সোমবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:০৮ অপরাহ্ন

তাপদাহে আগের অর্ধেক শ্রম দিতে পারছেন শ্রমজীবী মানুষ

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় রবিবার, ২১ এপ্রিল, ২০২৪

জি এম শাহনেওয়াজ ঢাকা থেকে ॥ মানুষকে একনাগাড়ে কায়িক শ্রম পরিহার করার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন দেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। সম্ভব হলে টানা ৪ ঘন্টা কাজ করলে আধাঘণ্টা বিশ্রাম নেওয়ার পরামর্শও তাদের। এ নিয়মের ব্যত্যয় ঘটলে হিটস্ট্রোকজনিত কারণে শারিরীক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অকেজো হতে পারে। আরও বলছেন, বেশি বেশি পানি পান করা, টাইটফিট জামা, প্যান্ট, মোজা ও আন্ডারওয়্যার আপতত পরিহার করা এবং পানিযুক্ত এমন ফলমূল অধিক পরিমাণে খাওয়া। প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না বের হওয়া, ঠান্ডাযুক্ত পরিবেশে কাজ করা এবং তীব্র তাপদাহ থেকে বাঁচতে ছাতা ও তাপ শোষণ করে এমন টুপি বা হ্যাট ব্যবহার করার তাগিদ রয়েছে চিকিৎসকদের। একই সঙ্গে কোন অবস্থায় পাঁচবাসী খাবার না এড়িয়ে চলা, অতিরিক্ত তেলেভাজা খাবার পরিহার করা ও স্বাস্থ্যসম্মত সুষম খাবার খাওয়া পর্যাপ্ত পরিমানে খাওয়ার পরামর্শ রয়েছেন চিকিৎসকদের। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত এই সংকটকালে গত শুক্রবার সরকার দেশে তিনদিনের হিট এ্যালার্ট জারি করে। তাপদহের তীব্রতা অব্যাহত থাকায় আগামীকাল থেকে ৭দিনের স্কুল-কলেজে বন্ধ রাখার ঘোষণা করা হয়েছে। প্রচন্ড গরম আবহাওয়ার কারণে জরুরি স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। হাসপাতালে ‘হিটস্ট্রোকের’ রোগীও বাড়তে পারে। পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার তথ্যমতে, আবহাওয়ার দিকে অধিদপ্তরের সতর্ক নজর আছে। হিটস্ট্রোকের মতো জরুরি স্বাস্থ্য পরিস্থিতি মোকাবিলায় জাতীয় নির্দেশিকার (গাইডলাইন) খসড়া তৈরি করেছে। আগামীকাল ২২-২৩ এপ্রিল থেকে সারা দেশের চিকিৎসকদের এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ ও দিক-নিদের্শনা প্রদান করবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এদিতে, তীব্রগরমে অতিষ্ঠ জীবন শ্রমজীবী মানুষের। বিশেষ পায়ে প্যাটেল চালানো রিকসার চালকরা, মাঠে কাজ করা শ্রমজীবী মানুষ এবং গামেন্টস শ্রমিকরা। এসব পেশার মানুষের জীবিকার তাগিদে টানা কাজ করতে হয়। রাজধানী ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় কথা হয় আবদুল আজিজ (৪৮) নামে একজন রিকসা চালকের সঙ্গে। তার গ্রামের বাড়ি নওগাঁও জেলায় হলেও রু্যুজির তাগিদে ব্যস্ত শহর রাজধানীতেই জীবন নির্বাহ করছেন কিরসা চালিয়ে। কেমন আছেন জানতে চাইলে বলেন, শরীর থেকে ঘাম পড়ার পরে পিচ্চিলভাবে শরীর থেকে কি একটা বের হচ্ছে। এতেই আমি ক্লান্ত হয়ে পড়ছি আমি। টানা রিকসা চালিয়ে থামার পরে হচ্ছে তার হাত-পা অবশ হয়ে কেমন করতে লাগছে। হাঁটুর নিচে থেকে পা-অবশ হয়ে আসছে। তীব্র গরম পড়ার আগে যে পরিশ্রম করতাম তার হাফ-ও পারছে না বলেও জানান আবদুল আজিজ। শুধু আবদুল আজিজ একা নন, তীব্র এই গরমে প্রত্যক খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষের অবস্থা একই। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-এশিয়া বিষয়ক সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক মোজাহেরুল হক বলেন, আমাদের প্রথম কথা ঢিলেঢালা সূতিকাপড় পড়তে হবে। প্রচুর পরিমান লেবুর পানি খেতে হবে। বাইরে গেলে ছাতা ব্যবহার করতে হবে। টাইট কোনো ড্রেস পরা যাবে না বিশেষ করে -মোজা, প্যান্ট, জামা ও আন্ডারওয়্যার আপাতত তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে। পর্যাপ্ত পানি রয়েছে এমন ফলমূল যেমন কমলা, মাল্টা ও তরমুজ জাতীয় খাবার বেশি বেশি করে খেতে হবে। হিটস্ট্রোক বা পানি শূন্যতায় কেউ অজ্ঞান হয়ে পড়লে তাৎক্ষণিক হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে। এ সময়ও প্রচুর পানি পান করাতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো চরমভাবাপন্ন আবহাওয়ার মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশের প্রকৃতি ও মানুষ বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাবেক সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল। বলেন, গ্রীষ্মে বাংলাদেশে প্রচন্ড গরমের দিনের সংখ্যা বাড়ছে। যদি কোনো এলাকার তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি এবং বাতাসের আর্দ্রতা ৭০ থেকে ৯০ শতাংশের মধ্যে থাকে, তা হলে দিনটি কষ্টের দিন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ১৯৬১ সালের দিকে বছরে এ রকম সাতটি দিনের মুখোমুখি হতেন বাংলাদেশের মানুষ। এখন সেই কষ্টের দিনের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২০ থেকে ২১। বলেন, এর প্রধান কারণ জলবায়ুর ক্ষতিকর বিরুপ প্রভাব। এটা মোকাবেলায় সমন্বয় প্রয়োজন, যা আমাদের এখানে খুবই ঘাটতি রয়েছে। তবে হিটস্ট্রোক থেকে বাঁচার জন্য করণীয় কিছু পরামর্শ দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল¬াহ। তিনি বলেন, এ সময়ে মানুষের প্রচুর ঘাম হয়। আর ঘাম হলে সংগত কারণেই দুর্বল হয়ে যান। এ সময় পানিশূন্যতা দেখা দেয়। মানুষ তৃষ্ণা বেশি অনুভব করেন। পচন্ড গরমে বড় সমস্যা হিটস্ট্রোক। এর ফলে শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র বা হিট রেগুলেটিং সেন্টার কাজ করে না। শরীর বাইরের প্রচন্ড তাপ শরীর নিতে পারে না। ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। একপর্যায়ে এতে আক্রান্ত ব্যক্তির ঘামঝরা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। মাথা ঘুরে পড়ে যেতে পারেন। যাঁরা দীর্ঘ সময় রোদে থাকেন, শিশু ও বয়স্ক—তাঁদের হিটস্ট্রোকের আশঙ্কা বেশি থাকে। কয়েকটি লক্ষণ তুলে ধরে এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেন, প্রচন্ড তৃষ্ণা, পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে। হিটস্ট্রোকের আগে হৃৎস্পন্দন স্বাভাবিকের চেয়ে দ্রুততর হতে পারে। মাথাব্যথার পাশাপাশি বমি বমি ভাব হতে পারে। কথা জড়িয়ে যায়। একপর্যায়ে অজ্ঞান হতে পারে। কখনো কখনো হিটস্ট্রোকের কারণে মানুষের মৃত্যুও হতে পারে। কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট গ্রুপ অব বাংলাদেশ এন্ড ইয়ার ফাউন্ডেশনের সাধারন সম্পাদক অধ্যাপক ডা. মনি লাল আইচ লিটু বলেন, শিশু, বয়স্ক ব্যক্তি, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, শ্রমজীবী ব্যক্তি, যেমন, রিকশাচালক, কৃষক ও নির্মাণ শ্রমিক, যাদের ওজন বেশি, যারা শারীরিকভাবে অসুস্থ, বিশেষ করে যাদের হ্নদরোগ বা উচ্চ রক্তচাপ আছে তাদের এই তীব্র তাপদাহে ঝুঁকি বেশি। তাই তাদের কর্মের ক্ষেত্রে সতর্কতা থাকতে হবে। বলেন, এখন এই গরমে প্রচুর পানি পানের সঙ্গে লবণযুক্ত পানি খাওয়া দরকার বলে তাঁরা মনে করেন তিনি। বলেন, বেশি তেল ও মসলা বা ঝালযুক্ত খাবার না খাওয়া উত্তম। এই গরমে যা খেলে স্বস্তি মিলবে : গরমে ঘামের সঙ্গে দেহের অনেক গুরুত্বপূর্ণ খনিজ উপাদান, যেমন সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্লোরাইড বেরিয়ে গিয়ে অনেক জটিলতা তৈরি করতে পারে। তাই এ সময় ডাবের পানি, কলা, স্যালাইন, আখের গুড়ের শরবত, লেবুর শরবত, তেঁতুলের পাতলা পানি, কাঁচা আমের শরবত বেশি খেতে হবে। আর গরমে শরীর ঠান্ডা রাখতে পানিজাতীয় খাবারের পাশাপাশি যেসব খাবার দেহে পানি ধরে রাখতে সাহায্য করে, সেসবের মধ্যে জটিল শর্করা ও স্টার্চ—ওটস, লাল চিড়া। এগুলো দীর্ঘক্ষণ দেহকে ঠান্ডা রাখে। এ ছাড়া ইসবগুল, চিয়া সিড, তোকমা দানা, বার্লি এগুলোর ওজনের তিন গুণ পানি শোষণ করে দেহ ঠান্ডা রাখে।

গরমে সুস্থ থাকতে যা করণীয়

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com