মাসুম, প্রতাপনগর, আশাশুনি, প্রতিনিধিঃ দূর্যোগ কবলিত প্রতাপনগর বন্যতলায় ওয়াপদায় ভেড়িবাধ পরিদর্শন করছেন জার্মান রাষ্ট্রদূত ও জার্মান ক্লাইমেট সেক্রেটারি আখিম ট্রাস্টার গতকাল দুপুরে তিনি পরিদর্শনে আসেন। এসময় বলন, বাংলাদেশের সুন্দরবন উপকূলের দূর্যোগ কবলিত মানুষ দুই বছর নদী খালের উপর নৌকায় কাটানোর পর বাঁধ হলেও ঘরে ফিরতে পারেনি অনেক পরিবার। বিভিন্ন স্থানে টোং বেঁধে ও বাঁধের উপর চরম দুর্ভোগের মধ্যে জীবন যাপন করছে। পর্যাপ্ত পরিমাণ সাইক্লোন শেল্টারও নেই এলাকায়। জার্মান রাষ্ট্রদূত ও জার্মান ক্লাইমেট সেক্রেটারির সামনে কথাগুলো অকপটে বলেন ভুক্তভোগী এলাকাবাসী। আশাশুনি থানা ও শ্যামনগর পুলিশ প্রশাসনের নিরাপত্তা ও প্রতাপনগর ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আবু দাউদ ঢালীর উপস্থিতে বৃহস্পতিবার বেলা দুইটায় শ্যামনগর উপজেলার পদ্মপুকুর ইউনিয়নের বন্যতলা ও আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের বিগত আম্ফান ইয়াস ঝড়ে বিধ্বস্ত দুর্ভোগ কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন জার্মান রাস্ট্রদূত আখিম ট্রস্টার, জার্মান ক্লাইমেট সেক্রেটারি জেনিফার মরগেন। এ অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মাষ্টার আলমগীর হোসেন, বিশিষ্ট সমাজ সেবক রিয়াদ মাহমুদ, প্রতাপনগর ইউনিয়ন ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মাহমুদুল হাসান মিলন, প্রমুখ। রাষ্ট্রদূত সেক্রেটারি বলেন, অনেক পরিবার ঘরে ফিরলেও আরও বড় ধরনের দূর্যোগের আশংকায় রয়েছে তাদের মনে। এবার কোন দূর্যোগ আঘাত করলে সুন্দরবন ঘেষা এই এলাকার মানুষ কোথায় আশ্রয় নেবে, কিভাবে তারা বেঁচে থাকবে, তাদের জানমাল কিভাবে রক্ষা হবে তার উলেখযোগ্য নিশ্চয়তা মিলছে না। এজন্য তাদের নিরাপত্তার স্বার্থে সরকারের জরুরীভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। সেইসাথে জার্মান সরকারও তাদের ভাগ্যের উন্নয়নে সাহায্য করতে প্রস্তুত রয়েছে। জার্মান সরকারের ক্লাইমেট সেক্রেটারী জেনিফার মর্গেন ও বাংলাদেশে নিযুক্ত জার্মান রাষ্ট্রদূত আখিম ট্রস্টার সহ ৫ সদস্যের একটি টিম সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলা পদ্মপুকুর ইউনিয়নের বন্যতলা ও আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের মধ্যবর্তী দূর্যোগ কবলিত বন্যতলা এলাকা পরিদর্শনকালে সাংবাদিক ও উপস্থিত সুধীজনদের উদ্দেশ্যে এসব কথা বলেন। প্রতাপনগর ও বন্যতলা অঞ্চলের প্রায় ৪০ হাজারের বেশী মানুষের বসবাস উলেখ করে জেনিফার মর্গেন বলেন, তাদের জন্য রয়েছে পাঁচটি আশ্রয়কেন্দ্র। অথচ প্রয়োজন কমপক্ষে ৩০টি। এখানে বেড়িবাঁধ ভঙ্গুর অবস্থায়। এই বাঁধ ভাঙ্গে আবার মেরামত হয়। আবার দূর্যোগে জলোচ্ছ্বাসে তা ধ্বংস করে দেয়। এভাবেই এখানকার মানুষ বারবার বিপদের মুখে পড়ে স্থান ত্যাগে করতে বাধ্য হয়েছে অনেকে। কমপক্ষে ২০/২৫ শতাংশ মানুষ এরই মধ্যে বাস্তুহারা হয়ে এলাকা ছেড়ে চলে গেছে। তারা স্থান নিয়েছে সাতক্ষীরা জেলা শহর অথবা খুলনা এলাকার বস্তিতে। সিডর, আইলা, বুলবুল, আম্পান ও ইয়াশ এর মতো ভয়াবহ দূর্যোগের মুখে বারবার ক্ষতবিক্ষত হওয়া মানুষ হারিয়েছে তাদের কর্মসংস্থান। বসতবাড়ি না থাকায় পরিবার পরিজন নিয়ে কেউ গ্রাম ছেড়েছে আবার কেউ কেউ নৌকায় সংসার পেতেছে। এ অঞ্চলের প্রাকৃতিক পরিবেশ ও প্রতিবেশ ধ্বংস হয়ে গেছে। লোনা পানির জোয়ার ভাটায় তারা খাবার পানির সুযোগ থেকেও বঞ্চিত হয়েছে। গবাদিপশু পালনের সুযোগ নেই। বারবারই দূর্যোগ ও জলোচ্ছ্বাসের সাথে যুদ্ধ করতে হচ্ছে তাদের।