রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫:৩৩ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
দেশের সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে গেছে হাসিনার স্বৈরতন্ত্র: কূটনীতিকদের ইউনূস ভারতে নারী চিকিৎসককে ধর্ষণ-হত্যার প্রতিবাদে শাটডাউন কর্মসূচির ঘোষণা চিকিৎসকদের নলতা আহসানিয়া মিশন রেসিডেনসিয়াল কলেজের অধ্যক্ষের দুর্নীতি ॥ উত্তাল নলতা ॥ শিক্ষক কর্মচারীরা মতবিনিময় করলেন ডাঃ শহিদুল আলম ও চেয়ারম্যান আজিজুর রহমানের সাথে মহামারীর দ্বারপ্রান্তে গাজা আলোচনায় থাইল্যান্ড ॥ বন্দী থাকসিন মুক্ত হরিনগর বাজারে ক্ষতিগ্রস্ত দোকানদের মাঝে নগদ অর্থ প্রদান পাইকগাছায় একটি বাঁশের সাঁকো পারাপারে এলাকাবাসীর চরম ভোগান্তি মাথাভারি হচ্ছে প্রশাসনের ॥ বাড়ছে সরকারের দু:চিন্তা ডুমুরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান গাজী এজাজ আহমেদ এর পদত্যাগ দাবীতে-মানববন্ধন চাম্পাফুল ইউনিয়ন বিএনপির আয়োজনে শান্তি সমাবেশ অনুষ্ঠিত

তুমুল লড়াই ইউক্রেনে

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় সোমবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

এফএনএস : জ্বলছে ইউক্রেন। তুমুল লড়াই চলছে আগ্রাসী রাশিয়া ও ইউক্রেনের সেনাদের মধ্যে। আকাশে উঠে যাচ্ছে কালো ধোঁয়া। দূরে কোথাও দেখা যাচ্ছে অগ্নিকুণ্ডলী। রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় জ্বলছে ইউক্রেনের বিভিন্ন স্থাপনা। তবে রাশিয়ার তুলনায় ক্ষুদ্র দেশ ইউক্রেন সমানে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের সঙ্গে রয়েছে বিশ্বের বেশির ভাগ দেশ। তাদের কাছে যাচ্ছে অস্ত্র সরবরাহ। একের পর এক নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে পশ্চিমা দেশগুলো। গতকাল এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহৎ শহর খারকিভ দখল নিয়ে তুমুল লড়াই চলছিল দুই পক্ষের। পাশাপাশি রাজধানী কিয়েভেও লড়াই চলছে। কিয়েভের দক্ষিণ-পশ্চিমে ভাসিলকিভে একটি তেল ও গ্যাস টার্মিনালে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় আগুন ধরে যায়। এ অবস্থায় কর্তৃপক্ষ কিয়েভের অধিবাসীদের সোমবার পর্যন্ত ঘরের ভেতরে অবস্থান করার নির্দেশ দিয়েছে। ওদিকে বেলারুশে বৈঠক আহ্বান করেছে মস্কো। এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি। ইউক্রেন আগ্রাসনে বেলারুশ রাশিয়ার পাশে আছে বলে ওই দেশে কোনো আলোচনায় বসতে চান না তিনি। জাতিসংঘের হিসাবে এরই মধ্যে জীবন বাঁচাতে প্রতিবেশী দেশগুলোতে আশ্রয় নিয়েছেন ইউক্রেনের কমপক্ষে তিন লাখ ৬৮ হাজার শরণার্থী। এ অবস্থায় পশ্চিমের বেশির ভাগ দেশের আকাশসীমা রাশিয়ার বিমান চলাচলের জন্য নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে যে শুধু ইউক্রেনের নাগরিকরাই আতঙ্কে, আসল সত্য কিন্তু তা নয়। রাশিয়ার ভেতরেও নিষেধাজ্ঞা, পশ্চিমা বিধিনিষেধের কারণে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। ফলে লোকজন ব্যাংক ও এটিএম বুথগুলোতে ভিড় করছেন অর্থ তোলার জন্য। এ পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিবৃতি দিতে বাধ্য হয়েছে। এ অবস্থায় হেগে অবস্থিত জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালত ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে (আইসিজে) রাশিয়ার বিরুদ্ধে মামলা করেছে ইউক্রেন। দেশটির প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি এ তথ্য দিয়েছেন মিডিয়ার কাছে। বিরোধে জড়িত দেশগুলোর মধ্যে আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী এই আদালত ফয়সালা দিয়ে থাকে। জেলেনস্কি টুইটারে লিখেছেন, আইসিজে’তে রাশিয়ার বিরুদ্ধে আবেদন জমা দিয়েছে ইউক্রেন। আগ্রাসনকে বৈধতা দেয়ার জন্য গণহত্যা চালাচ্ছে রাশিয়া। এ জন্য তাদের বিচার হতে হবে। এই আবেদনে আমরা ঠিক এই মুহূর্তে সামরিক অভিযান বন্ধ করতে রাশিয়াকে নির্দেশ দেয়ার জন্য জরুরি সিদ্ধান্ত নেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। আশা করছি, এর বিচার প্রক্রিয়া শুরু হবে আগামী সপ্তাহে। এতে তিনি আরও অভিযোগ করেছেন যে, রাশিয়ানরা কিন্ডারগার্টেন, আবাসিক এলাকা এবং বেসামরিক অবকাঠামোতে বোমা হামলা চালাচ্ছে। এসবই গণহত্যার শামিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের দেশ ইউক্রেনের ওপর চতুর্থ দিনের মতো সর্বোচ্চ হামলা চালাচ্ছিল রাশিয়া। রোববার খারকিভের বিভিন্ন অংশে রাশিয়ার সেনা ও সশস্ত্র যান দেখা গেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, শোনা গেছে গুলির শব্দ। ভিডিওতে দেখা গেছে একটি ট্যাংক জ্বলছে। রাশিয়ার সেনারা ভোরের আগে আগে খারকিভের একটি প্রাকৃতিক গ্যাসের পাইপ লাইন উড়িয়ে দিয়েছে। ইউক্রেনের রাষ্ট্রীয় এজেন্সি থেকে এ কথা জানিয়ে বলা হয়েছে, তখনো রাতের অন্ধকার। তার মধ্যদিয়ে অগ্নিশিখা এবং ধোঁয়ার কুণ্ডলী আকাশে উঠে গেছে। আঞ্চলিক গভর্নর ওলেহ সিনেগুবোভ বলেছেন, রাশিয়ার হালকা যান প্রবেশ করেছে খারকিভে। শহরের কেন্দ্রীয় অঞ্চলেও তা দেখা গেছে। তবে শত্রুদের ধ্বংস করে দিচ্ছে ইউক্রেনের সেনারা। এ অবস্থায় বেসামরিক লোকজনকে ঘরের বাইরে না যেতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। রাশিয়ার এই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে পশ্চিমা মিত্ররা। রাশিয়ার বিরুদ্ধে একের পর এক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে এবং দিচ্ছে তারা। রাশিয়ার বড় বড় ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হচ্ছে। এমনকি তারা যাতে বিদেশের সঙ্গে দ্রুত অর্থ স্থানান্তরের সিস্টেম সুইফট ব্যবহার করতে না পারে, সে বিষয়েও নিষেধাজ্ঞা দেয়া হচ্ছে। বিদেশে আছে রাশিয়ার ৬৩,০০০ কোটি ডলারের রিজার্ভ। এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হলে বড় বিপদে পড়ে যাবে দেশটি। উপরন্তু ইউরোপের বহু দেশ রাশিয়ার ফ্লাইটের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে। সর্বশেষ এই তালিকায় যুক্ত হয়েছে ফিনল্যান্ড ও সুইডেনও। প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, রাজধানী কিয়েভে রাশিয়ার সেনাদের সামনে এগুনো আটকে দিয়েছে ইউক্রেনের সেনারা। তা সত্ত্বেও অবকাঠামো, এম্বুলেন্স সহ বেসামরিক টার্গেটে বোমা হামলা করছে রাশিয়ানরা। জাতিসংঘের একটি এজেন্সির মতে, বেসামরিক ৬৪ জন মানুষ নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে ইউক্রেন দাবি করেছে, লড়াইয়ে এ পর্যন্ত কমপক্ষে ৪৩০০ রাশিয়ান সেনাকে হত্যা করেছে তাদের সেনারা। পশ্চিমা দেশগুলো দীর্ঘ সময় ধরে কূটনৈতিক উপায়ে সমস্যা সমাধানের আহ্বান জানিয়ে এসেছে। কিন্তু তাতে তোয়াক্কা করেননি পুতিন। তিনি দাবি করেছেন ইউক্রেন শাসন করছে নব্য-নাৎসীরা। এরা রাশিয়ার নিরাপত্তার জন্য হুমকি। এমন অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে কিয়েভ এবং পশ্চিমা সরকারগুলো। পুতিন প্রথম দিকে কূটনৈতিক সমাধানের দিকে অগ্রসর না হলেও, একটি কূটনৈতিক প্রতিনিধিদল পাঠিয়েছেন তার মিত্রদেশ বেলারুশে। তাদের মাধ্যমে ইউক্রেনের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছেন। কিন্তু বেলারুশে গিয়ে আলোচনার আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছে ইউক্রেন। দেশটির প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেছেন, বেলারুশ নয়, অন্য কোনো দেশে আলোচনা হলে তিনি তাতে অংশ নিতে রাজি। রাতভর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা : শনিবার দিবাগত রাতভর ইউক্রেনের বিভিন্ন স্থাপনা লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে রাশিয়া। এর মধ্যে এক হামলায় ভাসিলকোভে একটি তেল ও গ্যাস ক্ষেত্রে আগুন ধরে যায়। এতে বড় মাপের বিস্ফোরণ হয়। আকাশে উঠে যায় অগ্নিশিখা ও কালো ধোঁয়া। শহরটির মেয়র নাতালিয়া বেলাসিনোভিচ বলেছেন, শত্রুরা আমাদের সবকিছু ধ্বংস করে দিতে চায়। তবে ইউক্রেনের গ্যাস পাইপ লাইন অপারেটর জানিয়েছে, ইউক্রেনের ভেতর দিয়ে রাশিয়ার গ্যাসের ট্রানজিট অব্যাহত ছিল স্বাভাবিকের মতোই। ক্রেমলিন নিয়ন্ত্রিত জ্বালানি বিষয়ক জায়ান্ট প্রতিষ্ঠান গ্যাজপ্রোম ঘোষণা দিয়েছে যে, ইউক্রেনের ভেতর দিয়ে তাদের গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে। অন্যদিকে পূর্বাঞ্চলে বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত লুহানস্ক প্রদেশের বিচ্ছিন্নতাবাদীরা বলেছে, রোভেনকি শহরে তেলের টার্মিনালে ইউক্রেনের একটি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত করে তা উড়িয়ে দিয়েছে। এ ছাড়া কিয়েভে রাতভর বিস্ফোরণ এবং গুলির শব্দ শোনা গেছে। অপ্রতিরোধ্য ইউক্রেন : ইউক্রেন কর্তৃপক্ষ এখনো অপ্রতিরোধ্য। তারা রাশিয়ানদের বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। কিয়েভের রাস্তা থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও মেসেজ পোস্ট করেছেন প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি। এতে তিনি বলেছেন, শত্রুদের হামলা আমরা সফলতার সঙ্গে প্রতিহত করেছি। লড়াই চলছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com