শুক্রবার, ২৬ জুলাই ২০২৪, ১০:০১ অপরাহ্ন

উত্তরে শীতের আগমনী বার্তা

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় শনিবার, ১৫ অক্টোবর, ২০২২

এফএনএস: শরৎ শেষে আসছে হেমন্ত। এরপরই আসবে শীত। কিন্তু এরইমধ্যে দেশের উত্তরাঞ্চলে শীতের আগমনী বার্তা দিচ্ছে। গতকাল শুক্রবার ভোর থেকে ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়েছে উত্তরের জেলাগুলো। ফলে সড়কে হেডলাইট জ¦ালিয়ে চলাচল করছে যানবাহন। দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড় মৌসুমের প্রথম ঘন ঘুকাশায় ঢাকা পড়ে গতকাল শুক্রবার। তাপমাত্রা নামে ২১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। খালে-বিলের পদ্ম ও ধানের শীষে বৃষ্টির মতো টিপ টিপ করে ঝরে শিশির। মৌসুমের এই প্রথম ঘন কুয়াশায় দেশের উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে জানান দিয়েছে শীতের আগমনী বার্তা। শরতের বিদায় ঘণ্টা বাজতে না বাজতেই হেমন্তকে পাশ কাটিয়ে আগাম শীত দেখা দিয়েছে পঞ্চগড়ে। সন্ধ্যা নামতেই হালকা শীত ও কুয়াশার চাদরে ঢেকে যাচ্ছে গোটা জেলা। শীত আর কুয়াশার এমন লুকোচুরিতে জেলার গত কয়েকদিনের ভ্যাবসা গরমে জনজীবনে ফিরেছে স্বস্তি। গতকাল শুক্রবার সকালে কুয়াশার কারণে দিনের বেলাতেও মহাসড়কে যানবাহনগুলো হেডলাইট জ¦ালিয়ে চলাফেরা করতে দেখা গেছে। এদিকে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় পর্যটকদের আনাগোনায় ভরপুর হয়ে উঠছে বিনোদন কেন্দ্রগুলো। তবে আকাশ মেঘমুক্ত না থাকায় এবং ঘন কুয়াশার কারণে বিশ্বের তৃতীয় উচ্চতম শৃঙ্ঘ কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে না পারায় বিমুখ হয়ে ফিরছেন অনেকেই। জানা গেছে, অক্টোবরের শুরুতে খানিকটা কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা গেলেও গত কয়েকদিন ধরে আর দেখা যাচ্ছে না। কুয়াশার সঙ্গে শীত নামিয়ে জেলায় কমতে শুরু করেছে তাপমাত্রা। আবহাওয়া অফিস বলছে গত কয়েকদিনে পঞ্চগড়ে লাগাতার বৃষ্টির কারণে গতকাল শুক্রবার ভোর থেকে হঠাৎ করে কুয়াশার পরিমাণ বেড়েছে। যতই রাত হচ্ছে শীতের তীব্রতা এবং কুয়াশার ঘনত্ব বাড়ছে। আগামী দিনগুলোতে শীত ও কুয়াশার তীব্রতা আরও বাড়বে। এদিকে তেঁতুলিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে পর্যটকেরা খালি চোখে বিশ্বের তৃতীয় উচ্চতম শৃঙ্ঘ কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে আসলেও কুয়াশা ও মেঘমুক্ত আকাশ না থাকায় হতাশ হয়ে অপেক্ষার প্রহর গুণছেন। অনেকেই আবার গত তিন দিন ধরে কাঞ্চনজঙ্গা দেখতে তেঁতুলিয়ায় অবস্থান নিলেও ফিরছেন হতাশ হয়ে। ঠাকুরগাঁও থেকে আসা আবদুস সামাদ বলেন, ভোর রাতে তেঁতুলিয়ায় কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে এসেছি। কিন্তু ঘন কুয়াশায় দেখতে না পেরে হতাশ হয়েই ফিরে যাচ্ছি। দিনজপুরের আসমা বেগম নামে আরেক পর্যটক বলেন, কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে না পারলেও চলতি মৌসুমের প্রথম ঘন কুয়াশা ও শীত অনেকটাই উপভোগ করেছি। পরিবারের সঙ্গে অনেকটাই আনন্দ কেটেছে। তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ্ বলেন, অক্টোবরের শুরু থেকে পঞ্চগড়সহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টিপাত হয়েছে। ফলে হঠাৎ করেই ঘন কুয়াশা নেমেছে। এতে করে আগামীতে কুয়াশা বাড়ার পাশাপশি তাপমাত্রা আরও কমে শীত পুরোপুরি নামনে। গতকাল শুক্রবার সকাল ৯টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ২১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা। অন্যদিকে উত্তরের আরেক জেলা দিনাজপুরেও প্রায় একই অবস্থা। দিনাজপুরের উপশহর মিস্ত্রী পাড়া মহল­ার বাসিন্দা বাংলাদেশ পল­ী উন্নয়ন বোর্ডের (বিআরডিপি) অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আইনুল হক বলেন, আজ (গতকাল শুক্রবার) আশ্বিন মাসের ২৯ তারিখ। এ মাসের শেষে এমন ঘন কুয়াশা গত কয়েক বছর দেখেনি দিনাজপুর বাসী। হাঁটতে খুব ভালো লাগছে, আজকের দিনে কুয়াশা জানান দিচ্ছে যে শীত এসে গেছে। সদর উপজেলার খোদমাধবপুর মিস্ত্রিপাড়া জামে মসজিদে নামাজ পড়তে আসা মুসুলি­ আনোয়ার হোসেন বলেন, আশ্বিন মাসের শেষে ঘন কুয়াশা পড়ে গেছে। শীতের প্রভাব হয়তো আসছে। একদিকে বৃষ্টি, আরেক দিকে গরম ও কুয়াশা। সব মিলিয়েই আমাদের এ বাংলাদেশ। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, শীত আসার আগেই এবার আশ্বিন মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে হালকা কুয়াশা পড়তে শুরু করেছে। তবে আজকে যে ঘন কুয়াশা পড়েছে তা ব্যাপক। যা এ সময়ে কল্পনাই করা যায় না। ইজিবাইক চালক তসলিম বলেন, কুয়াশা মানেই শীত আসার নমুনা। আমাদের কাছে আজকের কুয়াশা ভালোই লাগছে। তবে এ সময়ে এমন ঘন কুয়াশা পড়তে আগে দেখিনি। ভোরে হাঁটতে বের হওয়া জাকির হোসেন বলেন, অক্টোবর মাসে প্রাকৃতিক নিয়মেই কিছুটা কুয়াশা পড়ার কথা। তবে আজকে কুয়াশা যেন একটু বেশিই পড়েছে। একটু দূরের কিছু দেখা যাচ্ছে না। সদর উপজেলার মহাসড়কের পার্শ্ববর্তী বাসিন্দা রুম্মান বলেন, আশ্বিন মাসের ২৯ তারিখ। এখন গরমের তীব্রতা নেই। আবার শীত অনুভ‚ত না হলেও আজ কুয়াশা পড়েছে। ঋতু পরিবর্তনের একটা পূর্বাভাস লক্ষ্য করা যাচ্ছে। দিনাজপুর-ঢাকা মহাসড়কে যানবাহন হেডলাইট জ¦ালিয়ে চলছে। শহরের বালুবাড়ী এলাকার আবুল কাশেম বলেন, দিনে রাতে হালকা গরম হলেও ভোরে কুয়াশায় কিছুটা শীতের আমেজ পাওয়া যাচ্ছে। শীত আসছে এটা বোঝা যাচ্ছে। ভোরে ফজরের নামাজ পড়তে উঠে দেখি প্রচন্ড কুয়াশা পড়েছে। মনে হচ্ছে শীত এসে গেছে। এদিকে ঘন কুয়াশার আবির্ভাবকে স্বাভাবিক মনে করছেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাও। দিনাজপুর আঞ্চলিক আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন বলেন, কয়েকদিনের সামান্য বৃষ্টির কারণে গতকাল শুক্রবার ভোর থেকে ঘন কুয়াশা পড়েছিল। এ সময় এমন কুয়াশা স্বাভাবিক বিষয়। তবে দিনাজপুরের তাপমাত্রা ২৩ থেকে ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠানামা করছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com