শুক্রবার, ২৬ জুলাই ২০২৪, ০৪:৩৭ অপরাহ্ন

আশা জাগিয়েও বাংলাদেশের হার

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় রবিবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২২

এফএনএস স্পোর্টস: একটি ক্যাচ মিস। একটি জমাট জুটি। আশাভঙ্গের অসংখ্য আর্তনাদ। আরও একবার সম্ভাবনা জাগিয়েও না পারার যন্ত্রণা। টেস্ট ম্যাচের সকালে ম্যাচের শুরু থেকেই হাজার তিনেক দর্শক মাঠে, মিরপুরে এমন কিছু আগে দেখা গেছে খুব কম সময়ই। যে সম্ভাবনার হাতছানি তাদেরকে ডেকে আনে মাঠে, তা আরও উজ্জ্বল সকালের তিন উইকেটে। কিন্তু ওই ক্যাচ পড়ার পরই সম্ভাবনাগুলো একটু একটু করে গেল মিলিয়ে। সম্ভাব্য এক স্মরণীয় জয় শেষ পর্যন্ত রূপ নিল হতাশার হাহাকারে। আগের দিন শেষ বিকেলে যে স্বপ্নের শুরু, চতুর্থ দিন সকালে সেই স্বপ্নের ঠিকানা যেন আরও নাগালে। মিরপুরের বাতাসে তখন জয়ের সুবাস। কিন্তু বিরুদ্ধ ¯্রােতে লড়াই করে রবিচন্দ্রন অশ্বিন ও শ্রেয়াস আইয়ার বাংলাদেশের মুঠো থেকে মুক্ত করলেন নিজেদের। ৩ উইকেটের জয়ে ভারত সিরিজ জিতে নিল ২-০ ব্যবধানে। ৭৪ রানে ৭ উইকেট হারানো দল আর কোনো উইকেটই হারাল না শ্রেয়াস ও অশ্বিনের দৃঢ়তায়। অষ্টম উইকেটে ৭১ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে নিজেদের রাঙালেন তারা রোমাঞ্চকর জয়ে। অথচ এই জুটি থামতে পারত শুরুতে। মেহেদী হাসান মিরাজের বলে ১ রানে শর্ট লেগে ক্যাচ দেন অশ্বিন। কিন্তু বলে হাত ছোঁয়ালেও তা মুঠোবন্দি করতে পারেননি মুমিনুল। কে জানত, শুধু বল নয়, মাটিতে পড়ে গেল তখনও বাংলাদেশের সম্ভাবনাটুকুও! সেই অশ্বিন শেষ পর্যন্ত খেলেন ৪২ রানের ম্যাচ জেতানো অপরাজিত ইনিংস। শ্রেয়াস অপরাজিত থেকে যান ২৯ রানে। অথচ এর আগ পর্যন্ত সবকিছু ছিল শুধুই বাংলাদেশময়। অনেক প্রত্যাশার সকালটি শুরু হয় নাটকীয়তায়। দিনের তৃতীয় বলেই রিভিউ নিয়ে বাংলাদেশ উইকেট পায়নি আম্পায়ার্স কলে সামান্য একটুর জন্য। পরের বলেই স্লগ সুইপে ছক্কা মেরে দেন নাইওয়াচম্যান জয়দেব উনাদকাট। পরের ওভারেই জোরের ওপর করা ডেলিভারিতে উনাদকাটকে এলবিডব্লিউ করে দেন সাকিব। ক্রিজে পা রাখেন রিশাভ পান্ত, ভারতের সবচেয়ে বড় আশা আর বাংলাদেশের মূল শঙ্কা। উইকেটে যার ¯্রফে আধ ঘণ্টার উপস্থিতিও গড়ে দিতে পারে দিনের ভাগ্য। মিরাজ তখনও কেবল আড়মোড়া ভাঙছেন যেন। প্রথম দুই ওভারে রান দেন তিনি ১৬। পান্ত নেমে নিজের কাজ শুরু করে দেন। নিজের খেলা পঞ্চম বলেই সাকিবকে চার মেরে দেন রিভার্স সুইপে। তবে মিরাজ জড়তা ভেঙে ছন্দে ফিরে থামিয়ে দেন পান্তের অভিযান। সোজা এক ডেলিভারি হালকা স্কিড করে ছোবল দেয় পান্তের পায়ে। আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা না করেই উদযাপন শুরু করে দেন মিরাজ। আম্পায়ারের আঙুলও উঠে যায়। পান্ত রিভিউ নেননি, নিলেও লাভ হতো না। পান্তকে ফেরানোর রেশ থাকতে থাকতেই মিরাজ আরেকবার এনে দেন উচ্ছ¡াসের উপলক্ষ। এবার তার শিকার দলের মূল বাধা হয়ে থাকা আকসার প্যাটেল। আগের দিন প্রমোশন পেয়ে চার নম্বরে ক্রিজে যাওয়ার পর থেকে ভারতের সেরা ব্যাটসম্যান মনে হচ্ছিল তাকে। এই কঠিন উইকেটে ও পরিস্থিতিতেও ছিলেন দারুণ সাবলিল। কিন্তু মিরাজের সামনে মাথা নিচু করতে হয় তাকেও। রাউন্ড দা উইকেটে করা ডেলিভারি অ্যাঙ্গেলে ভেতেরে ঢোকে আরও। বল আকসারের প্যাডে লেগে উপড়ে দেয় লেগ স্টাম্প। ৩৪ রানে থামে তার ইনিংস। মিরাজ পূর্ণ করেন ৫ উইকেট। একটু পর ধরা দিতে পারত ষষ্ঠ উইকেটও। কিন্তু মুমিনুলের ভুলে তা আর হলো না। জীবন পেয়ে আর ভুল করলেন না অশ্বিন। আত্মবিশ্বাসী ব্যাটিংয়ে টিকে গেলেন শ্রেয়াসও। রোদ ওঠার পর একটু সহজ হয়ে এলো উইকেট। বাংলাদেশের বোলিং ধারও যেন কমে গেল কিছুটা। জুটি এগোতে থাকল। আস্তে আস্তে দূরে যেতে থাকল বাংলাদেশের সম্ভাবনা। চাপে পড়ে ফিল্ডিংও হয়ে গেল আলগা। কিছুতেই আর কিছু হলো না। জয়ের জন্য যখন প্রয়োজন ১৬ রান, মিরাজের হাতে আরেক দফায় বল তুলে দিলেন সাকিব। কিন্তু ওই ওভারেই এক ছক্কা, দুই চারে ১৬ রান নিয়ে ম্যাচ শেষ করে দিলেন অশ্বিন। কাজ শেষ করে উইকেটে উদযাপন করলেন অশ্বিন-শ্রেয়াস, ড্রেসিং রুমে চওড়া হাসি দেখা গেল বিরাট কোহলিদের মুখে। গুটিকয় ভারতীয় সমর্থকের উচ্ছ¡াস ছাড়া গোটা গ্যালারি তখন স্তব্ধ। আরও একবার, আরও একটি সম্ভাবনার অপমৃত্যু। বছরের শুরুতে মাইন্ট মঙ্গানুই টেস্টে অভাবনীয় এক জয় ধরা দিলেও বছরের শেষটা হলো না রূপকথাময়। সংক্ষিপ্ত স্কোর: বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ২২৭। ভারত ১ম ইনিংস: ৩১৪। বাংলাদশ ২য় ইনিংস: ২৩১। ভারত ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ১৪৫, আগের দিন ৪৫/৪) ৪৭ ওভারে ১৪৫/৭ (আকসার ৩৪, উনাদকাট ১৩, রিশাভ ৯, শ্রেয়াস ২৯*, অশ্বিন ৪২*; সাকিব ১৪-০-৫০-২, তাইজুল ১১-৪-১৪-০, মিরাজ ১৯-৪-৬৩-৫, তাসকিন ১-০-৪-০, খালেদ ২-০-১২-০)। ফল: ভারত ৩ উইকেটে জয়ী। সিরিজ: ২ ম্যাচ সিরিজে ভারত ২-০তে জয়ী। ম্যান অব দা ম্যাচ: রবিচন্দ্রন অশ্বিন। ম্যান অব দা সিরিজ: চেতেশ্বর পুজারা।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com