এফএনএস : বেসরকারি খাতের অনেক উদ্যোক্তাই কম সুদের কারণে বিদেশি ঋণে ঝুঁকছে। ফলে গত ডিসেম্বর শেষে বেসরকারি খাতে ২ হাজার ৩০৮ কোটি ডলার বিদেশি ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় তার পরিমাণ প্রায় এক লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা। যদিও বেসরকারি খাতে ২০২০ সাল শেষে বিদেশি ঋণ ছিল এক হাজার ৪৭৬ কোটি ডলার বা এক লাখ ২৭ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু এক বছরের ব্যবধানে বিদেশি ঋণ ৫৬ দশমিক ৩৬ শতাংশ বেড়েছে। আর পরিমাণে বেড়েছে ৮৩২ কোটি ডলার। এর আগে এক বছরে এতো বেশি হারে বিদেশী ঋণ বাড়েনি। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, গত এক বছরে বেসরকারি খাতে বিদেশি ঋণ টাকার হিসাবে ৭২ হাজার কোটি টাকা বেড়েছে। অথচ স্থানীয় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ বেড়েছে এক লাখ ২১ হাজার ৯৪৪ কোটি টাকা। আর প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০ দশমিক ৬৮ শতাংশ। গত ডিসেম্বর শেষে বেসরকারি খাতে (বিদেশি উৎস বাদে) ঋণস্থিতি দাঁড়িয়েছে ১২ লাখ ৬৩ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা। এক বছর আগে যা ছিল ১১ লাখ ৪১ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা। সূত্র জানায়, মূলত কম সুদ বেসরকারি খাতে বিদেশি ঋণ বৃদ্ধির মূল কারণ। বর্তমানে উদ্যোক্তারা সব ধরনের খরচসহ ২ থেকে ৩ শতাংশ সুদে ঋণ পাচ্ছে। আর দেশের বাজারে সুদহার কমার পরও গত ফেব্র“য়ারিতে গড় সুদহার ছিল ৭ দশমিক ১০ শতাংশ। দু’বছর আগে যা ছিল ৯ দশমিক ৬২ শতাংশ। দেশের বাজারে গড় সুদহার ৭ শতাংশের কাছাকাছি মানে সবাই এমন সুদে ঋণ পাচ্ছে তা নয়। অনেক ক্ষেত্রে ৯ শতাংশও সুদ দিতে হচ্ছে। যে কারণে উদ্যোক্তারা বিদেশি ঋণে আগ্রহ বাড়িয়েছে। সূত্র আরো জানায়, বেসরকারি খাতে বিদেশি ঋণস্থিতির ৬৭ শতাংশই স্বল্পমেয়াদি। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত বেসরকারি খাতে বিদেশি ঋণের মধ্যে স্বল্পমেয়াদি ঋণ ছিল এক হাজার ৫৪৬ কোটি ডলার। বাকি ৭৬১ কোটি ডলার ছিল দীর্ঘমেয়াদি। সাধারণত তৈরি পোশাকসহ রপ্তানি খাতের উদ্যোক্তারা বিভিন্ন কাঁচামাল ও মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য এক বছরের কম সময়ের জন্য স্বল্পমেয়াদি ঋণ নেয়। সেজন্য কোনো কর্তৃপক্ষের অনুমতি লাগে না। আর বিডার অনুমোদন নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ আনা হয়। তৈরি পোশাক, খাদ্য, ওষুধ, সিমেন্ট, তামাকসহ বিভিন্ন খাতে বিদেশী ঋণের অর্থ এসেছে। এদিকে দেশের ব্যাংকিং খাত সংশ্লিষ্টদের মতে, দেশীয় ব্যাংকের তুলনায় কম সুদের কারণে অনেকেই এখন বিদেশি ঋণে আগ্রহ দেখাচ্ছে। ব্যাংকগুলোর অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটের ঋণও বাড়ছে। উদ্যোক্তাদের জন্য এটা একটা ভালো বিকল্প। তবে অনেক বেশি বিদেশি ঋণ নিতে গেলে পরিশোধের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি হতে পারে। অন্যদিকে বেসরকারি খাতে বিদেশি ঋণ অনুমোদনের সঙ্গে সম্পৃক্ত বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) সংশ্লিষ্টদের মতে, বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ নীতিমালায় নানা শিথিলতার কারণে এখন বিদেশ থেকে ঋণ নেয়া সহজ হয়েছে। আবার দেশের উদ্যোক্তাদের বিদেশ থেকে ঋণ নেয়ার সক্ষমতা ও দরকষাকষির সুযোগ বেড়েছে। যে কারণে বিদেশ থেকে ঋণ বাড়ছে। তবে ২০২১ সালে এতো ঋণ বৃদ্ধির পেছনে আরেকটি কারণ রয়েছে। ২০২০ সালে অনুমোদন হলেও দেখা গেছে করোনার কারণে সেই ঋণ অনেকে ওই বছরে নেননি; যার একটি অংশ হয়তো ২০২১ সালে এসেছে।