সোমবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:০৭ অপরাহ্ন

কালের বিবর্তনে গ্রাম বাংলা থেকে বিলুপ্তির পথে জাতীয় খেলা কাবাডি

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় রবিবার, ১২ নভেম্বর, ২০২৩

এম এম নুর আলম ॥ আধুনিকতার ছোঁয়া ও কালের বিবর্তনে মহাকালের পাতা থেকে ঘরে ঘরে ভিডিও গেমের দৌরাত্ম্যে ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম-বাংলার ঐহিত্যবাহী খেলাধুলাগুলো। শৈশবে যেসব খেলাধুলায় দিন কাটিয়েছেন আজকের বয়োবৃদ্ধরা, তারাও এখন ভুলতে বসেছেন সেসব খেলার নাম। এ দেশের জনপ্রিয় খেলাধুলার মধ্যে ছিল কানামাছি, দাড়িয়াবান্ধা, তাস, লুডু, ফুটবল, হ্যান্ডবল, কাবাডি বা হাডুডু, লাটিম ইত্যাদি। এই খেলাগুলোর মধ্যে বর্তমানে ফুটবল খেলার কিছু প্রচলন থাকলেও প্রায় সবগুলো খেলা হারিয়ে গেছে। আগে গ্রাম-বাংলায় যে সব খেলার সবচেয়ে বেশি প্রচলন ছিল তা হচ্ছে হাডুডু। প্রতিটি দেশের একটি জাতীয় খেলা থাকে। ইংরেজদের জাতীয় খেলা ক্রিকেট, আমেরিকানদের জাতীয় খেলা বেসবল। আমাদের জাতীয় খেলা হাডুডু বা কাবাডি। কিন্তু কালক্রমে এই খেলার কদর হারিয়ে যেতে বসেছে। ১০ বছর আগেও স্কুলভিত্তিক আন্তঃস্কুল বা থানা কাবাডি প্রতিযোগিতার আয়োজন চোখে পড়ত। বর্তমানে স্কুলভিত্তিক আন্তঃস্কুল বা থানা কাবাডি প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হলেও তা আগের মত চোখে পড়ে না। অনেকে হাডুডু খেলার নিয়ম পর্যন্ত জানে না। একদমে এই উচ্চারিত শব্দগুলো একসময় বেশ জনপ্রিয় ছিল। কোনো একসময় গ্রাম-বাংলায় এই খেলার ধুম ছিল বেশ। উৎসব করে আয়োজন করা হতো খেলার। আন্তর্জাতিকভাবেও পেয়েছে স্বীকৃতি এ খেলা। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে এই হাডুডু। এখনকার ছেলেমেয়েদের কাছে হাডুডু পাঠ্যপুস্তকের কেবল একটি নাম। এ যুগের ছেলেমেয়েরা তাদের দেশীয় সংস্কৃতি চেয়ে বিদেশী বিষয় নিয়েই মাতামাতি করে বেশি। এর ভুক্তভোগী হয়েছে এই খেলাও। ১৯৭২ সালে এ খেলার নামকরণ হয় কাবাডি। সে বছরই কাবাডি জাতীয় খেলার মর্যাদা পায়। তবে জাতীয় খেলার মর্যাদা পেলেও এই খেলা তখন কেবল গ্রাম-বাংলাতেই হতো। ১৯৭৮ সালে ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমার প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে এশিয়ান কাবাডি ফেডারেশন গঠন করা হয়। তবে ১৯৮০ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রথম কলকাতায় এশিয়ান কাবাডি প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ভারত চ্যাম্পিয়ন এবং বাংলাদেশ রানার্সআপ হয়। ১৯৯০ সালে প্রথমবারের মতো বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত এশিয়ান গেমসে অন্তর্ভুক্ত হয় কাবাডি। এই প্রথম আন্তর্জাতিক অঙ্গনে রৌপ্যপদক গ্রহণ করে বাংলাদেশ। কাবাডি খেলায় দু’টি দল অংশ নিতে পারে। প্রতি দলে ১২ জন করে খেলোয়াড় থাকে। তবে মাঠে সাতজনের বেশি নামতে পারে না। বাকি পাঁচজন অতিরিক্ত থাকে। খেলা চলার সময় তিনজন খেলোয়াড় পরিবর্তন হতে পারে। এ ছাড়া খেলার সময় বিরতিসহ পুরুষদের জন্য ২৫ মিনিট আর মেয়েদের জন্য ২০ মিনিট। সর্বত্র একই নিয়ম প্রযোজ্য না হলেও খেলা অনুষ্ঠিত হতো। স্থানীয়ভাবেও তৈরি হতো কিছু নিয়ম। সাধারণত হাডুডু খেলার মাঠের কোনো সুনির্দিষ্ট মাপ থাকে না। খেলায় অংশগ্রহণকারীরা যে জায়গায় খেলা হবে, তার আকার বিবেচনায় নিয়ে নিজেরা আলোচনা করে চারদিকে দাগ দিয়ে খেলার মাঠের সীমানা ঠিক করে নেয়। তবে পরিমাণের দিক থেকে মাঠ যত বড়-ছোটই হোক না কেন, এর আকৃতি হয় আয়তাকার। মাঝখানে দাগ দিয়ে মাঠকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়। প্রতিভাগে একেকটি দল অবস্থান নেয়। অন্য দিকে কাবাডি মাঠের আকার হয় দৈর্ঘ্যে ১২.৫০ মিটার, প্রস্থে ১০ মিটার। গ্রামের কিশোরদের হাডুডু খেলা নিয়ম অনুসারে, এক পরে একজন খেলোয়াড় অপর পরে কোর্টে হানা দেয়। এ সময় সে শ্রুতিগোচরভাবে হাডুডু, হাডুডু বা কাবাডি কাবাডি শব্দ করতে করতে অন্য পরে যেকোনো একজন খেলোয়াড়কে ছুঁয়ে ফিরে আসার চেষ্টা করে। ওই পরে চেষ্টা থাকে সবাই মিলে তাকে জাপটে ধরে আটকে রাখা। যদি ওই খেলোয়াড় দম ধরে রেখে নিজ কোর্টে ফিরে আসতে পারে, তাহলে তার দল পয়েন্ট পায়। আর যদি আটকে থাকা সময়ের মধ্যে খেলোয়াড়টির দম ফুরিয়ে যায়, তাহলে বিপরীত দল পয়েন্ট পায়। হাডুডু বা কাবাডি শুধু বাংলাদেশেরই জাতীয় খেলা নয়, প্রতিবেশী ভারতের ছয়টি রাজ্যের জাতীয় খেলা এটি। একসময় গ্রামাঞ্চলে হাডুডু খেলার খুব বেশি প্রচলন ছিল। সময়ের বিবর্তনে মানুষের ব্যস্ততা, আধুনিকায়নের ফলে খেলাটি বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়ায় কষ্টসাধ্য শারীরিক এ খেলা যুবসম্প্রদায়কে আর টানে না। ফলে জনমনে প্রশ্ন উঠেছেÑ হাডুডু খেলা কি হারিয়ে যাচ্ছে?

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com