দৃষ্টিপাত ডেস্ক ॥ ইতিহাসের নিষ্ঠুরতম হত্যাকান্ড চলছে গাজায়। বর্বর ইসরাইলি বাহিনী প্রতি মুহুর্তে নিরস্ত্র ফিলিস্তীনিদের জন্য মৃত্যু দূত। দখলদার ইসরাইলি বাহিনীর হামলা মোকাবিলা ও প্রতিহত করনে হামাস যোদ্ধারা জীবন বাজি রেখে লড়ছে তো লড়ছেই। গতকাল গাজায় হামাস যোদ্ধারা বড় ধরনের সাফল্য অর্জন করেছে ইসরাইলের সাবেক সেনা প্রধানের পুত্রকে হত্যার মাধ্যমে। নিহত সেনা অফিসারের নাম মাষ্টার সার্জেন্ট গ্যাল মেইর ইসেনকট। ইসরাইলের প্রাক্তন সেনা প্রধান ও দেশটির মন্ত্রীসভার সদস্য গাদি ইসেনকট এর পুত্র। উত্তর গাজায় হামাস যোদ্ধাদের হাতে তিনি নিহত হন। পশ্চিমা মিডিয়া গুলো জানিয়েছে প্রাক্তন সেনা প্রধানের পুত্র সহ অপর দুই সেনা নিহত হয়েছে। হামাস এর সশস্ত্র শাখা আল কাসেম ব্রিগেড জানিয়েছ দখলদার সেনারা আমাদের সুরক্ষিত ট্রানেলে হামলা পরিচালনা করলে আমাদের যোদ্ধাদের প্রতিরোধ এবং পাল্টা হামলায় উক্ত তিন সেনা নিহত হয়েছে এবং বহু সংখ্যক ইসরাইলি সেনা হতাহতের শিকার হয়েছে। এ সময় হামাস যোদ্ধাদের হামলায় দখলদার বাহিনীর একধিক ট্রাঙ্ক ও সাজোয়া যান ধ্বংস ও ভস্মিভূত হয়। ইসরাইলের হামলা কারীদের উপর যারা দক্ষিন তীরে বেসামরিক ফিলিস্তীনিদের হত্যা করেছে এবং হামলা চালিয়ে ধ্বংস করেছে তাদের উপর মার্কিন ভিসা প্রয়োগের পর মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিক্সেন। তিনি সমালোচনায় করার পাশাপাশি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন গাজার দক্ষিন তীরে ইসরাইলি বাহিনী অভিযান পরিচালনার পূর্বে প্রতিশ্র“তি দিয়েছিল যে বেসামরিক নাগরিকদের হতাহত করা হবে না কিন্তু ইসরাইলি সেনারা সেটা মানছে না। বৃহস্পতিবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফর কালে বৃটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোভিড ক্যামেরুনের সাথে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও অভিযোগ করেন এক সপ্তাহ ব্যাপী গাজার দক্ষিন এলাকাতে ইসরাইলি সেনারা হত্যাকান্ডের মত জঘন্য ঘটনা ঘটাচ্ছে। এদিকে ইসরাইলকে সমালোচনা করলেও মার্কিন সহায়তা বন্ধ হবে না বলে জানাচ্ছে পশ্চিমা মিডিয়াগুলো। গতকাল এক খবরে বলা হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলের জন্য সহায়তার যে বিল উত্থাপন করেছে মার্কিন কংগ্রেস এর রিপাবলিকান দলীয় সদস্যরা তা রদ করেছে আর উক্ত বিল রদ করার জন্য ইসরাইলের অস্ত্র সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। গাজার দক্ষিন তীরে তীব্র হামলা ও হত্যাকান্ড পরিচালনা করায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবার ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সাথে টেলিফোনে কথা বলেছেন বলে জানায় মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। গাজায় হামলার সাথে এক ধরনের রাসায়নিক ক্ষতিকর পদার্থের যোগসূত্র খুজে পেয়েছে ফিলিস্তীন স্বাস্থ্য বিভাগ। গাজায় সর্ববৃহৎ হাসপাতাল আল সাফার চিকিৎসা সেবা পুরোপুরি বন্ধ হওয়ার পর গতকাল থেকে সীমিত পরিসরে হাসপাতালটিতে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে বলে জানাগেছে। হগাসপাতালটির ধ্বংস স্তুপের অভ্যন্তরে এখনও পর্যন্ত বিপুল সংখ্যক লাশ আছে বলে ধারনা করা হচ্ছে কারন হাসপাতাল ও তার আশপাশের এলাকায় দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। গাজার অত্যন্ত ব্যস্ত ও সমৃদ্ধ শহর হিসেবে খ্যাত রামাল্লাতে গত দুই দিন ব্যাপী ইসরাইলি বাহিনী অভিযান শুরু করেছে। হামাসের পক্ষ হতে বলা হয়েছে যে রামাল্লায় হামাস যোদ্ধারা ইসরাইলি দখলদার বাহিনীর সাথে একের পর এক প্রতিরোধ হামলা সহ পাল্টা হামলা পরিচালনা করছে। এবার ইসরাইলি বাহিনীর হামলার অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু ফিলিস্তীনি নারী ও শিশুরা। ফিলিস্তীনি অভ্যন্তরে বিদ্যালয় গুলোর অধিকাংশ বন্দ। ইতিহাসের এক অন্ধকারময় পরিস্থিতি অতিক্রম করছে ফিলিস্তীনিরা। ১৯৪৮ সালে আরব এবং ইসরাইল এর মধ্যে যে ভাবে যুদ্ধ জয় ও যুদ্ধের ভয়াবহতা ছিল ব্যাপক বর্তমান সময় গুলোতে ইসরাইল ও হামাসের মধ্যকার যুদ্ধ অতীতের ১৯৪৮,১৯৫৩ সাল, ১৯৬৯ সাল সহ যে কোন সময়ের যুদ্ধ অপেক্ষা বেদনা দায়ক, মর্মান্তিক ভয়াবহ ও নৃষন্ন। ইসরাইলি বাহিনী ফিলিস্তীনিদের কেবল হত্যা এবং তাদের বসতবাড়ী ধ্বংস করছে তা নয়। অসভ্য এই বর্বর বাহিনী ফিলিস্তীনিদের গ্রেফতার পরবর্তি সর্ব উলঙ্গ (নগ্ন) করে সেই ছবি ভিডিও ধারন করে বিশ্ব মিডিয়ায় সরবরাহ করে তাদের অসভ্যতা, অমানবিকতার ক্ষেত্র বিস্তৃত করছে। সম্মানহানী ঘটাচ্ছে ফিলিস্তীনিদের, জাতিসংঘের মহাসচিব তার ৯৯ ধারার ক্ষমতা প্রয়োগ করে ইসরাইলের হামলা বন্ধে ও যুদ্ধ বিরতি করার যে প্রস্তাব সম্বলিত নিরাপত্তা পরিষদের সভা আহবান করেছে উক্ত সভার পক্ষে মতামত ব্যক্ত করেছে ইরান চীন, রাশিয়া, তুরস্ক, ফ্রান্স, জার্মানি সহ মধ্য প্রাচ্যের দেশ গুলো, হামাসের সামরিক শাখার প্রধান মোহাম্মদ দেইফ বলেন, হামাস কোন অবস্থাতেই পরাজয় শিকার করবে না, গত সাত অক্টোবরের চাইতেও ভয়াবহ পরিনতি অপেক্ষা করছে ইসরাইলিদের জন্য। গতকাল দখলদার ইসরাইলি বাহিনী গাজার প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু সচিবালয় অর্থাৎ প্রশাসনিক রাজধানীতে বোমা হামলা ও সাউন্ডগ্রেনেট নিক্ষেপ করে। জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে গাজার বিভিন্ন অঞ্চলে ত্রান বিতরন করা হচ্ছে। অপ্রতুল এ সকল ত্রান সংগ্রহের জন্য অভূক্ত ফিলিস্তীনিরা হাত পেতে সড়কে সড়কে দাঁড়িয়ে আছে। চরম মানবিক বিপর্যয়ে বিপর্যস্থ ফিলিস্তীনিরা তাদের একমাত্র আশ্রয় স্থল হামাস, আর হামাসই রুখতে পারে দখলদার ইসরাইলের আগ্রাসন এবং স্বাধীন সার্বভৌম ফিলিস্তীন রাষ্ট্র্।