বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫, ১০:০১ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
সুন্দরবনে বিএসএফের রেখে যাওয়া ৭৫ জনকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর দেবহাটা বিএনপির সদস্য নবায়ন উদ্বোধনী আয়োজনে জেলা বিএনপির আহবায়ক রহমাতুল্লাহ পলাশ বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন যুবদলের প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত কলারোয়ায যুবদল নেতার ওপর হামলার ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ মুন্সীগঞ্জে তাপদাহে পানি ও খাবার স্যালাইন বিতরণ শ্রীউলায় ইউনিয়ন পর্যায়ে সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত তারুণ্যের সমাবেশ সফল করতে স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রস্তুতি সভা ভাড়াশিমলায় ২৫০ প্রান্তিক কৃষানের মধ্যে সবজির বীজ বিতরণ খুলনার সাবেক মহিলা কাউন্সিলর গ্রেফতার বসন্তপুর ফকিরপাড়া জামে মসজিদে বার্ষিক ওয়াজ মাহফিল

ব্যস্ততা নেই জেলার ডাক অফিসগুলোতে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী চিঠি লিখন পদ্ধতি

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় শনিবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০২৩

এম এম নুর আলম ॥ এক সময়ের যোগাযোগের প্রধান বাহন ছিল চিঠি। কালের পরিক্রমায় মোবাইল ফোন আর যান্ত্রিক যোগাযোগের উন্নতির কারণে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী এই চিঠি লিখন পদ্ধতি। ফলে চিঠি নিয়ে আর ব্যস্ততা নেই জেলার ডাক অফিসগুলোতে। “চিঠি কেন আসে না আর দেরী সহেনা ভুলেছো কি নাম ঠিকানা” ‘ভালো আছি ভালো থেকো আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখ’। এসব গানের কথা মনে হতেই ভেসে ওঠে চিঠির কথা। বাংলা সাহিত্যে বিশাল অধ্যায়জুড়ে রয়েছে পত্রসাহিত্য। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোটগল্প ‘স্ত্রীর পত্র’ পুরোটাই একটি চিঠি। সংসারে নারীর মর্মবেদনা নিয়ে মেজোবউ মৃণালের লেখা একটি চিঠির এ ছোটগল্প যেন হার মানায় উপন্যাসকেও। আবার পোস্টমাস্টার গল্পে অজপাড়াগাঁয়ের এক পোস্ট অফিসের পোস্টমাস্টারের সঙ্গে অনাথ গ্রাম্য বালিকা রতনের মায়ার বাঁধন এবং সে বাঁধন ছিন্ন হওয়ার মর্মব্যথা আজো হৃদয়ের গভীরে দাগ কাটে পাঠকের। এক সময় মানুষের কাছে একটি পরিচিত জনবহুল পদ্ধতি ছিল হাতে চিঠি লেখা। পরিবারের কেউ দেশের বাইরে কিংবা অন্য কোথাও অবস্থান করলে তার খোঁজ নেয়া হতো চিঠির মাধ্যমে। তাকে বাড়ির খোঁজ দেওয়ার এক মাত্র মাধ্যম ছিল এই চিঠি লিখন পদ্ধতি। তখন মোবাইলের মত দ্রুত যোগাযোগের মাধ্যম ছিল না বলে সবার কাছে জনপ্রিয় মাধ্যম ছিল চিঠি। তাছাড়া প্রেমিক-প্রেমিকা, ভাই-বোন ও বোনকে-ভাই, মা-ছেলেকে, বাবা-ছেলেকে, ছেলে-বাবা মাকে নিজের আবস্থান জানাতে চিঠি লিখতেন। শত শত বছর ধরে এ প্রক্রিয়া চলে আসছিলো। আগেকার রাজা বাদশারা এক রাষ্ট্রের সাথে অন্য রাষ্ট্রের সম্পর্ক স্থাপন করতে কূটনৈতিকদের মধ্যে সমন্বয় করা হতো চিঠি আদান প্রদানের মাধ্যমে। দেশের দূর-দূরান্তের খবর পৌঁছানোর জন্য ঘোড়ায় সওয়ার হয়ে, কবুতর ও পাখির পায়ে চিঠি লিখে উড়িয়ে দেয়া হতো। প্রতুত্তরে অন্য দেশের রাজাগণও কবুতরের পায়ে চিঠি লিখে জানিয়ে দিতেন। সম্রাট শের শাহের সময়ে ঘোড়ায় চড়ে ডাক বিলি প্রথা চালু হয়। কালক্রমে জমিদারদের এ প্রথা আজও দেশে চালু আছে। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের জেলাগুলোতেও চিঠি আদান প্রদানের প্রচলন ছিল। ডাক পিওনরা পিঠে সংবাদের বস্তা আর এক হাতে হারিকেন অন্য হাতে বর্শা নিয়ে রাতের অন্ধকারে এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে ছুটে যেতেন চিঠি নিয়ে। গ্রামের লোকজনও প্রতিক্ষায় থাকতো ডাক পিওন এর আশায়। এরপর কাঙ্খিত চিঠি আসলে মানুষ পড়তো বিড়ম্বনায়। এমন অনেক গ্রাম ছিল যেখানে তেমন শিক্ষিত লোক ছিল না। গুটি কয়েক শিক্ষিত লোক থাকায় স্বামী কিংবা প্রিয়জনের কাছে চিঠি লেখা ও পড়ার জন্য সেসব শিক্ষিত লোকের দ্বারস্থ হতে হতো। তখন কদর ছিল ডাক পিয়নের। কিন্তু কালের পরিক্রমায় আজ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটছে। মনে চাইলে সুদূর আরব, সিঙ্গাপুর, আমেরিকা সহ বিশ্বের যে কোন দেশে ১ মিনিটে যোগাযোগ করা যাচ্ছে। বিজ্ঞানের নতুন আবিষ্কার মোবাইল, ইন্টারনেট ও টেলিফোনের কল্যাণে। যার ফলে হাতে কলম, নানা রং-বেরঙ্গের কালি-খাতার কেউ চিঠি লিখতে অভ্যস্ত হচ্ছে না। ফলে হারিয়ে যাচ্ছে চিঠি লিখন পদ্ধতি। আজ ডাক পিয়নের তেমন কাজও নেই। নেই আগের মত কদরও। এখন ডাকঘরগুলো শুধু সরকারি নথিপত্র পাঠানোর কাজেই ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রযুক্তির প্রভাবে ডাক বিভাগের কার্যক্রম বদলে গেলেও এখনো সারা দেশে রয়েছে ৯ হাজার ৮৮৬টি ডাকঘর। বিশাল জনবল এবং অবকাঠামো সমৃদ্ধ এ বিভাগকে এখন আর শুধু চিঠিপত্র ও পার্সেল আদান-প্রদান এবং মানি অর্ডার জাতীয় কার্যক্রমের মাধ্যমে টিকিয়ে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। প্রযুক্তির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে টিকে থাকতে বাংলাদেশ ডাক বিভাগেও নেয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com