শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৬:৩৩ পূর্বাহ্ন

নিরাপত্তা শঙ্কায় স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ব্যবস্থা নিতে মাঠ প্রশাসনে ইসির চিঠি

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় রবিবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০২৩
  • ইসির সঙ্গে ইইউ ইলেকশন এক্সপার্ট টিমের বৈঠক আজ
  • ইউএনও-ওসিদের বদলী নিয়ে বিশৃঙ্খলার আশংকা
  • দুই জেলা প্রশাসককে বদলি

জি এম শাহনেওয়াজ ঢাকা থেকে ॥ রাজনৈতিক দলীয় দাপটশালী প্রার্থীদের দৌরত্বে ইতিমধ্যে মাঠ পর্যায়ে কোন ঠাসা হয়েছে পড়ছে দল নিরপেক্ষ অনেক স্বতন্ত্র প্রার্থী। নির্বাচনে সব প্রার্থীদের জন্য নির্বাচনী বিধি-বিধান প্রতিপালনে সমান সুযোগ রাখা নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অঙ্গীকার রয়েছে। তবে, কমিশন থেকে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ এখনো নেয়া হয়নি বলেও সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পক্ষ থেকে অভিযোগ পাওয়া গেছে। খুলনা ও বরিশাল বিভাগসহ বেশ কয়েকটি বিভাগ থেকে এ অভিযোগ উঠেছে। তাদের সমস্যা ইস্যুতে সম্ভাব্য কয়েকজন স্বতন্ত্র প্রার্থী ইসিতে এসে উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাত করে গেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় নিরাপত্তা শঙ্কা থেকে নির্বিঘ্নে নির্বাচনী প্রচারণা ও মাঠে থাকতে কিছু এলাকার স্বতন্ত্র প্রার্থী ইসির কাছে প্রভাবশালী প্রার্থীর বিরুদ্ধে সাক্ষাতে মৌখিক অভিযোগ জানিয়েছে, – যা নিশ্চিত করেছে ইসি সূত্র। এর বাইরে নির্বাচন কমিশনাররা মাঠ পর্যায়ে সফরকালেও অনেক স্বতন্ত্র প্রার্থী তাদের নিরাপত্তা শঙ্কার কথা জানান। এর পরিপ্রেক্ষিতে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল সমর্থিত প্রার্থীদের পাশাপাশি স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নির্বিঘ্নে নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। শনিবার (০২ ডিসেম্বর) ইসি সচিবালয় থেকে মাঠ পর্যায়ে নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। এদিকে, – ইসির নির্দেশনা অনুযায়ী ময়মনসিংহ ও সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসককে বদলী করা হয়েছে। এর আগে সারাদেশের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের (ওসি) বদলী নির্দেশ দেওয়া হয়। ইসির এই নিদের্শনার পর মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে পুলিশ প্রশাসনের মধ্যে বিরাজ করছে বদলি আতঙ্ক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন স্বতন্ত্র প্রার্থী এ প্রতিবেদককে জানান, নির্বাচনের প্রচার শুরু হতে এখনো বেশ কিছু সময় বাকি। এর আগেই দলীয় প্রতীক প্রাপ্ত একটি বড় রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা মাঠ দখলে নিতে মরিয়া। আমরা মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে প্রার্থী হলেও প্রতীক ‘স্বতন্ত্র’। এ কারণে প্রশাসনও কিছু বৈষম্যমূলক আচরণ করে থাকেন। এটা করেন তাদের চাকরি বাঁচানোর সুবাধে। কমিশন ইতিবাচক পদক্ষেপ নিলে সবাইর জন্য সমান সুযোগ থাকলে দ্বাদশ নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ হবে। ইসি সূত্র জানায়, ময়মনসিংহ ও সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসককে বদলির নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। শনিবার সন্ধ্যায় ওই নির্দেশ বাস্তবায়ন করা হয়। নির্বাচন উপলক্ষে এই প্রথম জেলা প্রশাসকদের বদলীর নির্দেশ দেওয়া হলো। এর আগে সারাদেশের ওসি ও ইউএনওদের বদলির নির্দেশ দিয়েছিল ইসি। অবশ্য ইসি’র নির্দেশনা বাস্তবায়নে মাঠ প্রশাসনে বিশৃঙ্খলা দেখা দেওয়ার আশংকা প্রকাশ করেছেন অনেকেই। তবে সেই আশংকা উড়িয়ে দিয়ে মাঠ পর্যায়ের তথ্যের ভিত্তিতেই সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের স্বার্থে তাদের বদলির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে ইসির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরীকে বদলি করে ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক করা হয়েছে। এছাড়া সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিসি) রাশেদ ইকবাল চৌধুরীকে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসি সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ জানান, কমিশনের নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কারণ আমরা না চাইলে এখন কোনো বদলি হবে না। ময়মনসিংহের ডিসির প্রত্যাহার চেয়েছিলাম আমরা; তার আলোকে বদলি করেছে জন-প্রশাসন মন্ত্রণালয়। এদিকে গতকাল ইসি সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ আগারগাঁওস্থ নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, মাঠ পর্যায়ের তথ্যের ভিত্তিতেই ওসি ও ইউএনওদের বদলির সিদ্ধান্ত নিয়েছে র্নিাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশনাররা গত এক সপ্তাহ ধরে দেশের বিভিন্ন জেলায় এবং অঞ্চল পর্যায়ে সফর করেছেন, তাদের যে ফাইন্ডিংস, তার ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। কমিশন অনুভব করেছে, এ সকল বদলি দরকার। নির্বাচন কমিশনাররা মাঠ পর্যায় থেকে যেসব তথ্য পেয়েছেন, বিভিন্ন প্রার্থী কিংবা বিভিন্ন কোয়াটার থেকে যে তথ্য এসেছে, তার ভিত্তিতেই এ সিদ্ধান্ত। এদিকে ওসি ও ইউএনওদের বদলীর নির্দেশনা নিয়ে সারাদেশে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। ওই নির্দেশ বাস্তবায়নে মাঠ প্রশাসনে বিশৃঙ্খলা দেখা দিবে বলে আশংকা প্রকাশ করেছেন অনেকেই। এর আগে একজন নির্বাচন কমিশনারও এই আশংকা প্রকাশ করেন। তিনি বলেছিলেন, বড় আকারে রদ বদল করা হলে পুলিশ-প্রশাসনে একটা বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হতে পারে। এ বিষয়ে জানাতে চাইলে অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, কোন ধরণের বিশৃঙ্খলার আশংকা নেই। একজন কর্মচারী যে উপজেলা বা জেলায় দায়িত্ব পালন করুক না কেন, তিনি সুষ্ঠুভাবেই দায়িত্ব পালন করবেন। বিষয়টা হয়তো ওই কমিশনারের ব্যক্তিগত মত। বদলীর বিষয়ে কমিশনই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নির্বাচনে সেনা মোতায়েন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অতিরিক্ত সচিব বলেন, যদি কমিশন মনে করে, সেনা মোতায়েনের প্রয়োজনীয়তা আছে, তাহলে সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে এ মুহূর্তে এমন কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে আমার জানা নেই। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ইতোমধ্যে মাঠ পর্যায়ে নির্দেশ পাঠানো হয়েছে বলে জানান অশোক কুমার দেবনাথ। তিনি বলেন, এটা পুলিশের ঊর্ধ্বতনদের ও আমাদের রিটার্নিং অফিসারদের বলেছি। জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব এসেছিলেন, সব বিষয়ে তাদের মেসেজ দেওয়া হয়েছে। কেউ যেন নিরাপত্তার ঘাটতিতে না ভোগে। এরপরও যদি কারো গাফিলতিতে কিছু হয়, তার বিরুদ্ধে ইসি খুব শক্ত ব্যবস্থা নিবে। সব প্রার্থীদের বডিগার্ড দেওয়া হবে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা তো সম্ভব হবে না। এতো বডিগার্ড দেওয়া যাবে না। তবে, নিরাপত্তার দায়িত্ব তো আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর। তারা নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারে, সেটাই আমাদের কাম্য। সকল প্রার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চায় নির্বাচন কমিশন। কতগুলো দল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ২৯টি দল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। নির্বাচনে ২ হাজার ৭১৩ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। আওয়ামী লীগ থেকে ৩০৪ জন মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন। সিইসির সঙ্গে বৈঠক করেছেন পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) প্রধান মনিরুল ইসলাম। শনিবার দুপুরে নির্বাচন ভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ইসি সচিব ও অতিরিক্ত সচিব উপস্থিত ছিলেন। গত বৃহস্পতিবার কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করেন জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, আইজিপি ও ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ। গত ৭ নভেম্বর সিইসি সঙ্গে আলাদা আলাদাভাবে বৈঠক করেন এসবি প্রধান, ডিজিএফআই মহাপরিচালক ও এনএসআই মহাপরিচালক। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণে দুই মাসের মিশন নিয়ে গত ২৯ নভেম্বর ঢাকায় পৌঁছেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) চার সদস্যের নির্বাচনী এক্সপার্ট টিম। ওই টিম আজ রবিবার বেলা ১১টায় সিইসির নেতৃত্বাধীন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এর আগে গত ২৯ নভেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠানোর বিষয়ে ইসির সঙ্গে বৈঠক করে ইইউ। দুইজন কর্মকর্তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দিয়েছে ইসি। আলাদা আলাদা দুটি প্রজ্ঞাপনে ইসি সচিবালয়ের সহকারী সচিব ও সাবেক ডেমরা থানা নির্বাচন কর্মকর্তা রাজিয়া সুলতানা এবং নাটোর জেলার লালপুর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুর রকিবকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দিয়েছে। ইসির সহকারী সচিব মোহাম্মদ শহীদুর রহমান স্বাক্ষরিত ওই দু’টি প্রজ্ঞাপন গত বৃহস্পতিবার জারি করা হয়েছে। তফসিল অনুযায়ী, প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বাছাই আজ ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাছাই চলবে। রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কমিশনে আপিল দায়ের ও নিষ্পত্তি ৫ থেকে ১৫ ডিসেম্বর এবং প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৭ ডিসেম্বর। রিটার্নিং কর্মকর্তারা প্রতীক বরাদ্দ করবেন ১৮ ডিসেম্বর। নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চলবে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত। আর ভোটগ্রহণ হবে ৭ জানুয়ারি। এক আসনে জাসদের দুই প্রার্থী ॥ নাটোর-১ আসনে জাসদের দুইজন প্রার্থী। তাদের মধ্য থেকে মো. মোয়াজ্জেম হোসেনের প্রার্থীতা বহাল রাখার অনুরোধ জানিয়েছে জাসদ।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com