কলারোয়া (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি ॥ কলারোয়া উপজেলায় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরকার টিউশন ফি দেওয়ার পরেও উপবৃত্তি প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মাসিক বেতন আদায় করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সুত্র জানা যায়, শিক্ষার হার বৃদ্ধির জন্য সরকার মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত বিনা মূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শতভাগ এবং মাধ্যমিক থেকে ডিগ্রী পর্যন্ত গরীব ও মেধাবী শিক্ষার্থীর জন্য উপবৃত্তি কার্যক্রম চালু করেছে। সরকার বেসরকারী শিক্ষক ও কর্মচারীদের শতভাগ বেতন প্রদান করছে। আবার সরকার উপবৃত্তি প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর মাধ্যমিক স্কুল ও কলেজের মাসিক বেতন বাবদ সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে নিয়মিত টিউশন ফি প্রদান করে আসছে। সরকারের কাছ থেকে টিউশন ফি অর্থাৎ মাসিক বেতন নেওয়ার পরেও বহু স্কুল কলেজে উপবৃত্তি প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে পূনরায় মাসিক বেতন আদায় করা হচ্ছে। সরেজমিনে উপবৃত্তি প্রাপ্ত উপজেলার সোনাবাড়িয়া হাইস্কুলের ৯ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মাদরা গ্রামের মিণ্টু হাসানের ছেলে মুন্না হাসান ও আজিবর সরদারের ছেলে সিয়াম আহমেদ হৃদয় সহ অনেকে জানায়, পরীক্ষার সময় তাদের কাছ থেকে মাসিক বেতন আদায় করা হয়েছে। এ ব্যাপারে সোনাবাড়িয়া হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক ও কলারোয়া উপজেলা দুর্ণীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি আক্তার আসাদুজামান চান্দু ভূলক্রমে কিছু উপবৃত্তি প্রাপ্তদের কাছ থেকে বেতন নেওয়ার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, তবে উপবৃত্তি প্রাপ্তদের বেতন দিতে হবে না-মর্মে প্রত্যেক ক্লাসে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এদিকে উপবৃত্তি প্রাপ্ত কলারোয়া গার্লস পাইলট হাইস্কুলের ১০ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মুরারীকাটি গ্রামের মীর নাসিরের কন্যা নাজমিন সুলতানা শ্রাবণী এবং ৯ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী একই গ্রামের আয়ুব আলীর কন্যা মাছুরা সহ আরো কয়েকজন জানায়, গেল ষাম্মাসিক পরীক্ষার সময় স্কুলের বেতন, গ্রাচুইটি, উপ-তহবিলের ফি নেওয়া হয়েছে। এছাড়া ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণীর ক্লাস পরীক্ষা উঠে গেলেও মূল্যায়নের জন্য ৪০০ টাকা পরীক্ষার ফি নেওয়া হয়েছে বলে ৭ম শ্রেণীর মুনিয়া সুলতানা জানায়। এ ব্যাপারে কলারোয়া গার্লস পাইলট হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক বদরুজ্জামান বিপ্লব বলেন, শিক্ষকদের অবসর কালে টাকা দেওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে গ্রাচুইটির টাকা নেওয়া হয় এবং ভোকেশনালে টিউশন ফিস পাননা বিধায় তাদের বেতন নেওয়া হয়। সোনার বাংলা কলেজের উপবৃত্তি প্রাপ্ত সোনাবাড়িয়া গ্রামের সুমন হোসেন ও নাজমুল জানায়, কলেজে বেতন নেওয়া হয়। সোনার বাংলা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ উপবৃত্তি প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর কাছ থেকে বেতন নেওয়ার সত্যতা স্বীকার করেন। এদিকে শেখ আমানুল্লাহ ডিগ্রী কলেজে উপবৃত্তি প্রাপ্ত সুমাইয়া, ফারুক সহ দ্বাদশ শ্রেণীর কয়েকজন শিক্ষার্থীর বেতন নেওয়ার বিষয় জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তুতিয়া খাতুন বেতন নেওয়ার সত্যতা স্বীকার করেন। এদিকে বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে পরীক্ষার মানষিক চাপের সময় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বেতন আদায় করা হয়। কোন স্কুল গ্রাচুইটি, কেউবা উপ-তহবিল নামে ফিস আদায় করছে। ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের ক্লাস পরীক্ষা উঠে গেলেও মূল্যায়নের জন্য ৪০০ টাকা এবং ৯ম শ্রেণীর পরীক্ষার ফি ৫০০ টাকা টাকা আদায় করা হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে বেতন আদায়ের রশিদে মোট টাকা লেখা থাকে। কোন খাতে কত লেখা থাকে না। তবে যাতে না ধরা পড়তে হয়, তার জন্য বেতন আদায়ের দুই প্রস্থ খাতাপত্র রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায়। আর ছেলেমেয়ের ক্ষতির আশাংকায় অভিভাবকরা এনিয়ে ঘাটাঘাটি করতে চায় না। তবে এক পর্যায়ে আর্থিক চাপে মেয়েদের বিয়ে এবং ছেলেদের কাজে পাঠাতে বাধ্য হচ্ছে বলে অনেক অভিভাবক জানায়। এব্যাপারে উপজেলা সহকারী মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ মোল্যা জানান, শিক্ষার্থীর গ্রাচুইটি কি সে বিষয় তিনি জানেন না। তবে উপবৃত্তি প্রাপ্তদের বেতন আদায় বেআইনী বলে জানান। মুঠোফোনে সাতক্ষীরা জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শাহাজাহান কবীর বলেন, শিক্ষার্থীদের গ্রাচুইটি ও উপ-তহবিল ফি সম্পর্কে তিনি জ্ঞাত নন, তবে উপবৃত্তি প্রাপ্তদের কাছ থেকে বেতন আদায়ের বিসয়টি ক্ষতিয়ে দেখা হবে। বিষয়টির সত্যতা পেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।