শুক্রবার, ২৬ জুলাই ২০২৪, ০৪:২০ পূর্বাহ্ন

কাগজের বাজারে সিন্ডিকেটের থাবা বিপাকে শিক্ষার্থী ও প্রকাশনা খাত

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় বুধবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২২

এফএনএস : কাগজের বাজারে থাবা বসিয়েছে সিন্ডিকেট। ফলে অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে কাগজের দাম। আর কাগজের উচ্চমূল্য ধরে রাখতে দেশীয় কাগজ কলগুলো ইচ্ছাকৃতভাবে কাঁচামাল কম আমদানি করে সংকট জিইয়ে রাখছে। তাতে কোটি কোটি শিক্ষার্থীরা শিক্ষার প্রধান উপকরণ বই এবং খাতা হাতের নাগালে পেতে কষ্ট হবে। ইতোমধ্যে দেশের শিক্ষা বোর্ডগুলো কাগজের দাম বাড়ার কারণে এসএসসি পরীক্ষার ফি বাড়িয়ে দিয়েছে। তাছাড়া কাগজ সঙ্কটে একুশের বইমেলা নিয়েও শঙ্কা তৈরি হয়েছে। প্রকাশনা খাত সংশ্লিষ্টদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বাজারে সব ধরনের কাগজের দাম গত ৮ থেকে ১০ মাস ধরেই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। কমার কোনো লক্ষণও নেই। কাগজ বিক্রেতারা মতে কাঁচামালের অভাবে দেশে কাগজ উৎপাদন কমে যাওয়ায় দাম বেড়েছে। ফলে ক্রেতাদের বেশি দামেই কাগজ কিনতে হচ্ছে। অথচ গত বছর এই সময়ও কাগজের দাম স্বাভাবিক ছিল। গত ডিসেম্বরে ৮০ গ্রাম অফসেট ডাবল ডিমাই (ডিডি সাইজ) কাগজের দাম ছিল ১ হাজার ৫০০ টাকা রিম, বর্তমানে তা ৩ হাজার টাকারও বেশি। ১০০ গ্রামের একই কাগজের যেখানে গতবার দাম ছিল ১ হাজার ৭৫০ টাকা রিম, এখন দাম ৪ হাজার ২০০ টাকা। ২০ বাই ৩০ সাইজের নিউজপ্রিন্ট ডাবল ক্রাউন (ডিসি সাইজ) কাগজের রিমপ্রতি দাম ছিল ৩৮০ টাকা থাকলেও এ বছর তা ১ হাজার টাকা। একই কাগজের ডিসি সাইজের দাম গত বছর ৪৪৫ টাকা রিম হলেও এখন তার দাম ১ হাজার ১৮০ টাকা। সূত্র জানায়, কাগজের দাম বাড়ায় শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ও পরীক্ষার ক্ষেত্রে সরাসরি প্রভাব পড়েছে। ওই কারণে ২০২৩ সালের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে যাওয়া শিক্ষার্থীদের ফরম পূরণে প্রতি পত্রের ফি ১০ টাকা করে বাড়ানো হয়েছে। আগে পত্রপ্রতি ১০০ টাকা ফি নেয়া হলেও ২০২৩ সালের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে ১১০ টাকা করে ফি দিতে হবে। পরীক্ষার্থীদের এসএসসিতে বিভিন্ন বিষয়ে ১২টি পত্রের পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। ওই হিসাবে কাগজের দাম বাড়ার কারণে ছাত্রছাত্রীদের ফরম পূরণে অতিরিক্ত ১২০ টাকা গুনতে হবে। তাছাড়া কাগজের অস্বাভাবিক দামের কারণে ঝুঁকির মুখে ২০২৩ সালের অমর একুশে বইমেলা। বই ছাপানোর সাদা কাগজ গত আট মাসে রিমপ্রতি দাম বেড়েছে ১ হাজার ৯০০ টাকা। চলতি বছরের ফেব্রæয়ারি মাসে বইমেলায় কাগজের (৮০ গ্রাম) দাম রিমপ্রতি ছিল ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকা। আর বর্তমান দাম ৩ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার ৬০০ টাকা। তাছাড়া এখন আগের দিনের দামের সঙ্গে পরের দিনের দাম মিলছে না। এমন পরিস্থিতিতে প্রকাশকরা সীমাহীন বিপাকে পড়েছে। তাছাড়া কাগজের দামের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে শিক্ষার অন্যতম উপকরণ খাতার দামও। সূত্র আরো জানায়, বাজারে কাগজের দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়ার পেছনে সিন্ডিকেট জড়িত। তারা মজুতদারির মাধ্যমে বাজারকে প্রভাবিত করে মুনাফা লুটছে। অবিলম্বে কাগজের দাম না কমালে সব ধরনের প্রকাশনা শিল্পে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তবে কাগজকল মালিকরা গত নভেম্বরে শিক্ষামন্ত্রীর সাথে এক বৈঠকে ডলার সংকটের কারণে পাল্প আমদানি করার জন্য এলসি খোলা যাচ্ছে না বলে জানান। তাছাড়া এলসি খুলতে পারলেও ব্যাংকগুলো তিন মাস পর আমদানি বিল পরিশোধ করতে চাওয়ায় বিক্রেতারা রাজি হয়নি। ফলে কাঁচামালের অভাবে মিলগুলো ধুঁকছে। এদিকে বিদ্যমান কাগজ বাজার প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সভাপতি আরিফ হোসেন ছোটন জানান, দেশের বাজারে এখন মুদ্রণ ও লেখার কাগজের সংকট চলছে। কাগজের আকাশচুম্বী দাম বাড়া অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। তার প্রভাব দেশের কোটি কোটি কোমলমতি শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবনে বিঘœ ঘটাবে। তাছাড়া বইমেলায়ও তার প্রভাব পড়বে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com