শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১২:৫৮ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
দেশের সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে গেছে হাসিনার স্বৈরতন্ত্র: কূটনীতিকদের ইউনূস ভারতে নারী চিকিৎসককে ধর্ষণ-হত্যার প্রতিবাদে শাটডাউন কর্মসূচির ঘোষণা চিকিৎসকদের নলতা আহসানিয়া মিশন রেসিডেনসিয়াল কলেজের অধ্যক্ষের দুর্নীতি ॥ উত্তাল নলতা ॥ শিক্ষক কর্মচারীরা মতবিনিময় করলেন ডাঃ শহিদুল আলম ও চেয়ারম্যান আজিজুর রহমানের সাথে মহামারীর দ্বারপ্রান্তে গাজা আলোচনায় থাইল্যান্ড ॥ বন্দী থাকসিন মুক্ত হরিনগর বাজারে ক্ষতিগ্রস্ত দোকানদের মাঝে নগদ অর্থ প্রদান পাইকগাছায় একটি বাঁশের সাঁকো পারাপারে এলাকাবাসীর চরম ভোগান্তি মাথাভারি হচ্ছে প্রশাসনের ॥ বাড়ছে সরকারের দু:চিন্তা ডুমুরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান গাজী এজাজ আহমেদ এর পদত্যাগ দাবীতে-মানববন্ধন চাম্পাফুল ইউনিয়ন বিএনপির আয়োজনে শান্তি সমাবেশ অনুষ্ঠিত

নির্বাচন কমিশনার শাহাদৎ হোসেন \ দক্ষতা দেখাতে না পারা আমার অতৃপ্তি

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় শনিবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

জি এম শাহনেওয়াজ ঢাকা থেকে \ যোগ্য একজন টিম লিডারের অধীনে কাজ করতে না পারার যে তিক্ত অভিজ্ঞতা – কমিশনার হিসাবে তার জন্য সবচেয়ে অতৃপ্তি বলে মনে করেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. শাহাদাৎ হোসেন চৌধুরী। বলেন, একজন ব্যক্তির দক্ষতা (পারফরমেন্স) প্রমাণের জন্য দরকার ছিলো চৌকস অভিভাবক; যার শূন্যতা ছিল প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধিন এই কমিশনে। এ কারণে কর্মজীবনে যে মেধা ও যোগ্যতার মূল্যায়নে সার্চ কমিটি আমাকে সাংবিধানিক পদের জন্য নির্বাচন করেছিলো; সমন্বয়হীন অভিভাবকের কারণে ভালো পারফরমেন্স দেখাতে পারেনি। যার অপূর্ণতাই আমার জীবনের অতৃপ্তি। এর জন্য কাউকে দোষারোপ করতে চাই না। এই শূন্যতা দূর করার জন্য দরকার সচিবালয় আইন ২০০৯ এর সংস্কার। দৃষ্টিপাততে দেয়া একান্ত সাক্ষাতকারে নির্বাচন কমিশনে দায়িত্ব পালনের পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতার মূল্যায়ন করতে গিয়ে নির্বাচন কমিশনার ব্রি. জে. (অব.) শাহাদাৎ হোসেন চৌধুরী এসব অতৃপ্তির কথা জানান। তবে, এনআইডির ডিজির দায়িত্ব পালনের সময় কমিশনার হওয়ার স্বপ্ন জেগেছিলো তার মনে বলে স্বীকার করেন এই নির্বাচন কমিশনার। বলেন, যখন সাংবিধানিক পদে আসার আমন্ত্রন পেলাম; ওই সময়টাই ছিলো আমার জন্য অনেক পরিতৃপ্তির। নির্বাচন কমিশনার শাহাদৎ হোসেন চৌধুরী বলেন, কমিশনের একক সত্বা হিসাবে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং সকল নির্বাচন কমিশনারকে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া বাঞ্জনীয়। সচিবালয়ের উপর কারো একক কর্তৃত্ব কিংবা বিভাজিত মানষিকতা কমিশনের পারফরমেন্সকে এ্যাফেস্ট করে। এই ক্ষেত্রে সচিবালয় আইন, ২০০৯ এর সংস্কার প্রয়োজন রয়েছে বলে আমি মনে করি। এ বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে ইউ নোট এবং আলোচনার মাধ্যমে সুরহার করার চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি; এটা ছিলো দু:খজনক। তিনি বলেন, কমিশনে কি ধরণের আলোচনা হবে, আলোচনার যে বিচার্য্য বিষয়বস্তু হবে, – সেক্ষেত্রে শুধুমাত্র প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) নয়, কমিশনারদেরও মতামত প্রকাশের এখতিয়ার থাকা উচিত; কোন বিষয়গুলো আলোচনা হবে, কোনগুলো হবে না। এমনকি কোন ইস্যুতে কমিশনের সভা হওয়া উচিত, কোনটির জন্য উচিত না; এক্ষেত্রে পাঁচজন কমিশনারের মতামত থাকা বাঞ্জনীয়। এগুলো না থাকলে কমিশনারদের পারফরমেন্সকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আর সচিবের কারণে কমিশনের কাজে বাধা সৃষ্টি হয়নি; কারণ তিনি সিইসির কাছে দায়বদ্ধ। সচিবালয় যার কাছে দায়বদ্ধ; তিনি যদি যথাযথ না হন, – তাহলে কমিশনারদের কাজ করার সুযোগ সীমিত হয়ে পড়ে। কারণ সিইসি যতটুকু বলবেন অতটুকুই করবেন সচিব -এটা কাম্য নয়। এখানেই একটা শূন্যতা রয়েছে বলে কাজ করতে গিয়ে আমার মনে হয়েছে। সাবেক সেনাকর্মকর্তা এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, এতো সীমাবদ্ধতার মধ্যে আমি ব্যক্তিগতভাবে আমার সুনাম অক্ষুন্ন রাখার জন্য এবং অতীতে আমি যেটুকু অর্জন করেছিলাম – সেটা অব্যাহত রাখার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। দায়িত্ব পালনে সততা ও নিষ্ঠাকে বিকিয়ে দেইনি – এটা আমার আত্বতৃপ্তির জায়গা। নির্বাচন প্রসঙ্গে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, স্থানীয় সরকারের যে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনগুলো আমরা সম্পন্ন করেছি; সেগুলো খুবই ভালো হয়েছে। নারায়নগঞ্জ সিটি নির্বাচন (নাসিক)-ও খুব ভালো হয়েছে। জাতীয় সংসদ, উপজেলা পরিষদ কিংবা পৌরসভা যে নির্বাচনের কথায় বলি যদি ইউপি ও নাসিক নির্বাচনের মতো প্রত্যেকটি নির্বাচন করতে পারতাম, – তাহলে খুবই ভালো হতো। বরিশাল সিটি নির্বাচনের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, আমাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী এই নির্বাচনটি হয়নি -আরও ভালো হওয়া উচিত ছিল। এই জায়গায়তে একটু অতৃপ্তি আছে। নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য কি ধরণের পদ্ধতি অবলম্বন করা দরকার বলে আপনি মনে করেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের একার পক্ষে একটা অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং আইনানুগ নির্বাচন করা সম্ভব না। যদি নির্বাচন সংশ্লিষ্ট অংশীজন যারা আছেন, ওনাদের যার যার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে হবে। বিদায়ের আগে ইউপি ও নারায়নগঞ্জ সিটি -এই দুটি মডেল নির্বাচন হওয়ায় আমাদের জন্য অবশ্যই স্বস্তির ছিলো। প্রত্যেকটি নির্বাচন এমন হলে আরও ভালো লাগত বলে মত দেন তিনি। বলেন, এর পরও বলবো প্রত্যেকটি নির্বাচন ভালো করার জন্য আমাদের চেষ্টার ত্র“টি ছিল না। ইভিএম ও ব্যালটের মধ্যে কি ধরণের পার্থক্য খুঁজে পেয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, দৃড়ভাবে আমি বিশ্বাস করি, -সাম্প্রতিককালে যে ধরণের নির্বাচনী অনিয়ম হয়ে থাকে সেগুলোকে রোধ করার জন্য বা অনিয়মগুলোকে অ্যাডড্রেস করার জন্য ইভিএম অত্যন্ত ভালো একটা ডিভাইস বা যান্ত্রিক উদ্ভাবন। এটার সহায়তায় অনেক অনিয়ম বন্ধ করা সম্ভব। তবে, নির্বাচনে আঙ্গুলের ছাপ না উঠা কিংবা ভোট ধীরগতির ভোট হয়েছে -এটা কারিগরি বিষয়। এগুলোতে আমাদের অবশ্যই নজর দেয়া উচিত। এখানে খেয়াল রাখতে হবে ইলেকট্রিক ডিভাইসকে কম্প্রোমাইজ না করে কিভাবে এটা করা সম্ভব; সেটিও খতিয়ে দেখতে হবে। এটাকে সহজে পরিচালনা করার জন্য আরও জনবল প্রশিক্ষিত করা প্রয়োজন ছিলো। কিন্তু প্রাণ-সংহারী নভেল করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) কারণে এসব জায়গাগুলোতে আমরা একটু কম মনোযোগ দিতে পেরেছিলাম। আগামীতে যারা দায়িত্বে আসবেন তাদের অবশ্যই এই কার্যক্রমকে অব্যাহত রাখতে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের যারা শিক্ষকরা আছেন তাদেরকে প্রশিক্ষিত করার উদ্যোগ নেওয়া উচিত। পাশাপাশি সিটি করপোরেশনগুলোর স্টাফগুলোদের প্রশিক্ষিত করাও দরকার। এর মাধ্যমে ইভিএম পরিচালনায় প্রশিক্ষিত জনবলের অভাব হবে না। ইভিএম নিয়ে মানুষের যে ভুল ধারণা রয়েছে সেটা সঠিক না। বলা হয়, ভারতের মতো ইভিএমে ভিভিপিএটি কেনো নেই। বুঝতে হবে ভারতের এবং আমাদের ইভিএমে কারিগরি পার্থক্য রয়েছে। কারণ আমাদের ইভিএমে ডিজিটালি ভ্যারিফাইয়েবল অডিট ট্রেইল আছে। বলেন, একজন ভোটার ফিঙ্গার দেয়ার পর কনফর্ম করলে তার পুরো প্যানেলে মার্কাটি বড় আকারে ভেসে উঠে; সেটাই কিন্তু ইভিএমের প্রতিস্থাপন। তিনি বলেন, ইভিএমে কোনো নির্বাচনে চ্যালেঞ্জ হয়, সেক্ষেত্রেও সঠিক ভোটের ফল প্রমাণের জন্য খুবই সহায়ক ও কার্যকর এটি। কারণ ইভিএমে যে ম্যানেজম্যান্ট কার্ডটি রয়েছে সেখান থেকে প্রিন্টকপি নিয়েই কার কত ভোট রয়েছে সেটি দেখা যায়। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের একটি ওয়ার্ডে ইভিএমে ভোট নিয়ে চ্যালেঞ্জ হয়েছিল, পরবর্তীতে কোর্টের আদেশে যখন গণনা করা হয় তখন ফলাফলটি পরিবর্তন হয়ে যায়; এটা ইভিএমের ইতিবাচক দিক। শুরুতে অনেক বিরোধ থাকলেও ধীরে ধীরে এটা কমেছে। আমাদের কমিশনের মধ্যে কেউ কেউ ইভিএমের বিরোধী করলেও পরবর্তীতে ওনিই এটাতে ভোট হোক চেয়েছেন। তবে, জাতীয় সংসদসহ স্থানীয় নির্বাচন সর্বত্রই তাহলে ব্যালটের পরিবর্তে ইভিএমে ভোট নেয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়। যদি ওনারা ঐক্যমতে পৌঁছান তাহলে যন্ত্রে ভোট হতে পারে। তবে এই প্রযুক্তিটি ব্যালটের চেয়ে উত্তম সেটাই বলতে চেয়েছি।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com