এফএনএস: দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় ২১ জেলার যাত্রী ও পরিবহন বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌরুট হয়ে ফেরিতে পারাপার হয়। এতে দীর্ঘ সময় যানজটে আটকে ভোগান্তিও পোহাতে হয় যাত্রী-চালকদের। তবে দক্ষিণাঞ্চলের কোটি মানুষের স্বপ্নের পদ্মা সেতু চলতি বছরের জুনেই উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। এরইমধ্যে সেতু পারাপারে পরিবহনের টোল হার নির্ধারণ হয়েছে। গত মঙ্গলবার সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় বিভিন্ন পরিবহনের জন্য আলাদা আলাদা টোল হার নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। এতে দেখা গেছে, ফেরির চেয়ে সেতুতে গুনতে হবে বেশি টাকা। নানা জল্পনা-কল্পনার পরে পরিবহন পারাপারে দাম নির্ধারণ করে দেওয়ায় বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌরুটে যাতায়াতকারীদের মধ্যে তৈরি হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কিছু পরিবহন চালক এতে ক্ষোভ প্রকাশ করলেও নৌপথের দুর্ভোগ এড়াতে দ্রুত যাতায়াত হিসেবে এই টোলকে ইতিবাচক হিসেবেও দেখছেন অনেকে। তবে টোলের মূল্য আরও একটু কম হওয়ার দাবি সচেতন মহলের। বরিশাল থেকে ঢাকাগামী যাত্রীবাহী পরিবহনের চালক রহমত উলাহ বলেন, আমাদের প্রায়ই ঘাটে এসে যানজটে পড়ে থাকতে হয়। ফলে টাকা কিছুটা বেশি হলেও দ্রুত যাতায়াত করতে পারবো বলে মনে হয়েছে। তবে আমাদের তেমন সমস্যা হবে না। কারণ আমাদের যাত্রীদের ভাড়ার পরিমাণ একটু বেড়ে যাবে। এখন মাদারীপুর থেকে ঢাকার নয়াবাজার জনপ্রতি ভাড়া ২৫০ টাকা, টোল বাড়ায় ভাড়া অন্তত ৫০ টাকা বেড়ে যাবে। তবে আরও একটু কম হলে ভালো হতো। জুয়েল হাওলাদার নামে এক যাত্রী বলেন, ফেরির চেয়ে সেতুতে টোল বাড়ানো ঠিক হয়নি। আমাদের কাক্সিক্ষত পদ্মা সেতু হয়েছে এটা খুবই ভালো দিক। তবে টোলের যে হার দেখলাম এতে আমাদের আগামীতে চলাচল নিয়ে দুশ্চিন্তা বেড়েছে। কারণ, পরিবহন মালিকরা ভাড়া বাড়িয়ে দিবে দ্বিগুণ। এদিকেও সড়ক বিভাগের লক্ষ্য রাখতে হবে। যাতে পূর্বের ভাড়ার চেয়ে আকাশচুম্বী যেন না হয়। মোটরসাইকেলচালক সুমন বলেন, ঘাটে দীর্ঘ সময় আটকে থাকতে হয়। এবার ঈদের যে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে, তার চেয়ে টোলে একটু ভাড়া বেশি হলেও দুর্ভোগ তা হবে না। আমাদের দীর্ঘদিনের দুঃখ তো ঘুচলো। এরপরও টোলের দাম আরও একটু কমানোর দাবি জানাচ্ছি। ফেরিঘাটের ট্রাক শ্রমিক সমিতির সভাপতি ফারুক হোসেন বলেন, ফেরির সঙ্গে সেতুর মূল্য মিল রাখা উচিত ছিল। কিন্তু ফেরির চেয়ে প্রতিটি যানবাহনে মূল্য ধরা হয়েছে বেশি। বিষয়টি ঠিক হয়নি। আমরা চাই, সেতুর জন্য নির্ধারিত টোলের মূল্য পুনর্বিবেচনা করবে সেতু ও সড়ক বিভাগ। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) বাংলাবাজার ঘাটের ব্যবস্থাপক মো. সালাউদ্দিন বলেন, আমরা মোটরসাইকেল প্রতি ভাড়া নিই ৭০ টাকা সেখানে সেতুতে ১০০ টাকা, কার ও জিপে নিই ৫০০ টাকা সেখানে সেতুতে ৭৫০ টাকা, পিকআপে নিই ৮০০ টাকা তা সেতুতে ১২০০ টাকা, মাইক্রোবাসে নিই ৯৮০ টাকা সেখানে সেতুতে ১৩০০ টাকা, ছোট বাসে নিই ৮৬০ টাকা সেখানে সেতুতে ১৪০০ টাকা, মাঝারি বাসে নিই ১২০০ টাকা সেখানে সেতুতে ২০০০ টাকা, বড় বাসে নিই ১৭১০ টাকা, সেখানে সেতুতে ২ হাজার ৪০০ টাকা, ছোট ট্রাকে (৫ টন) নিই ১৪০০ টাকা সেখানে সেতুতে ১৬০০ টাকা, মাঝারি ট্রাকে (৫-৮ টন) নিই ১৮৫০ টাকা সেখানে সেতুতে ২১০০ টাকা, বড় ট্রাকে (৩-৪ এক্সেল পর্যন্ত) নিই ৫৬০০ টাকা, সেখানে সেতুতে ৬০০০ টাকা নেওয়া হয়। এতে ফেরির তুলনায় সেতুতে একটু বেশি খরচ পড়বে। জুনের শেষের দিকে পদ্মা সেতু যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এখন উদ্বোধন অনুষ্ঠানের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতির কাজও চলছে। এদিকে পদ্মা সেতুর টোল আদায়কারী ও সেতুর রক্ষণাবেক্ষণে ঠিকাদার নিয়োগ করেছে সেতু বিভাগ। এ কাজ পেয়েছে কোরিয়া এক্সপ্রেস করপোরেশন (কেইসি) ও চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি)।