এফএনএস : বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবার মূল্য নির্ধারণে গড়িমসি করা হচ্ছে। আর সরকার নির্ধারিত মূল্য না থাকায় বেসরকারি হাসপাতালগুলো উন্নত যন্ত্রাংশ ও সেবার কথা বলে ইচ্ছেমতো রোগীর স্বজনদের পকেট কাটছে। অথচ সরকার সারা দেশে বেসরকারি হাসপাতাল, রোগ নির্ণয় কেন্দ্র ও ক্লিনিকের সেবার মূল্য তালিকা, ক্যাটাগরি ও চিকিৎসার সরঞ্জামাদির মানীকরণের জন্য কমিটিও করেছিল। ওই কমিটির দুই মাসের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবার মূল্য নির্ধারণের সময়সীমার কথা বলা হলেও দেড় বছরেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। সরকারকে ওই কোনো সুপারিশই দিতে পারেনি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, আধুনিক রোগ নির্ণয়কারী পরীক্ষা এমআরআই (ম্যাগনেটিক রিজোন্যান্স ইমেজিং)। মস্তিষ্কের এমআরআই করতে রাজধানীর বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে মূল্য ধরা হয় ৭ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা। আর সারা দেশের বেসরকারি হাসপাতাল ও রোগ নির্ণয় কেন্দ্রে একই রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা সেবার জন্য সেবাপ্রত্যাশীরা নানা অংকের মূল্য দিতে হচ্ছে। রোগ নির্ণয়ের একই পরীক্ষার জন্য বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন অংকের টাকা নেয়া হয়। যদিও ওই হাসপাতালগুলো সাশ্রয়ী মূল্যে উন্নত চিকিৎসাসেবা দেয়ার জন্য রোগীদের প্রতিনিয়ত প্রতিশ্র“তি দিয়ে আসছে। কিন্তু হাসপাতাল ও রোগ নির্ণয় কেন্দ্রগুলোর মূল্য তালিকা ও গ্রাহকসেবা কেন্দ্রগুলোতে প্যারানাসাল সিনুস বা পিএনএসের কম্পিউটারাইজড টমোগ্রাফির (সিটি স্ক্যান) জন্য হাসপাতাল ভেদে ৮ হাজার থেকে ১৬ হাজার টাকা নেয়া হয়। পেটের (হোল অ্যাবডমিন) কম্পিউটারাইজড টমোগ্রাফির জন্য নেয়া হয় ১২ হাজার থেকে ২৪ হাজার টাকা। সিজারিয়ান সেকশনের জন্য রাজধানীর বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে ৩-৪ দিনের প্যাকেজ রয়েছে। ওয়ার্ড থেকে স্যুট পর্যন্ত বিভিন্ন মূল্যের প্যাকেজে ৬০ হাজার টাকা থেকে আড়াই লাখ টাকার বিল করা হয়। তার মধ্যে হাসপাতাল ভেদে ১০ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা পর্যন্ত ওষুধ দেয়া হয়। সূত্র জানায়, বিগত ২০২০ সালের ডিসেম্বরে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিবকে (হাসপাতাল) সভাপতি ও যুগ্ম সচিবকে (বেসরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা) সদস্য সচিব করে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ ১০ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে। সরকার সারা দেশের বেসরকারি হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ক্লিনিকগুলোর সেবার মূল্য তালিকা, ক্যাটাগরি ও চিকিৎসার সরঞ্জামাদির মানীকরণের জন্য ওই কমিটি গঠন করে। সেজন্য কমিটিকে দুই মাসের সময়সীমাও বেঁধে দেয়া হয়। কিন্তু ওই কমিটি এ পর্যন্ত মাত্র একটি মাত্র সভায় মিলিত হয়েছিল। আর ওই প্রথম সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কোনো কাজই হয়নি। কমিটির প্রথম সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন পর্যায়ের বেসরকারি হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিকের বর্তমান মূল্য তালিকা সদস্যদের দেয়ার কথা ছিল। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কোন ধরনের যন্ত্রাংশ রয়েছে তার তালিকাও দেয়ার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু কাগজে-কলমে কমিটি সিদ্ধান্ত নিলেও তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। এদিকে এ বিষয়ে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের অভিমত, প্রথমেই দেখতে হবে রাষ্ট্র স্বাস্থ্যসেবার মূল্য চ‚ড়ান্ত করতে চায় কিনা। এ ব্যাপারে আগে সরকারকে আন্তরিক হতে হবে। তারপর হাসপাতালগুলোকে গ্রেডিং সিস্টেমের আওতায় আনতে হবে। স্বাস্থ্যকে পণ্যের দুর্বৃত্তায়ন বন্ধে রাষ্ট্রকেই উদ্যোগী হতে হবে। রাজধানীর শীর্ষ বেসরকারি হাসপাতালের সেবার মান ও বিভাগীয় শহর বা জেলার বেসরকারি একটি হাসপাতালের সেবার মান এক হবে না। সেজন্যই যন্ত্রাংশ, সেবার মান ও লোকবলের ওপর নির্ভর করে এ, বি, সি, ডি এমন ভাগে দাম নির্ধারণ করতে হবে। অন্যদিকে বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টদের মতে, ভালো মানের বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের সেবার মূল্য প্রায় একই রকম। যদিও সব হাসপাতাল বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের যন্ত্রাংশ একই মানের নয়। হাসপাতালের যন্ত্রাংশ কত দাম দিয়ে কেনা, লোকবল ও অন্যান্য বিষয়ের ওপর নির্ভর করে সেবার মূল্য নির্ধারণ করা হয়। ঢাকার একটি ভালো মানের হাসপাতাল আর মফস্বলের একটি হাসপাতালের মান এক নয়। এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম জানান, রাজধানীর একটি বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান ও মফস্বলের একটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের ক্যাটাগরি করার জন্য কাজ করা হচ্ছে। তারপর মূল্য নির্ধারণের সুপারিশ করা যাবে।