকা আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ ও অন্যান্য অভিযোগ রয়েছে। এ লোকের সঙ্গে আলাদাভাবে আলোচনা করা যায় না, বিশ্বাস করা যায় না। উনি নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কোনো বিশেষজ্ঞ…, কাজ নেই। সংবাদ সম্মেলন করার বিশেষজ্ঞ উনি। আমাদের তো তার দরকার নেই। ইসি মাহবুব তালুকদার একজন রোগাক্রান্ত ব্যক্তি: সিইসি : দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মাহবুব তালুকদারের বিভিন্ন মন্তব্যকে তার ‘ব্যক্তিগত এজেন্ডা’ বলে মন্তব্য করেন সিইসি হুদা। সিইসি বলেন, তিনি একজন রোগাক্রান্ত ব্যক্তি। শারীরিক দিক দিয়ে তিনি আসলেই অসুস্থ। তিনি কখনও আইসিইউতে, কখনও সিসিইউতে থাকেন। সিঙ্গাপুরে ট্রিটমেন্ট (চিকিৎসা) করেছেন, ভারতে ট্রিটমেন্ট করেছেন। বছরে প্রায় ৩০-৪০ লাখ টাকার ট্রিটমেন্ট করেন, এটা নির্বাচন কমিশন বহন করে থাকে। ইসি মাহবুব তালুকদার নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার ও বিনা ভোটের নির্বাচন নিয়ে সমালোচনা করেছেন, এ বিষয়ে জানতে চাইলে কে এম নুরুল হুদা বলেন, বিনা প্রতিদ্ব›দ্বীতায় কেউ নির্বাচিত হলে ইসির কী করার আছে? এটা তো প্রার্থীদের সিদ্ধান্ত, রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। বিনা ভোটে নির্বাচিত কেন হলো সেটা দেখার এখতিয়ার ইসির নেই। মাহবুব তালুকদারের উদ্দেশে সিইসি বলেন, উনি এগুলো বলে থাকেন। কোনও নির্বাচন হলে ৬-৭ দিন ধরে বেছে বেছে বের করেন কোন শব্দটা কোন জায়গায় ব্যবহার করবেন, যেটা মিডিয়ায় ভালো প্রচারণা পাবে। এ কথা বারবার বলেছি। উনি ব্যক্তিগতভাবে যেটা বলেন, সেটা উনার ব্যক্তিগত মতামত। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনই একমাত্র সমাধান : সিইসি : প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, দলীয় সরকারের অধীন নির্বাচন কঠিন হলেও এটাই একমাত্র সমাধান। গণতন্ত্রে উন্মুক্ত পরিবেশ থাকতে হবে উলে­খ করে তিনি বলেন, এখানে বন্দুকের নল অথবা লাঠি উঁচিয়ে নির্বাচনকে সাইজ করা যায় না। এটার জন্য ছেড়ে দিতে হয় উন্মুক্ত পরিবেশ। সেখানে ভুল-ভ্রান্তি হবে। সেখানে সংঘাত হবে, বিতর্ক হবে। মিছিল হবে, মিটিং হবে, এখন যেমন হয়। এই হলো পরিবেশ। বন্দুক মাথায় রেখে নির্বাচনের অবস্থা একটা হতে পারে, চিরদিনই সেটা হতে পারে না। তার জন্য খুলে দিতে হবে দরজা। এখন সেই দরজা খুলে গেছে। এখন রাজনৈতিক পরিমন্ডলে নির্বাচন হয়, এ নির্বাচন অত্যন্ত কঠিন। কিন্তু সম্ভব, এর মধ্য দিয়েই আমাদের যেতে হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com