সোমবার, ২২ জুলাই ২০২৪, ০১:২৭ পূর্বাহ্ন

বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর সুখ, শান্তি, কল্যাণ, অগ্রগতি ও ভ্রাতিত্ববোধ কামনা করে \ আখেরী মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হলো বার্ষিক ওরছ শরীফ

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় সোমবার, ১৪ মার্চ, ২০২২

মোঃ রফিকুল ইসলাম, বিশেষ প্রতিনিধি\ মানবজাতির কল্যাণ, সমৃদ্ধি এবং ইহকালে শান্তি ও পরকালের মাগফিরাত এবং বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর সুখ-শান্তি ও কল্যাণ কামনা করে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হলো সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার নলতা শরীফে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, সমাজ সংস্কারক, বিশিষ্ট দার্শনিক, সাহিত্যিক, নলতা কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশনসহ অসংখ্য প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা, সুফী-সাধক, পীরে কামেল সুলতানুল আউলিয়া কুতুবুল আকতাব গওছে জামান আরেফ বিল­াহ হজরত শাহ্ছুফী আলহাজ্জ খানবাহাদুর আহ্ছানউল­া (রহ.) এঁর ৫৮ তম বার্ষিক ওরছ শরীফ। গতকাল ১৩ মার্চ রবিবার বাদ ফজর থেকে মিলাদ শরীফ ও আলোচানা শুরু হয়ে সকাল ৯ টায় আখেরী মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। নলতা কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশনের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় আয়োজিত আখেরি মোনাজাতে মিশনের সভাপতি সাতক্ষীরা-৩ আসনের সংসদ সদস্য সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী আলহাজ্জ অধ্যাপক ডাঃ আ ফ ম রুহুল হক’র সভাপতিতে নলতা শরীফ শাহী জামে মসজিদের খতিব আলহাজ্জ মাওলালা মোঃ আবু সাঈদ প্রায় আধাঘন্টা ব্যাপি আখেরী মোনাজাত পরিচালনা করেন। লাখ লাখ মুসলি­র আমিন, আল­াহুমা আমিন ধ্বনিতে প্রকম্পিত হয়ে উঠে নলতা শরীফ। মোনাজাতে আত্মশুদ্ধি ও নিজ নিজ গুনাহ মাফের পাশাপাশি দুনিয়ার সব বালা-মুসিবত থেকে হেফাজত করার জন্য দু’হাত তুলে মহান আল­াহু রাব্বুল আলামিনের দরবারে রহমত প্রার্থনা করা হয়। এ সময় আমিন, আল­াহুম্মা আমিন ধ্বনিতে আকাশ-বাতাস মুখখরিত করে মহামহিম ও দয়াময় আল­াহু রাব্বুল আলামিনের সন্তুষ্টি লাভের আশায় লাখ লাখ মুসলি­ আকুতি জানান। এ সময় কারো দুই চোখ ছিল মুদিত, কারো দৃষ্টি ছিল সুদ‚রে প্রসারিত। আর থরথর কম্পমান দুই ঠোঁটে মৃদুস্বরে উচ্চারিত হয়েছে আমিন আমিন ধ্বনি। জীবনের সব পাপ-তাপ থেকে মুক্তির জন্য, পরম দয়াময় আল­াহর দরবারে অনুনয়-বিনয় করে পানাহভিক্ষা করছিলেন তারা। আখেরি মোনাজাতকে কেন্দ্র করে নলতা শরীফ এলাকা ধর্মীয় উৎসবের নগরীতে পরিণত হয়। ফজরের নামাজের পরই নলতা শরীফসহ আশপাশ এলাকা জনসমুদ্রে পরিণত হয়। সামাজিক যোগাযোগ ফেসবুক লাইফে স¤প্রচার করায় বাসাবাড়ি, দোকান, অফিস, আদালত যে যেখান থেকে পেরেছেন দেশ-বিদেশের মুসলমানরা মোনাজাতে শরিক হন। পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও মোনাজাতে অংশ নিয়েছেন। আখেরি মোনাজাতের জন্য খবরের কাগজ, পাটি, সিমেন্টের বস্তা ও পলিথিন বিছিয়ে যে যেভাবে পেরেছে বসে পড়েন। মোনাজাত শেষ হওয়ার পরপরই বিভিন্ন স্থান থেকে আসা মানুষ নিজ গন্তব্যে পৌঁছার চেষ্টা শুরু করে। আগে যাওয়ার জন্য মুসলি­রা তাড়াহুড়ো করতে শুরু করে। এতে সাতক্ষীরা কালিগঞ্জ সড়ক এবং সংযোগ সড়কগুলোতে সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজট। পবিত্র আখেরী মোনাজাতের শুরুতে পবিত্র কোরআন তেলোয়াত করেন, কুলিয়া জামে মসজিদের ক্বারী মো. কবিরুল ইসলাম। মিলাদ শরীফ ও ফাতেহা পাঠ করেন, হাফেজ মাওলানা মুফতি আশিকুর রহমান। আলোচনা করেন, আলহাজ্জ এ এফ এম এনামুল হক, মহা পরিচালক- খানবাহাদুর আহ্্ছানউল­া ইনস্টিটিউট, আবু তৈয়ব মোঃ মাহবুবে খোদা- হবিগঞ্জ আহ্্ছানিয়া মিশন, অধ্যাপক হাফেজ হাফিজুর রহমান-খতিব, গুলশান-১ জামে মসজিদ ঢাকা। সভাপতির বক্তব্য রাখেন, আলহাজ্জ অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক, এম.পি। গজল পরিবেশন করেন, মোঃ মানছুরুর রহমান, মোঃ ফিরোজ আলম, মোঃ মাসুম বিল­াহ, আবতাব হোসেন বাচ্চু, মহানগর আহ্্ছানিয়া মিশন, মোঃ আনিছুর রহমান। ভক্তের পত্র থেকে পাঠ করেন, আলহাজ্জ রাশেদ আহমেদ। কেয়াম পরিবেশন করেন, মোঃ আব্দুর রহমান, হবিগঞ্জ আহ্্ছানিয়া মিশন। এছাড়াও নলতা কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশনের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্জ মোঃ এনামুল হক, কেন্দ্রীয় ও দেশ-বিদেশ থেকে আগত আহ্ছানিয়া শাখা মিশনের কর্মকর্তা ও সদস্যবৃন্দ, শিক্ষকবৃন্দ, ব্যবসায়ীবৃন্দ, জেলা, উপজেলা, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার উর্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ, ইলেকট্রনিক্স ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকবুন্দসহ বিভিন্ন শ্রেনীর পেশার পীর কেবলার ভক্তবৃন্দ আখেরী মোনাজাতে অংশত্রহণ করেন। আখেরি মোনাজাতে কোরআন-হাদিসের আলোকে সহজ-সরল ভাষায় নিখুঁতভাবে আলোচনা করা হয়। পরিপূর্ণ ইসলামের মধ্যে নিহিত যে, শরিয়ত, তরিকত, হাকিকত ও মারেফত রয়েছে তার ওপর। উক্ত ৩দিন ব্যাপী ওরছ শরীফে আগতদের মধ্যে দেখেছি আনন্দ, উৎসাহ, উদ্দীপনা। দেখেছি ওরছ শরীফের সুস্বাদু তাবারক খাবার পর তাদের চোখে মুখে পরিতৃপ্তির ছাপ। কোন একজন মানুষও যেন তাবারক না খেয়ে যায়, সবাই যেন এক লোকমা তাবারক খেয়ে যেতে পারে, কোনরকম যেন তাদের অসুবিধা না হয় সে ব্যাপারে সেই ব্যবস্থা করে মিশন কর্তৃপক্ষ। আল­াহর অশেষ রহমত ও বরকতে কোথাও একটু টান বা গরমিল দেখা যায় নাই। ৩দিন এভাবেই খানাপিনা চলেছে বিরামহীন। এই মহা নিয়ামত ও বরকতপূর্ণ তাবারক খেয়ে যে, কত মানুষের জটিল ও কঠিন অসুখ-বিসুখ, রোগ-শোক, জরা-ব্যাধি বালা-মসিবত, বদজীন-ভূতের তাছির থেকে মুক্তি পাওয়ার আশায়ও অনেকে এই তাবারুক খেয়েছেন বলেও জানা গেছে। ৩দিন ব্যাপী এই পবিত্র ওরছ শরীফ মহান আল­াহর অশেষ রহমতে সুন্দর ও সুচারুরূপে সম্পন্ন হয়েছে বলে জানান, মিশনের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্জ মোঃ এনামুল হক ও হিসাব রক্ষক মোঃ এবাদুল হক। আখেরি মোনাজাত শেষে বেলা ১১ টা থেকে নলতা শরীফ শাহী জামে মসজিদের নলতা কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশনের বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com