শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ০১:৫৯ অপরাহ্ন

বছর শেষে করোনা সংক্রমণ নিয়ে নতুন আতঙ্ক

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় সোমবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২২

জি এম শাহনেওয়াজ ঢাকা থেকে \ বছর শেষে ফের আতঙ্ক বাড়াচ্ছে নভেল করোনাভাইরাস (কভিড-১৯)। তবে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই বলে মন্তব্য করেছেন করোনা বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু চীন ও ভারতে করোনায় কি ধরণের চোখ রাঙাচ্ছে সে দিকে সু-দৃষ্টি রেখে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। এই পরিস্থিতির মধ্যে কভিড হাসপাতালসহ সহায়ক প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রস্তুত থাকতে নিদের্শনা এসেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে। এর ফলে দেশেও করোনা মহামারি নিয়ে নতুন উদ্বেগের কথা ফের আলোচনায় উঠে এলো। বলা হচ্ছে, নতুন সংক্রমণের ধরন ওমিক্রমেনর চেয়ে শক্তিশালী। চীনের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, বিএফ-৭ নামের এ নতুন ধরন অমিক্রনের চেয়েও চার গুণ বেশি সংক্রামক। এ ধরন কম সময়ের মধ্যে রোগীকে আক্রান্ত করে। এদিকে, চীন ও ভারতে লকডাউনের আতঙ্কে ভুগছে সাধারণ মানুষ। এর মাঝেই বছরের শেষ ‘মন কি বাত’-এ অনুষ্ঠানে খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আমজনতাকে মাস্ক পরতে, নিয়মিত হ্যান্ড স্যানেটাইজার ব্যবহার করে হাত ধোওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। আরও বলেছেন, করোনার বিরুদ্ধে মোকাবিলার জন্য আয়ুর্বেদে বিশ্বাস রাখুন। উৎসবে আনন্দে মাতুন কিন্তু সতর্ক থাকুন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক আহমেদুল কবীর এ প্রসঙ্গে বলেছেন, চীনে বিএফ-৫এর নতুন ধরন বিএফ-৭ শনাক্ত হয়েছে। ধরনটি অমিক্রনের চেয়ে শক্তিশালী। কম সময়ে বেশি মানুষকে এই ধরন আক্রান্ত করতে পারে। যাঁরা টিকা নেননি, তাঁদের দ্রুত টিকা নিতে হবে। প্রাপ্ত তথ্যমতে, করোনাভাইরাসের একটি ধরন ওমিক্রন। ওমিক্রনের একটি উপ-ধরন বিএ-৫। বিএ-৫ এর একটি উপধরন বিএফ-৭। চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতে এই নতুন উপধরন শনাক্ত হয়েছে। বিএফ অন্য যেকোনো উপধরনের চেয়ে দ্রুত মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে। এটাই উদ্বেগের কারণ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের যথাযথ প্রস্তুতি নেওয়া শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে ডিএনসিসি কোভিড হাসপাতাল, কোভিড ল্যাব, নিপসম, আইইডিসিআর এবং আই পিএইচএনের সঙ্গে মিটিং করে করোনাভাইরাস প্রতিরোধের জন্য প্রস্তুতি নিতে নিদের্শনা দিয়েছে অধিদপ্তর। এছাড়া দেশের সব হাসপাতালগুলোকে যেখানে আইসোলেশন আছে সেগুলোকে প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে। সংক্রমণ ব্যাধি সেন্টারকেও (সিডিসি) নতুন এই ভ্যারিয়েন্টের বৈশিষ্ট্য, চিকিৎসা নিয়ে গাইডলাইন তৈরি করার জন্য বলা হয়েছে। এদিকে, চলতি বছরের এপ্রিল মাসের পর আর সংক্রমণের তেমন উর্দ্ধোগতি দেখা যায়নি চীনে। ৬ মাস পর আবার স্বমহিমায় কোভিড ফিরে আসছে বলে মনে করছেন চিনের বিশেষজ্ঞরা। গত কয়েকদিনে ২৮ হাজার নতুন সংক্রমণের খবর সামনে এসেছে। গুয়ানডং প্রদেশেই শুধু আক্রান্ত হয়েছেন ১৬ হাজার মানুষ। রাজধানী বেজিং-এও বাড়ছে সংক্রমণ। মঙ্গলবার পর্যন্ত বেজিং-এ আক্রান্তের সংখ্যা একধাক্কায় বেড়ে হয়েছে ১৪৩৮। এর আগের দিন সারা দেশে নতুন সংক্রমণ হয়েছে ২৪ হাজার ২১৫। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে, সর্বশেষ এক সপ্তাহে ভারতে নতুনভাবে আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ১৩০ জন। ভারতের গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হচ্ছে, ইতিমধ্যে ভারতে উপধরন বিএফে আক্রান্ত চারজন শনাক্ত হয়েছে। এঁদের দুজন ওডিশা ও দুজন গুজরাট রাজ্যের। প্রতিবেশী দেশ ভারতে সংক্রমণ বাড়লে বা নতুন ধরন শনাক্ত হলে উদ্বেগ বাড়ে বাংলাদেশে। যদিও বাংলাদেশে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম। গত শনিবার পর্যন্ত সাতজন নতুন আক্রান্তের তথ্য দিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এর আগের দিন এই সংখ্যা ছিল ৮। এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক আহমেদুল কবীর বলেন, সাতজন বা আটজন সাত হাজার বা আট হাজার হতে বেশি সময় না-ও লাগতে পারে। মনে রাখতে হবে, চীনের উহানের গুটি কয়েক মানুষের কাছ থেকে সারা বিশ্বে করোনা ছড়িয়েছিল। করোনা নিয়ন্ত্রণে সরকার গঠিত জাতীয় কারিগরি পরার্মশক কমিটি সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ শহিদুল­া বলেন, এই মুহুর্তে যতটুকু বৈজ্ঞানিক তথ্য-উপাত্ত আছে, তাতে দেখা যায় যে আমাদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এখন আমাদের যেটা দরকার, সেটা হলো বুস্টার টিকাটা নেয়ার কথা নেননি (৭ বছরের উপরে যত জনগোষ্ঠী আছে) তাদের দ্রুত সেটা নেয়া। আর ১৮ বছরের উপরে যারা সবাইর না; যাদের কভিড ঝুঁকি রয়েছে তারা এবং বুস্টার ডোজ নেননি তাদের এটা নিয়ে নেওয়া জরুরি। যাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে, পাবলিক প্লেসে যাওয়ার আগে অবশ্যই মাস্কটা পরে নিবেন এবং সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে চলবেন। তিনি বলেন, প্রতিনিয়ত আমাদের নজরদারিতে রাখতে হবে চীন ও ভারতে কভিডের কি ধরণের সংক্রমনের ধরণ ও পরিস্থিতি বিরাজ করছে; সেদিকে তœীক্ষ নজর রাখতে হবে। আর সংক্রমিত দেশ থেকে যারা ভ্রমণ ভিসায় কিংবা রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে বাংলাদেশে আসবেন তাদের স্কিনিংয়ের ব্যবস্থা করা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৮৮ শতাংশ করোনা টিকার প্রথম ডোজ পেয়েছেন। দ্বিতীয় ও তৃতীয় ডোজ পেয়েছেন যথাক্রমে ৭৪ ও ৩৮ শতাংশ মানুষ।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com