রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৩২ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::

পাকিস্তানের হৃদয় ভেঙে জিম্বাবুয়ের দুর্দান্ত জয়

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২৭ অক্টোবর, ২০২২

স্পোর্টস ডেস্ক \ পেন্ডুলামের মতো দুলতে থাকা ম্যাচের ভাগ্য গড়াল শেষ ওভারে। প্রতিটি বলের পরতে পরতে ছড়াল উত্তেজনা। প্রথমবার বিশ্বকাপের ম্যাচ খেলতে নেমে স্নায়ুর চাপ ধরে রেখে চমৎকার বোলিং উপহার দিলেন ব্র্যাড ইভান্স। ফিল্ডিংও হলো দারুণ। জিম্বাবুয়ে মাতল অসাধারণ এক জয়ের উল­াসে। আরেকটি হৃদয় ভাঙা হারের বেদনায় পুড়ল পাকিস্তান। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভে শেষ ওভারের রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ে পাকিস্তানকে ১ রানে হারাল জিম্বাবুয়ে। পার্থে বৃহস্পতিবার স্রেফ ১৩০ রানের পুঁজি নিয়ে সাবেক চ্যাম্পিয়নদের তারা থামিয়ে দিল ১২৯ রানে। শেষ ওভারে জয়ের জন্য পাকিস্তানের দরকার ছিল ১১ রান। বড় ভরসা হয়ে টিকে ছিলেন মোহাম্মদ নাওয়াজ। ভারতের বিপক্ষে শেষ ওভারে বোলিং করে তিনি হয়েছিলেন খলনায়ক। এবার তার সামনে সুযোগ আসে শেষের নায়ক হওয়ার। ইভান্সের প্রথম বলে নাওয়াজ খেলেন এক্সট্রা কাভার দিয়ে। বাউন্ডারি হবে বলেই ধারণা করা হচ্ছিল। তবে ক্রেইগ আরভিন দুর্দান্ত ফিল্ডিংয়ে বাঁচান এক রান, আসে ৩। পরের বলে চার মেরে দেন মোহাম্মদ ওয়াসিম। তৃতীয় বলে তিনি এক রান নিয়ে স্ট্রাইকে দেন নাওয়াজকে। ৩ বলে চাই ৩- পাকিস্তানের সামনে সহজ সমীকরণ। কিন্তু চতুর্থ বলে ব্যাটই ছোঁয়াতে পারেননি নাওয়াজ। পরের বলে তিনি ধরা পড়েন মিড অফে আরভিনের হাতে। শেষ বলে ২ রান নিলে ম্যাচ গড়াতো সুপার ওভারে। অফ স্টাম্পের বাইরের বল লং অনে খেলে দ্বিতীয় রানের জন্য ছোটেন শাহিন শাহ আফ্রিদি। সিকান্দার রাজার থ্রোয়ে শুরুতে বল ঠিকমতো ধরতে না পারলেও পরক্ষণে নিজেকে সামলে নিয়ে স্টাম্প ভেঙে দেন রেজিস চাকাভা। রান আউট! জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটাররা মেতে ওঠে বাঁধভাঙা উল­াসে। পাকিস্তানের ডাগআউটে তখন রাজ্যের নীরবতা। এই সংস্করণে দল দুটির ১৮ বারের মুখোমুখি লড়াইয়ে জিম্বাবুয়ের দ্বিতীয় জয় এটি, আর দুটিই সবশেষ তিন ম্যাচের মধ্যে। গত বছরের এপ্রিলে হারারেতে ১১৮ রানের পুঁজি নিয়ে পাকিস্তানকে ৯৯ রানে গুটিয়ে দিয়েছিল তারা। ভারতের কাছে শেষ বলে হেরে বিশ্বকাপ শুরুর পর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেও একইভাবে হেরে পাকিস্তানের সেমি-ফাইনালের আশা আরও ফিকে হয়ে গেল। বিশ্বকাপে ফিরে প্রাথমিক পর্ব মিলিয়ে এবার তিনটি জয় পেল জিম্বাবুয়ে। তিনটিরই ম্যাচের সেরা সিকান্দার রাজা! এই অফ স্পিনিং অলরাউন্ডার পাকিস্তানের বিপক্ষে ব্যাটিংয়ে ব্যর্থ হলেও দারুণ বোলিংয়ে ৪ ওভারে ২৫ রান দিয়ে নেন গুরুত্বপূর্ণ তিনটি উইকেট। সমান রান দিয়ে ইভান্সের প্রান্তি ২টি। উইকেটে গতি আর বাউন্স মিলিয়ে পেসাররা যেমন সুবিধা পেয়েছেন, স্পিনারদের জন্যও ছিল সহায়তা। ম্যাচের প্রথম অংশের পর জিম্বাবুয়েকে নিয়ে বাজি ধরার লোক হয়তো খুব একটা ছিল না। ব্যাটিংয়ে একটা পর্যায়ে ৩ উইকেটে ৯৫ থেকে তাদের স্কোর হয়ে যায় ৭ উইকেটে ৯৫! ইভান্সের শেষের ১৫ বলে ১৯ রানের সুবাদে ১৩০ পর্যন্ত যেতে পারে তারা। জিম্বাবুয়ে ব্যাটিংয়ে নামে টস জিতে। আগের ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ঝড়ো ইনিংস খেলা ওয়েসলি মাধেভেরেকে এবার ওপেনিংয়ে নামানো হয় আরভিনের সঙ্গে। কৌশলটা দারুণ কাজে লাগে। প্রথম ওভারে শাহিন শাহ আফ্রিদিকে টানা দুটি চার মারেন মাধেভেরে। পরের ওভারে আরভিন টানা দুটি চার হাঁকান নাসিম শাহকে। ৪ ওভারে জিম্বাবুয়ে তুলে ফেলে ৩৮ রান। এরপর দ্রুতই তারা হারায় দুই ওপেনারকে। আরভিনকে (১৯ বলে ১৯) শর্ট বলে ফিরিয়ে ৪২ রানের শুরুর জুটি ভাঙেন হারিস রউফ। মাধেভেরেকে (১৩ বলে ১৭) এলবিডব্লিউ করে প্রথম শিকার ধরেন ওয়াসিম। ২০০৭ আসরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ভুসি সিবান্দা ও ব্রেন্ডন টেইলরের ৭৪ রানের শুরুর জুটির পর বিশ্বকাপে জিম্বাবুয়ের সেরা উদ্বোধনী জুটি এটি। চারে নেমে দারুণ একটি চার মারলেও টিকতে পারেননি মিল্টন শুম্বা। ৯ রানে জীবন পেয়ে দলকে এগিয়ে নেন শন উইলিয়ামস। আরেকবার তিনি জীবন পান ২৪ রানে। শাদাব খানের ওই ওভারেই শুরু জিম্বাবুয়ের নাটকীয় ধসের। উইলিয়ামস ২৮ বলে ৩১ রান করে ফিরতি ক্যাচ দেন বোলারকে। ওপেনিং থেকে এ দিন ছয় নম্বরে নেমে চাকাভা গোল্ডেন ডাক এর স্বাদ পান শাদাবের পরের বলে। স্লিপে এক হাতে দুর্দান্ত ক্যাচ নেন বাবর আজম। পরের ওভারে পরপর দুই বলে সিকান্দার রাজা ও লুক জঙ্গুয়েকে বিদায় করেন মোহাম্মদ ওয়াসিম। ৬ বলের মধ্যে শূন্য রানে পড়ে ৪ উইকেট! সেখান থেকে ইভান্সের ইনিংসে লড়াইয়ের পুঁজি। রায়ান বার্ল ১৫ বলে করেন ১০। পেসার ওয়াসিম ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে ২৪ রানে নেন ৪ উইকেট। শাদাবের প্রাপ্তি তিনটি। রান তাড়ায় পাকিস্তানকে শুরু থেকে বেঁধে রাখেন জিম্বাবুয়ের বোলাররা। প্রথম দুই ওভারে আসে কেবল ৩ রান। এরপর বাবরকে ফিরিয়ে সুর বেঁধে দেন ইভান্স। পাকিস্তান অধিনায়ক ৯ বলে ৪ রান করে ধরা পড়েন পয়েন্টে। টিকতে পারেননি মোহাম্মদ রিজওয়ানও। ব্লেসিং মুজারাবানির বল স্টাম্পে টেনে আনেন টি-টোয়েন্টি র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ ব্যাটসম্যান। পাওয়ার প্লেতে পাকিস্তানের রান ছিল ২ উইকেটে ২৮। অষ্টম ওভারে ইফতিখার আহমেদের বিদায়ে স্কোর হয়ে যায় ৩ উইকেটে ৩৬। চতুর্থ উইকেটে পঞ্চাশোর্ধ জুটিতে দলকে এগিয়ে নেন শান মাসুদ ও শাদাব খান। এক পর্যায়ে তাদের দরকার ছিল ৩৯ বলে ৪৩ রান, হাতে উইকেট ৭টি। এরপরই চিত্র পাল্টে দেন রাজা। পরপর দুই বলে ফিরিয়ে দেন শাদাব ও হায়দার আলিকে। নিজের পরের ওভারে এসে ম্যাচের সর্বোচ্চ স্কোরার মাসুদকেও (৪৪) বিদায় করেন তিনি। শেষ তিন ওভারে পাকিস্তানের দরকার ছিল ২৯ রান। নাওয়াজ ও ওয়াসিম জাগান আশা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অল্পের জন্য পারলেন না তারা। সংক্ষিপ্ত স্কোর: জিম্বাবুয়ে: ২০ ওভারে ১৩০/৮ (মাধেভেরে ১৭, আরভিন ১৯, শুম্বা ৮, উইলিয়ামস ৩১, রাজা ৯, চাকাভা ০, বার্ল ১০*, জঙ্গুয়ে ০, ইভান্স ১৯, এনগারাভা ৩*; আফ্রিদি ৪-০-২৯-০, নাসিম ৪-০-৩৪-০, ওয়াসিম ৪-০-২৪-৪, রউফ ৪-১-১২-১, শাদাব ৪-০-২৩-৩)। পাকিস্তান: ২০ ওভারে ১২৯/৮ রিজওয়ান ১৪, বাবর ৪, মাসুদ ৪৪, ইফতিখার ৫, শাদাব ১৭, হায়দার ০, নাওয়াজ ২২, ওয়াসিম ১২*, আফ্রিদি ১; এনগারাভা ৪-০-২৪-০, মুজারাবানি ৪-০-১৮-১, ইভান্স ৪-০-২৫-২, রাজা ৪-০-২৫-৩, জঙ্গুয়ে ১-০-১০-১, উইলিয়ামস ২-০-১৫-০, বার্ল ১-০-৭-০)। ফল: জিম্বাবুয়ে ১ রানে জয়ী। ম্যান অব দা ম্যাচ: সিকান্দার রাজা।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com