মঙ্গলবার, ০১ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:৪৯ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
দেশের সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে গেছে হাসিনার স্বৈরতন্ত্র: কূটনীতিকদের ইউনূস ভারতে নারী চিকিৎসককে ধর্ষণ-হত্যার প্রতিবাদে শাটডাউন কর্মসূচির ঘোষণা চিকিৎসকদের নলতা আহসানিয়া মিশন রেসিডেনসিয়াল কলেজের অধ্যক্ষের দুর্নীতি ॥ উত্তাল নলতা ॥ শিক্ষক কর্মচারীরা মতবিনিময় করলেন ডাঃ শহিদুল আলম ও চেয়ারম্যান আজিজুর রহমানের সাথে মহামারীর দ্বারপ্রান্তে গাজা আলোচনায় থাইল্যান্ড ॥ বন্দী থাকসিন মুক্ত হরিনগর বাজারে ক্ষতিগ্রস্ত দোকানদের মাঝে নগদ অর্থ প্রদান পাইকগাছায় একটি বাঁশের সাঁকো পারাপারে এলাকাবাসীর চরম ভোগান্তি মাথাভারি হচ্ছে প্রশাসনের ॥ বাড়ছে সরকারের দু:চিন্তা ডুমুরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান গাজী এজাজ আহমেদ এর পদত্যাগ দাবীতে-মানববন্ধন চাম্পাফুল ইউনিয়ন বিএনপির আয়োজনে শান্তি সমাবেশ অনুষ্ঠিত

দেশে আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে নারী ও শিশু মাদকাসক্তের সংখ্যা

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় সোমবার, ৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

এফএনএস : দেশে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে নারী ও শিশু মাদকাসক্তের সংখ্যা। মূলত অনলাইনে সহজে মাদকদ্রব্য কেনার সুযোগসহ আরো কিছু কারণে দেশে দিন দিন নারী মাদকাসক্তের সংখ্যা বাড়ছে। দেশের সরকারি ও বেসরকারি সেবাকেন্দ্রের তথ্যানুযায়ী গত ৩ বছরে নারী ও শিশু মাদকাসক্তের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সঠিক অভিভাবকের অভাব, সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক অসচেতনতা, পর্যাপ্ত মাদকাসক্ত নিরাময় ও চিকিৎসাসেবার অভাবে মাদকাসক্তের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে। তাছাড়া সামাজিক ট্যাবু নারী মাদকাসক্তদের চিকিৎসা গ্রহণের পথ বন্ধ করছে। শহরে উচ্চবিত্ত বা শিক্ষিত পরিবারের নারী মাদকাসক্তদের নিরাময়ের সুযোগ থাকলেও দরিদ্র ও অশিক্ষিত পরিবার নারী মাদকাসক্তদের তথ্য প্রকাশ পাচ্ছে না। ফলে অধিকাংশ মাদকাসক্ত নারীই চিকিৎসার বাইরে রয়ে যাচ্ছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর এবং সরকারি-বেসরকারি সেবাকেন্দ্র সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সরকারি ও বেসরকারি মাদক নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসাসেবা নেয়ার ভিত্তিতে ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২১ সালে নারী ও শিশু মাদকাসক্ত দ্বিগুণ বেড়েছে। ২০১৯ সালে চিকিৎসা নিয়েছে ৫৪৪ জন নারী ও শিশু রোগী। আর ২০২০ সালে চিকিৎসা নিয়েছে ১ হাজার ২৪২ জন এবং ২০২১ সালে চিকিৎসা নিয়েছে ১ হাজার ৭৬ জন। বর্তমানে দেশে সরকারি ৪টি মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্র রয়েছে। তার মধ্যে কেবলমাত্র ঢাকায় তেজগাঁও কেন্দ্রে নারীদের চিকিৎসাসেবা দেয়ার ব্যবস্থা আছে। সেখানে নারীর জন্য ২০টি শয্যা আছে। আর দেশে বেসরকারি মাদক চিকিৎসা ও নিরাময় কেন্দ্রের সংখ্যা ৩৬৬টি। তার মধ্যে ঢাকা আহছানিয়া মিশনে নারীদের জন্য সর্বাধিক ৩৬ শয্যার ব্যবস্থা আছে। সূত্র জানায়, আধুনিকতা নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা, পিতামাতার তালাক বা পৃথক থাকা, মাদকাসক্ত বন্ধু, মাদক ব্যবসায়ীদের অপতৎপরতা, অনলাইনে সহজে মাদকদ্রব্য কেনার সুযোগসহ আরো কিছু কারণে দেশে দিন দিন নারী ও শিশু মাদকাসক্তের সংখ্যা বাড়ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনা মহামারিতে সারা বিশ্বেই নারীর মাদক গ্রহণের প্রবণতা বেড়েছে। এদেশেও গত ৫-৭ বছর ধরে নারী মাদকাসক্তের সংখ্যা বাড়ছে। বিশেষ করে ভয়ঙ্কর মাদক ইয়াবা আসার পর থেকে এক শ্রেণির নারীর মাদকাসক্ত হওয়ার হার বেড়েছে। মূলত ইয়াবা নারীকে সুন্দর ও আকর্ষণীয় এবং এনার্জেটিক করে প্রচলিত এমন ধারণা নারীদের মাদকাসক্তে আগ্রহী করেছে। তাছাড়া বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অতি সহজে মাদক পাওয়া যাওয়ায় নারীরা মাদক সংগ্রহে স্পটে যেতে হয় না। পাশাপাশি পারিবারিক দ্ব›েদ্বর কারণেও অনেক তরুণী মাদকাসক্ত হয়। পরিবারের সদস্য কিংবা বাবা-মার মাদক গ্রহণেও নারীরা আকৃষ্ট হয়। বর্তমানে অভিজাত এলাকায় মাদক ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট নারীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করে প্রথমে বিনা মূল্যে মাদক সরবরাহ করে। পরে আসক্ত হলে তাদের শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করা হয় এবং তাদের মাদক বিক্রির কাজে ব্যবহার করা হয়। ওরকম নারীদের অনেকেই গর্ভধারণ করে বাবা-মার সঙ্গে চিকিৎসার জন্য আসে। কিন্তু তাদের অনেকেই জানে না তারা গর্ভবতী। তাছাড়া ডিজে ক্লাবগুলোও নারীদের মাদকাসক্ত বাড়াতে ভূমিকা রাখছে। ফলে এখন সব শ্রেণির নারীই মাদকে আসক্ত হচ্ছে। তবে উচ্চবিত্ত নারীরা নিরাময় কেন্দ্রে বেশি আসে। আর মধ্য ও নিম্নবিত্ত নারীরা সামাজিক ট্যাবুর কারণে বিষয়টি কম প্রকাশ করে। ৫০ জন শহুরে নারী চিকিৎসা নিতে আসলে প্রান্তিক পর্যায়ের মাত্র ৫ জন নারী নিচ্ছে। দেশে পুরুষ মাদকাসক্তদের জন্য চিকিৎসার অনেক জায়গা তৈরি হলেও চিকিৎসায় পিছিয়ে আছে নারী মাদকাসক্তরা। সূত্র আরো জানায়, মাদক প্রতিরোধে নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করা জরুরি। সেজন্য স্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্য এক রকম, বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য এক রকম, ঝরেপড়া শিক্ষার্থীদের জন্য আরেক রকম, আবার কমিউনিটির মানুষের জন্য অন্য রকম পরিকল্পনা করা প্রয়োজন। পাশাপাশি মাদক নির্মূলে জনপ্রতিনিধিদেরও কাজ করতে হবে। আর পারিবারিক ক্ষেত্রে বিশেষ করে বাবা-মাকে ভালো অভিভাবক হতে হবে। পাশাপাশি সরকারকেও দায়িত্ব নিতে হবে। সেজন্য স্থানীয় সরকারকে এ বিষয়ে ক্ষমতায়িত করা প্রয়োজন। এদিকে এ বিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগের পরিচালক মো. ফজলুর রহমান জানান, কয়েক বছর ধরে পুরুষের পাশাপাশি নারী মাদকাসক্তের সংখ্যা ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। এর পেছনে অনেকগুলো কারণের মধ্যে পারিবারিক ও সামাজিক সংকট অন্যতম। অধিদপ্তর নারীদের জন্য চিকিৎসা নিশ্চিত করার পাশাপাশি সারা দেশে মাদক নিয়ন্ত্রণে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা ও মাদকবিরোধী গণসচেতনতামূলক কার্যক্রম বাস্তবায়নসহ বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। আশা করা যায় তাতে মাদকাসক্তের সংখ্যা কমে আসবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com