এফএনএস : দেশের অন্যতম একটি রপ্তানি পণ্য হচ্ছে সাদা সোনা হিসাবে খ্যাত চিংড়ি। এদেশ থেকে ইউরোপের বাজারেই সবচেয়ে বেশি চিংড়ি রপ্তানি হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক বিশ্ব পরিস্থিতির জেরে দেশ থেকে ইউরোপে চিংড়ি রপ্তানিতে স্থবিরতা বিরাজ করছে। গত জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯ মাসে ইউরোপের দেশগুলোতে বাংলাদেশ থেকে মাত্র সাড়ে ১৬ হাজার মেট্রিকটন চিংড়ি রপ্তানি হয়েছে। অথচ করোনা মহামারির মধ্যেও তার চেয়ে অনেক বেশি ছিল ইউরোপের দেশগুলোতে বাংলাদেশের চিংড়ি রপ্তানির পরিমাণ। বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএফএফইএ) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ইউরোপের বাজারেই বাংলাদেশের হিমায়িত চিংড়ির ৮৫ শতাংশ রপ্তানি হয়। আর আমেরিকাসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে যায় বাকি ১৫ শতাংশ চিংড়ি। দেশে করোনা ভাইরাসের ঢেউ শুরু হলে চিংড়ি রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়। ফলে দেশের অন্যতম রপ্তানি পণ্যের এই খাত আর্থিক মন্দার কবলে পড়ে। কিন্তু করোনা ভাইরাসের আঘাত কেটে যাওয়ার পর হিমায়িত চিংড়ি খাতে আবার আশার আলো দেখা দেয়। কিন্তু বিদ্যমান পরিস্থিতিতে তাও হতাশায় রূপ নিয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ওই দুটি দেশে সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায় চিংড়ি রপ্তানি। আর ইউরোপের বাকি দেশগুলোতে যে চিংড়ি রপ্তানি হচ্ছে তার পরিমাণও অনেক কম। ফলে তীব্র হতাশায় ভুগছে চিংড়ি রপ্তানিকারকরা। সূত্র জানায়, ইউরোপের বাজারে জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯ মাসে মাত্র সাড়ে ১৬ হাজার মেট্রিকটন চিংড়ি রপ্তানি হয়েছে। আর তা থেকে আয় হয়েছে ১ হাজার ৮৬৬ কোটি ২৮ লাখ ৮৬ হাজার ৪৯৬ টাকা। তার আগে করোনা মহামারির মধ্যে ২০২১ সালে ২৫ হাজার ৫৪৪ মেট্রিকটন চিংড়ি রপ্তানি হয় এবং তা থেকে ২ হাজার ৫০ কোটি ৭৬ লাখ ৬৩ হাজার ৪৫৬ টাকা আয় হয়। তাছাড়া ২০২০ সালে ইউরোপে ২২ হাজার ৯১ মেট্রিক টন চিংড়ি রপ্তানি হয় এবং ওই বছর চিংড়ি রপ্তানি করে ২ হাজার ৬০০ কোটি ৩৬ লাখ ৭৬ হাজার ৫১৫ টাকা আয় হয়। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বাংলাদেশ থেকে ইউরোপের বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, ইতালি, সুইজারল্যান্ড, ডেনমার্ক ও সুইডেনে চিংড়ি রপ্তানি হচ্ছে। কিন্তু ওই রপ্তানির পরিমাণ খুবই কম। অথচ করোনাকালীন বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যেও বাংলাদেশের চিংড়ি রপ্তানির পরিমাণ ইউরোপের ওই দেশগুলোতে বেশি ছিল। সূত্র আরো জানায়, খুলনা অঞ্চল থেকে ২০২০-২১ অর্থবছরে হিমায়িত চিংড়ির সম্ভাবনাময় বাজার হিসেবে রাশিয়ায় ৭৩১ মেট্রিক টন ও ইউক্রেনে ১১৯ মেট্রিক টন চিংড়ি রপ্তানি হয়েছিল। আর সেখান থেকে ৬৯ কোটি ৪৪ লাখ টাকা বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়েছিল। তাছাড়া ২০২১-২২ অর্থবছরে রপ্তানি হয় ২৬৯ মেট্রিক টন চিংড়ি এবং তা থেকে আয় হয় ২৩ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে ওই দুটি দেশে চিংড়ি রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়। এ প্রসঙ্গে বিএফএফইএর সহ-সভাপতি এস হুমায়ুন কবীর জানান, আন্তর্জাতিকভাবে চিংড়ির বাজার বাড়াতে হলে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশকে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিনিধিত্ব বাড়াতে হবে। তা নাহলে বর্তমানে যে পরিমাণ চিংড়ি রপ্তানি হচ্ছে তাও সংকুচিত হয়ে পড়বে।