সোমবার, ২২ জুলাই ২০২৪, ০৫:৪১ অপরাহ্ন

একটি ব্যাচের নাপা সিরাপ বিক্রি করতে মানা

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় সোমবার, ১৪ মার্চ, ২০২২

এফএনএস : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে প্যারাসিটামল সিরাপ ‘নাপা’ সেবনে দুই শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ ওঠার পর ওষুধ বিক্রেতাদের ওই নির্দিষ্ট ব্যাচের সিরাপ বিক্রি না করতে অনুরোধ করেছে বাংলাদেশ কেমিস্টস অ্যান্ড ড্রাগিস্টস সমিতি। দেশের ওষুধ বিক্রেতাদের এ সংগঠনের সহসভাপতি দ্বীন আলী রোববার বলেন, তারা ‘মৌখিকভাবে’ সমিতির সকল সদস্যকে ওই নির্দিষ্ট ব্যাচের (ব্যাচ নং ৩২১১৩১২১) নাপা সিরাপ বিক্রি বন্ধ রাখতে বলেছেন। “সেন্ট্রালি আমাদেরকে ডিসি অফিস থেকে কোনো চিঠি দেয় নাই বিধায় আমরাও সদস্যদের জন্য কেন্দ্র থেকে কোনো চিঠি দিতে পারছি না, সার্কুলারটা ইস্যু করছি না। কিন্তু আমরা ভারবালি বলছি সকলকে। “আমরা অলরেডি ব্রাঞ্চগুলোকে বলেছি যাতে এই ওষুধগুলো বিক্রি না হয়। যে জেলাগুলোতে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সুপাররা আমাদের জানিয়েছেন, সেখানেই আমাদের সদস্যরা পদক্ষেপ নিয়েছেন।” যেখানে শিশু মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে, সেই ব্রাহ্মণবাড়িয়াতেও নির্দিষ্ট ব্যাচের নাপা সিরাপ বিক্রি বন্ধ রেখেছেন ওষুধ বিক্রেতারা। কেমিস্টস অ্যান্ড ড্রাগিস্টস সমিতির ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. আবু কাউছার বলেন, যে দুটি শিশুর মৃত্যু হয়েছে, তাদের মা ও প্রতিবেশীরা বলেছেন, নাপা সিরাপ সেবনের পর তাদের মৃত্যু হয়েছে। “সেই পরিপ্রেক্ষিতে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরবর্তী নির্দেশনা না পাওয়া পর্যন্ত ওষুধ বিক্রেতাদের ওই নির্দিষ্ট ব্যাচের নাপা সিরাপ বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। কারণ নাপার বদলে অন্য ওষুধ কিনেও মানুষ চলতে পারবে। কিন্তু কোনো শিশুর যেন ক্ষতি না হয়।” তবে ফেইসবুকে তার নাম ও স্বাক্ষরে যেসব চিঠি ছড়িয়েছে, সেগুলো আসল নয় বলে দাবি করেন আবু কাউছার। ওই চিঠিগুলোতে নাপা সিরাপ ও ড্রপ বিক্রি বন্ধ রাখার কথা বলা হয়েছে। কাওছার বলেন, “এই চিঠিগুলোর স্বাক্ষর আমার নয়, ওটা ফেইক। আমাদের চিঠিতে আমরা শুধু একটা নির্দিষ্ট ব্যাচের নাপা সিরাপ বিক্রি বন্ধ রাখতে বলছি। নাপা ড্রপ বিক্রি বন্ধ রাখার কোনো নির্দেশনা আমরা দিইনি।” ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জের দুর্গাপুর গ্রামের এক পরিবারে ৭ ও ৫ বছর বয়সী দুই ছেলের জ্বর হওয়ায় বৃহস্পতিবার রাতে স্থানীয় দোকান থেকে নাপা সিরাপ কিনে তাদের খাওয়ায় পরিবার। এরপর তাদের বমি শুরু হয়। হাসপাতালে তাদের দেখিয়ে বাড়ি আনার পথে দুজনই মারা যায়। প্যারাসিটামল বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া ওষুধগুলোর একটি। আর প্যারাসিটামল জেনেরিকের ওষুধগুলোর মধ্যে বেক্সিমকো ফার্মাসিটিক্যালসের তৈরি করা নাপা সবচেয়ে বেশি পরিচিত। যে কোনো ফার্মেসিতে ডাক্তারের ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই এ ওষুধ পাওয়া যায়। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনার প্রেক্ষিতে নাপার ১২০ মিলিগ্রাম ও ৫ মিলিগ্রাম সিরাপ (ব্যাচ নং ৩২১১৩১২১, উৎপাদন তারিখ ১২/২০২১, মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ ১১/২০২৩) পরীক্ষা ও বিশে−ষণ করে ন্যাশনাল কন্ট্রোল ল্যাবরেটরিতে প্রতিবেদন পাঠাতে বলেছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। এ ঘটনায় গঠিত ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের তদন্ত কমিটির সদস্যরা রোববার দুর্গাপুর গ্রামে গিয়ে দুই শিশুর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে তদন্ত কমিটির প্রধান ডা. আকিব হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, “ওষুধটিতে কী এমন উপাদান ছিল, যেটি খাওয়ার ১০ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যে রিঅ্যাকশন করল। এটি আসলে রহস্যজনক বিষয়। এই রহস্য উদঘাটনে সময় লাগবে।” ওই ব্যাচের কী পরিমাণ নাপা সিরাপ বাজারে আছে, সে বিষয়টি স্পষ্ট নয়। এ বিষয়ে বেক্সিমকো ফারমাসিউটক্যালসের বক্তব্য জানতে কোম্পানির চিফ অপারেটিং অফিসার রাব্বুর রেজাকে কয়েকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। এসএমএস পাঠালেও সাড়া দেননি। তবে ওষুধ খাত সংশি−ষ্টরা বলছেন, একই রাসায়নিক দিয়ে একসঙ্গে তৈরি হওয়া পণ্যকে একটি ব্যাচ নম্বরে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সাধারণত বাজারে ‘চালু’ ট্যাবলেটের ক্ষেত্রে একটি ব্যাচে ১০ লাখ পর্যন্ত ওষুধ তৈরি হতে পারে। তবে সিরাপের ক্ষেত্রে মিক্সিংয়ের জন্য একটি বড় কন্টেইনারের প্রয়োজন হয়। এ কারণে বেশিরভাগ কোম্পানিই একটি ব্যাচে ৫০-৬০ হাজারের বেশি সিরাপ তৈরি করতে পারে না।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com