শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫, ০৯:৪৬ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
দেবহাটার পারুলিয়া সহ অন্যান্য হাটবাজারে ঈদ কেনা কাটায় ব্যাপক উপস্থিতি সাতক্ষীরা কালিগঞ্জ সড়কের মেডিকেল কলেজ সংলগ্ন এলাকা জনদুর্ভোগ আর জনদুর্যোগের স্থলে আবারও সেই ইট সোলিং \ কিন্তু কেন? নওয়াবেঁকীতে বাৎসরিক তাফসীরুল কোরআন মাহফিলের প্রস্তুতি সভা নূরনগরের জাকির হোসেন সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত নূরনগর জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত সাতক্ষীরায় যমজ সন্তান পরিবারের ৩য় প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পলাশপোল স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র ছাত্রী ফোরামের ইফতার মাহফিল উদারতা যুব ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ইফতার মাহফিল সুন্দরবনের গহীন থেকে এক বৃদ্ধা নারী উদ্ধার বিদেশ পাঠানোর নামে নয় যুবকের অর্ধকোটি টাকা প্রতারক চক্রের পকেটে

কলারোয়ায় পুলিশের সাজানো নাটকে পায়ে গুলিবিদ্ধ পঙ্গুত্ব যুবদলনেতা আব্দুল মজিদের লোমহর্ষক সেই ঘটনা

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

কলারোয়া (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি \ আওয়ামী শাসনামলে যখন দেশব্যাপী ক্রসফায়ারের মহোৎসব চলছে তখন জোর করে আমাকে উঠিয়ে নিয়ে ঠান্ডা মাথায় ইচ্ছাকৃতভাবে আমার পায়ে গুলি করে পুলিশ। কেটে ফেলতে হয় একটি পা। তারপরেও বন্দুকযুদ্ধের নাটক সাজিয়ে আমার নামে অস্ত্র মামলা দেয়া হয়, খাটতে হয় দীর্ঘদিন জেলহাজত। বন্দুকের নলের গুলিতে আমি বেঁচে থাকলেও বরণ করতে হচ্ছে স্থায়ীভাবে পঙ্গুত্ব। মঙ্গলবার সকালে সরেজমিনে তার বাড়িতে গেলে কথাগুলো বলছিলেন, সাতক্ষীরা কলারোয়া পৌর সদরের ১নং তুলশীডাঙ্গা ওয়ার্ডের পৌর যুবদলের আহবায়ক ও একই ওয়ার্ডের আব্দুস সাত্তারের ছেলে পঙ্গুত্ববরণকারী আব্দুল মজিদ। এর আগে তিনি দায়িত্বে ছিলেন কলারোয়া সরকারী কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি ও পৌর ছাত্রদলের সভাপতি। পা হারানোর লোমহর্ষক সেই কাহিনী তুলে ধরে তিনি বলেন, দিনটি ছিলো ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ৬ তারিখ। আওয়ামী দু:শাসনের জাতাকলে যখন দেশের বিভিন্ন স্থানে ক্রসফায়ারের নাটক চলছে তখন কথিত শেখ হাসিনা গাড়িবহর হামলা মামলার আসামি হয়ে পলাতক জীবন কাটাচ্ছিলেন আব্দুল মজিদ। কলারোয়ার পার্শ্ববর্তী যশোরের শার্শা উপজেলার কায়বা এলাকায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে আত্মগোপনে ছিলেন তিনি। শার্শা থানা পুলিশ সেদিন সন্ধ্যায় সেখান থেকে তাকে আটক করে শার্শা থানা হাজতে রাখে। রাতভর করা হয় নির্যাতন। কাছে থাকা একটি মোবাইল ও কয়েক হাজার টাকা নিয়ে নেন তৎকালীন শার্শা থানার এসআই আইনুদ্দীন ও এসআই সৈমেন। ছেড়ে দেয়ার নাম করে ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তা টাকা দাবি করলে তিনি মোবাইল ফোনে আত্মীয়দের সাথে যোগাযোগ করে ৫ লাখ টাকা তুলে দেন পুলিশকে। এরপর তাকে জানানো হলো সকালে ছেড়ে দেয়া হবে। পরদিন ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫। সকাল গড়িয়ে দুপুর হলো, তাকে ছাড়া হলো না। বেলা ৩টার দিকে শার্শা থানা পুলিশ একটি মহেন্দ্রযোগে যশোরের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলো তাকে। ঝিকরগাছার লাউজানি রেললাইন ক্রসিং এলাকায় পৌছুলে একটি মাইক্রোবাসে সাদা পোশাকধারী কয়েকজন ব্যক্তি পুলিশের গাড়ি থেকে তাকে তাদের গাড়িতে তুলে নেন। নিয়ে যাওয়া হয় যশোর এএসপি সার্কেলের অফিসে। সেখানে দীর্ঘক্ষণ রেখে থেমে থেমে নির্যাতন চালাতে থাকে। এরপর রাত আনুমানিক ১২টার দিকে তাকে একটি মাইক্রো গাড়িতে করে সাতক্ষীরার দিকে নিয়ে যেতে থাকে। বাগঁআচড়া পার হয়ে বেলতলা নামক স্থানে পৌছুলে আগে থেকে অবস্থান করা কলারোয়া থানা পুলিশের কাছে তাকে হস্তান্তর করা হয়। সেখানে একটি মাইক্রোসহ পুলিশের গাড়ি ছিলো ৩টি। বলা হয় কোর্টে চালান দেয়া হবে। কিন্তু চোখ বেঁধে, হাতে পিছন দিক দিয়ে হাতকড়া পড়া অবস্থায় গাড়িতে তোলা হলো। সাথে ২০/২৫ জন পুলিশ। অল্প কিছুদূর যেতেই গাড়ি থামলো, স্থানটি কলারোয়ার কাজিরহাট কলেজ সংলগ্ন। রাস্তা থেকে পায়ে হাটিয়ে তাকে সামান্য দূরে ফসলি মাঠের মধ্যে নিয়ে যাওয়া হলো। চোখ বাঁধা, মুখের মধ্যে কাপড় ঢুকানো, হাতে হাত কড়া পড়ানো। জোর করে মাথা ও মুখ মাটির সাথে চেপে ধরা হলো, বাঁধা হলো দুই পা। মুখ চেপে ধরা হলো, বুকের উপর একজন উঠে দাঁড়ালো, কোমড় বরাবর একজন শক্ত করে ধরে রাখলো, দুই পায়ে দুইজন শক্ত করে ধরে মাটির সাথে মিশিয়ে রাখলো। বাম পায়ের হাটুর কাছে কীটনাশক জাতীয় পানীয় স্প্রে করলো। এরপর বাম পায়ের হাটু বরাবর ২/৩ রাউন্ড গুলি করলো তৎকালীন কলারোয়া থানার এএসআই ইকবাল ও এসআই মামুন। লোমহর্ষক ও বর্বরোচিত ওই ঘটনার সময় তাকে চেপে ধরে রাখা ও সেই কর্মযজ্ঞতায় ছিলেন তৎকালীন কলারোয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) শফিকুর রহমান, এসআই হিমেল, কনস্টেবল হাবিবুল্লাহসহ অন্তন্ত ২০/২৫ জন পুলিশ। সেসময় কলারোয়া থানার ওসির দায়িত্বে ছিলেন শেখ আবু সালেহ মাসুদ করিম, সাতক্ষীরার এসপি ছিলেন চৌধুরী মঞ্জুরুল কবির। তিনি আরো বলেন,তাকে ইচ্ছাকৃত ঠান্ডা মাথায় গুলি করার পর রক্ত গড়িয়ে মাটি ভিজে গেলো, তবু তাকে ওইভাবেই বলপূর্বক পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যরা তাকে মাটিতে লুটিয়েই রাখলো। এরপর আরো কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি করা হলো। যন্ত্রণা আর কষ্টে জীবন যায় যায়, তবু পরিত্রাণের বিন্দুমাত্র উপায় নেই। রাতেই গুলিবিদ্ধ রক্তাক্ত ও গুরুতর আহতাবস্থায় তাকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে নিয়ে মেঝেতে ফেলে রাখা হয়। এভাবে ৭ ফেব্রুয়ারি দিনগত রাত থেকে ৩দিন বিনা চিকিৎসায় ফেলে রাখা হয় হাসপাতালে। অবস্থা বেগতিক হওয়ায় প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে সেখান থেকে তাকে রাজধানী ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগার হয়ে হৃদরোগ ইন্সটিটিউট হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে সামান্য কিছু পরীক্ষা—নিরীক্ষা করে তাকে পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে হাটুর উপর থেকে বাম পা সম্পূর্ণ কেটে ফেলা হলো এবং পঙ্গুত্ব উপহার দিলো তৎকালীন সরকার ও পুলিশ প্রশাসন। এতো কিছুর পরেও পরিত্রাণ হয়নি তার। উল্টো বন্দুকযুদ্ধ, অস্ত্র, নাশকতাসহ বিভিন্ন মামলা দেয়া হয় তার বিরুদ্ধে। পঙ্গু হাসপাতালে কিছুদিন চিকিৎসাধীন রাখার পর আবারো তার ঠিকানা হয় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে সাতক্ষীরা কারাগারে। ফুলের মতো একটি জীবন, একটি পরিবার তছনছ হয়ে যায় কয়েক দিনের মধ্যে। পুলিশের ভয়াল বিভৎস সাজানো বন্দুকযুদ্ধে ইচ্ছাকৃত গুলি করা ও সাজানো কথিত মামলায় জলজ্যান্ত এই যুবকের জীবনের কালো অধ্যায় নেমে আসলো। দীর্ঘদিন জেল খাটার পর ২০১৬ সালে ১১ মার্চ জামিনে বেরিয়ে আসলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন কর্তৃক উপহার দেয়া কৃত্রিম পা সংযোজন করে কোন রকম খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাটতে পারতেন তৎকালীন এই যুবদল নেতা। এরপরেও আওয়ামী দু:শাসনের শিকার আব্দুল মজিদের জীবন থেকে কালো মেঘ যেনো সরলো না। কথিত গাড়িবহর হামলা মামলায় আবারো তাকে যেতে হলো কারাগারে। সেই মামলায় ৪৩ মাস একটানা জেল খাটার বছর পর বিগত ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র—জনতার অভ্যুত্থানে দেশ থেকে শেখ হাসিনা পালালে দেশের রাজনৈতিক ও সার্বিক পটপরিবর্তনে অবশেষে ২০২৪ সালের ৮ সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরা জেলখানা থেকে জামিনে মুক্তি পেয়ে বের হন আব্দুল মজিদ। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে এখন নিজের দলীয় রাজনৈতিক কর্মসূচিতে ফের ব্যস্ততা বেড়েছে তার। নেতা—কর্মীদের পাশে থাকতে সারাক্ষণ ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে তাকে। প্রত্যাশা আগামি দিনে সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে নিজেকে সম্পৃক্ত রাখতে। এমনটাই জানালেন পুলিশের গুলিতে পা হারা জীবন সংগ্রামের এক জলন্ত জাতীয়তাবাদি সৈনিক আব্দুল মজিদ। আওয়ামী লীগের ১৭ বছরের শাসনামলে আব্দুল মজিদের মত এরকম লোমহর্ষক ঘটনা লুকিয়ে আছে বাংলার লাখো মানুষের অন্তরে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com