এফএনএস স্পোর্টস: ফরাসি তারকা করিম বেনজেমার হ্যাটট্রিকে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন চেলসিকে কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম লেগে ৩-১ গোলে পরাজিত কো চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালের পথে এক পা দিয়ে রাখলো রিয়াল মাদ্রিদ। এই ম্যাচের পর দলের ফরাসি এই তারকার প্রশংসা করতে গিয়ে মাদ্রিদ কোচ কার্লো আনচেলত্তি বলেছেন, ‘ফ্যানটাস্টিক’। স্ট্যামফোর্ড ব্রীজে গত বুধবার পুরো রাতটাই ছিল বেনজেমাময়। প্রথমার্ধে দুটি নিখুঁত হেডে তিনি রিয়ালকে এগিয়ে দেন। বিরতির ঠিক আগে কেই হাভার্টজের গোলে চেলসি এক গোল পরিশোধ করে। কিন্তু বিরতির ঠিক পরেই চেলসি গোলরক্ষক এডুয়ার্ডো মেন্ডির ভুলের সুবাদে বেনজেমা হ্যাটট্রিক পূরণের পাশাপাশি রিয়ালের দুর্দান্ত জয় নিশ্চিত করেন। এনিয়ে এবারের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ মৌসুমে টানা দ্বিতীয় হ্যাটট্রিকের দেখা পেলেন বেনজেমা। শেষ ১৬’র দ্বিতীয় লেগের ম্যাচে বেনজেমার একক নৈপুন্যে হ্যাটট্রিকের পাশাপাশি মাদ্রিদের জয় নিশ্চিত হয়েছিল। প্রথম লেগে ১-০ গোলে পিছিয়ে থেকেও দ্বিতীয় লেগে প্যারিসের জায়ান্টদের একাই বিদায় করে দেন বেনজেমা। এই ফরাসি স্ট্রাইকারের হ্যাটট্রিকে পিএসজিকে দ্বিতীয় লেগে ৩-১ গোলে পরাজিত করে দুই লেগ মিলিয়ে ৩-২ ব্যবধানে এগিয়ে থেকে মাদ্রিদের সেমিফাইনাল নিশ্চিত হয়। আগামী ১২ এপ্রিল দ্বিতীয় লেগের ম্যাচে সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে সুস্পষ্ট ফেবারিট হিসেবেই মাঠে নামবে আনচেলত্তি বাহিনী। গত মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালে এই চেলসির কাছে হারের পর বার্নাব্যুতে রিয়ালের সামনে সুযোগ আসছে প্রতিশোধ গ্রহণের। গত বুধবার ম্যাচ শেষে আনচেলত্তি বলেছেন, ‘আজ পুরো ম্যাচেই আক্রনমনভাগে বেনজেমা দুর্দান্ত খেলেছে। প্রতিদিনই যেন সে নিজেকে প্রমানের জন্যই মাঠে নামছে। আজ মূলত পুরো দলই ভাল খেলেছে। এজন্য জয় সম্ভব হয়েছে। এই জয়ে আমরা কিছুটা হলেও এগিয়ে গেলাম।’ চ্যাম্পিয়ন্স লিগে নিজেদের ১৩তম শিরোপাটি ২০১৮ সালে ঘরে তুলেছিল রিয়াল। এবারের টুর্নামেন্টে তারা মোটেও ফেবারিট ছিলনা। কিন্তু পশ্চিম লন্ডনে কালকের জয়ের পর লা লিগা টেবিলের শীর্ষে থাকা দলটিকে নিয়ে সকলেই স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। এবারের আসরে ১১ গোল করা বেনজেমা এর মাধ্যমে ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতায় যেকোন ফ্রেঞ্চম্যানের থেকে বেশী গোল করার কৃতিত্ব দেখালেন। ১৯৫৮-৫৯ সালে জাস্ট ফন্টেইন এক মৌসুমে ১০ গোল করেছিলেন। বেনজেমা বলেছেন, ‘এটা আসলে যাদুময়ী এক রাত ছিল। আজ আমরা এখানে জেতার লক্ষ্য নিয়েই খেলতে এসেছিলাম। আমরা যে রিয়াল মাদ্রিদ এটা প্রমানই মূল লক্ষ্য ছিল। প্রথম মিনিট থেকে শেষ পর্যন্ত আমরা ভাল খেলেছি। গোলগুলোও সঠিক সময়ে এসেছে।’ গত বছর দ্বিতীয় চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা জেতা চেলসি দুর্দান্ত গোছালো একটি দল হিসেবে ইতোমধ্যেই এবারের মৌসুমে নিজেদের প্রমান করেছে। আন্তর্জাতিক বিরতির আগে সব ধরনের প্রতিযোগিতায় তারা ছয়টি ম্যাচে জয়লাভ করেছে। যদিও বিরতি থেকে ফিরে এসে সময়টা মোটেই ভাল যাচ্ছেনা। শনিবার ঘরের মাঠে ব্রেন্টফোর্ডের কাছে প্রিমিয়ার লিগে ৪-১ গোলে বিধ্বস্ত হবার পর দলকে চাঙ্গা রাখতে ব্লুস বস থমাস টাচেল বলেছিলেন চিন্তার কিছু নেই। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে ঐ ম্যাচের প্রভাব কিছুটা হলেও রিয়ালের মত শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিপক্ষে পড়েছে। টাচেল বলেন, ‘আজকের ম্যাচের প্রথমার্ধটা ছিল ব্রেন্টফোর্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয়ার্ধের প্রতিচ্ছবি। এই ধরনের ম্যাচে যা প্রয়োজন তার থেকে আমাদের মান অনেক দুরে ছিল। দ্বিতীয়ার্ধে বড় ভুলের কারণে ম্যাচের সব আশা শেষ হয়ে যায়। এই ধরনের পরাজয় আসলেই মেনে নেয়া যায়না। ব্যক্তিগত ভাবেও আজ আমরা নিজেদের মান অনুযায়ী খেলতে পারিনি। এই পরাজয়ের দায়ভার আমাদের সবার, এর মধ্যে আমিও রয়েছি।’ ম্যাচের ২১ মিনিটে ভিনিসিয়াস জুনিয়রের ক্রসে মেন্ডির উপর দিয়ে বেনজেমার দুর্দান্ত হেডে মাদ্রিদ এগিয়ে যায়। তিন মিনিট পর ব্যবধান দ্বিগুন করেন বেনজেমা। এই গোলের যোগানদাতা ছিলেন লুকা মড্রিচ। ক্রোয়েট তারকা নিখঁত ক্রসে ৩৪ বছর বয়সী বেনজেমা তার সব অভিজ্ঞতার প্রমান দিয়েছেন। বিরতির পাঁচ মিনিট আগে জর্জিনহোর ক্রসে হাভার্টজ শক্তিশালী জেডে মাদ্রিদ গোলরক্ষক থিবাট কুর্তোয়াকে পরাস্ত করেন। বিরতির পর ম্যাচে ফিরে আসার প্রয়াসে টাচেল মাতেও কোভাচিচ ও হাকিম জিয়েচকে মাঠে নামান। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে ৪৬ মিনিটে অবিশ্বাস্য ভুলটি করে বসেন চেলসি গোলরক্ষক মেন্ডি। উড়ে আসা বল বুক দিয়ে নামিয়ে সতীর্থ ডিফেন্ডার অ্যান্টনি রুডিগারকে পাস দিতে গিয়ে বলে পা ঠিকমতো লাগাতে পারেননি। এই সুযোগে বল কেড়ে বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া শটে গোল করে টানা দ্বিতীয় হ্যাটট্রিক তুলে নেন বেনজেমা। ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো, লিওনেল মেসি ও লুইজ আদ্রিয়ানোর পর চতুর্থ খেলোয়াড় হিসেবে চ্যাম্পিয়নস লিগে টানা দুই ম্যাচে হ্যাটট্রিক করলেন বেনজেমা। দুই গোলের ব্যবধানে পিছিয়ে পড়েও হাল ছাড়েনি চেলসি। ৬৪ মিনিটে পুলিসিচের বদলি হয়ে নামা রোমেলু লুকাকু ম্যাচের শেষ দিকে গোলের দারুণ সুযোগ নষ্ট করেন। সিজার আজপিলিকুয়েটার স্ট্রাইক দুর্দান্ত গতিতে কর্ণারের মাধ্যমে সেভ করেন কুর্তোয়া।