শনিবার, ২০ জুলাই ২০২৪, ০৪:৩৫ অপরাহ্ন

কঠোরভাবে নজরদারি করবে ইসি জেলা পরিষদের ভোটও

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় রবিবার, ১৬ অক্টোবর, ২০২২

# সব কেন্দ্রেই বসানো হচ্ছে গোপন ক্যামেরা #অনিয়ম পেলে বন্ধ করবে জেলার ভোট
জি এম শাহনেওয়াজ ঢাকা থেকে \ কঠোরভাবে নজরদারি করবে জেলা পরিষদের ভোটও নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কোনো অনিয়ম বরদাশত করবে না সাংবিধানিক এই সংস্থাটি। জোরপূর্বক কেন্দ্র দখল ও ভোটারকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করলে স্থগিত করা হতে পারে ওই কেন্দ্রের ভোট। কেন্দ্রওয়ারী নজরদারি করতে তাই বসানোর নিদের্শনা দেয়া হয়েছে গোপন ক্যামেরা (সিসিটিভি)। বুধবার (১২ অক্টোবর) নির্বাচন কমিশন এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এসব ক্যামেরায় আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে স্থাপিত কন্ট্রোলরুমে সার্বক্ষণিক অবস্থান করে নির্বাচনের সার্বিক চিত্র পর্যবেক্ষণ করবে কমিশন। এ ছাড়া ভোটারের গোপনীয়তা রক্ষার বিষয়ে সতর্ক থাকতে সব রিটার্নিং কর্মকর্তা নিদের্শনা দিয়েছে কমিশন। কমিশনের ভাষ্যমতে, ভোটারের প্রদত্ত গোপনীয়তা ভঙ্গ করা বা ভঙ্গ করার চেষ্টা অসদাচরণও দন্ডনীয় অপরাধ। গাইবান্ধা-৩ সংসদীয় আসনের উপ-নির্বাচনে গোপনকক্ষের গোপনীয় না থাকা, গোপন কক্ষ দখল করে অনুপ্রবেশকারীদের ভোটদান ও অনিয়ম স্বচক্ষে দেখে ওই আসনের পুরো নির্বাচন বাতিল করে কমিশন। এ নিয়ে সমালোচনা হলেও কারো অপবাদের দায় কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধিন কমিশন কাঁধে নিতে নারাজ। এ জন্য নির্বাচনে কঠোর অবস্থানে ইসি। এদিকে, সোমবার (১৭ অক্টোবর) রাত পোহালেই ভোট। ৬১ জেলায় এ ভোট অনুষ্ঠিত হবে। ইতিমধ্যে বিনা-প্রতিদ্ব›দ্বীতায় চেয়ারম্যান ২৬জন ও পরিষদের সাধারণ সদস্য ৬৬জন ও সংরক্ষিত সাধারণ সদস্য ১৯ নির্বাচিত হয়েছেন। বাকি প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীর মধ্যে ভোট হবে। এবার দ্বিতীয় জেলা পরিষদ নির্বাচনে সারাদেশের ৬১ জেলায় চেয়ারম্যান নির্বাচন করতে ভোট দেবেন ৬৩১৫৯ জন ভোটার। এর মধ্যে নারীর চেয়ে পুরুষ ভোটার বেশি। জেলা পরিষদের পুরুষ-নারী ভোটার যথাক্রমে ৪৮ হাজার ২৩৬ জন ও ১৪ হাজার ৯২৩ জন। নির্বাচনে মূল প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীর সংখ্যা চেয়ারম্যান পদে ৯৬ জন, সাধারণ সদস্য পদে ১৫১৩ জন ও সংরক্ষিত সদস্য পদে ৬২২ জন। এ ভোটে নির্বাচিত জন-প্রতিনিধিরাই ভোট দিয়ে নেতা নির্বাচিত করেন। ফলে স্থানীয় সরকারের সিটি করপোরেশন, উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, সাধারণ সদস্য ও সিটি মেয়র-কাউন্সিলরদের এ নির্বাচনে বেশ কদর থাকে। ভোট কেনাবেচাও হয়ে থাকে বলেও অভিযোগ রয়েছে। ভোটার সংখ্যা কম হওয়ার কারণে সাধারণ ছুটি ঘোষনা করা হয়নি এ নির্বাচনে। ভোটের সময়ও কম দেয়া হয়েছে। সকাল ৯টায় শুরু হয়ে এ ভোট শেষ হবে দুপুর ২টায়। নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা জেলা প্রশাসক (ডিসি)। ইসির তথ্যনুযায়ী, নির্দলীয় এ নির্বাচনে সব ভোট হবে যন্ত্রের সহায়তায় অর্থাৎ আলোচিত ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম)। তবে, নির্বাচনে দেশের আরেকটি বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি নির্বাচনে প্রার্থী না দেয়ায় মূল প্রতিদ্ব›দ্বীতা হবে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের সঙ্গে দলীয় বিদ্রেহী প্রার্থীদের মধ্যে। কয়েকটি আসনে জাতীয় পার্টিসহ স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেও তারাও নৌকার দলীয় ও বিদ্রোহী প্রার্থীদের কাছে কোনঠাসা। এ কারণে এই নির্বাচনে জোবর-দখল ও কেন্দ্রে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টায় থাকবে ক্ষমতাসীন সমর্থিত প্রার্থীরা বলে মনে করছে কমিশন। তাই জেলা পরিষদ নির্বাচনে তড়িঘড়ি সব কেন্দ্রেই সিসিটিভি বসানোর সিদ্ধান্ত দিয়েছে ইসি। কারণ ১২ অক্টোবর গাইবান্ধা উপনির্বাচনে সিসি ক্যামেরা থাকায় কমিশন ভোট বাতিল করতে সক্ষম হয়েছিল। এ নির্বাচনের ভোটে অনিয়মের শিক্ষা থেকে জেলা পরিষদে সিসিটিভি স্থাপনের জন্য গত বুধবার নিদের্শনা দিয়েছে ইসি। চিঠিতে বলা হয়েছে, সিসিটিভি স্থাপনের জন্য কার্যাদেশ প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানকে সার্বিক সহায়তা, নিদের্শনা প্রদান করার জন্য সকল সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে নির্দেশক্রমে অনুরোধ জানানো হয়। পাশাপাশি, গোপন কক্ষের গোপনীয়তা রক্ষায় পৃথক আরেকটি নিদের্শনা দিয়েছে ইসি। এ চিঠিতে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের ভোটারের গোপনীয়তা রক্ষায় সতর্কতা অবলম্বনের কথা বলা হয়েছে। একই সঙ্গে কোনো ভোটার যাতে মোবাইল নিয়ে কেন্দ্রে প্রবেশ না করতে পারে সেজন্য নিদের্শনা দেয়া হয়েছে। আর ভোটের গোপন কক্ষে অবৈধভাবে অবস্থান করে কোনো ভোটারের গোপনীয়তা স্বার্থে ভোটাধিকার প্রয়োগের অধিকার বাধাগ্রস্ত করলে আইনানুযায়ী তাৎক্ষণিক তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত প্রদান করেছেন। গত ১৩ অক্টোবর নির্বাচন পরিচালনা-২ অধিশাখার উপসচিব মো. আতিয়ার রহমান স্বাক্ষরিত চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, কোন নির্বাচনী কর্মকর্তা দায়িত্ব গ্রহণে বা পালনে অপরাগতা বা অস্বীকৃতি প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে নির্বাচনী কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) ১৯৯১ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেযা হবে। আগের আইন অনুযায়ী, সংশ্লিষ্ট জেলার অধীনে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের সদস্যরাই জেলা পরিষদ সদস্যদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করতেন। অর্থাৎ সিটি করপোরেশন, উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মেয়র এবং কাউন্সিলর বা সদস্যরা ভোট দিয়ে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ১৫ জন সদস্য ও পাঁচজন সংরক্ষিত সদস্য নির্বাচিত করতেন। কিন্তু সংশোধিত আইনে জেলা পরিষদের সদস্য সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট জেলার উপজেলার সংখ্যার সমান। আর নারী সদস্য সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট জেলার উপজেলা চেয়ারম্যানদের মোট সংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ, তবে দুইজনের কম নয়। অর্থাৎ একেক জেলা পরিষদের সদস্যের সংখ্যা হবে একেক রকম, সংশোধনের আগে যেটা ২১ জন নির্দিষ্ট করে দেওয়া ছিল। সারাদেশে জেলা পরিষদ নির্বাচনে ৬১ জেলার মধ্যে স্থানীয় সরকারের সিটি করপোরেশন, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত সদস্যরা ভোট দিয়ে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্য নির্বাচন করেন। অর্থাৎ এই নির্বাচনে নির্বাচিত জন-প্রতিনিধিরাই ভোটার। তবে, তিন পার্বত্য জেলায় জেলা পরিষদের ভোট হয় না।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com