এফএনএস স্পোর্টস: আগের রাত থেকেই কিছুটা টেনশনে কাটছিল বাংলাদেশ নারী দলের পেস সেনসেশন মারুফা আক্তারের। কেননা শুক্রবার সকালে যে এসএসসির ফলাফল ঘোষণা করা হবে। কিছুটা দুশ্চিন্তা নিয়েই ঘুমাতে গিয়েছিলেন এই পেসার। তবে সকালে ফলাফল দেখে ঈদের খুশিতে মত্ত তিনি। বিকেএসপির হয়ে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৪.০৬ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন মারুফা। বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (বিকেএসপি) থেকে মানবিক বিভাগে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন মারুফা। শুক্রবার সকাল ১১টায় এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ হয়। ফল হাতে পাওয়ার পর মারুফার দিনটি ঈদের খুশিতে কাটছে। ভারতের বিপক্ষে দ্বিপাক্ষিক সিরিজে দারুণ বোলিং করার পর গ্রামের বাড়ি নীলফামারীতে চলে গেছেন তিনি। সেখানেই ফলাফলের অপেক্ষায় দিন গুনছিলেন। ফল জানার পর পরিবারের সঙ্গে রোমাঞ্চকর সময় কাটাচ্ছেন তিনি। মারুফা ফোন রিসিভ করতেই শোনা গেলো তার উচ্ছ¡সিত কণ্ঠ।মারুফা বলেছেন, ‘দারুণ খুশি লাগছে। আগের রাত থেকে কিছুটা দুশ্চিন্তায় ছিলাম। এত ভালো ফল হবে ভাবতে পারিনি কখনও। আমি খুব খুশি। আমার বাবা-মা, আত্মীয়স্বজন সবাই দারুণ খুশি আমার ফলাফলে। ক্রিকেটের কারণে খুব বেশি পড়াশোনা করতে পারিনি। এমন ফলে আমি সত্যিই ভীষণ খুশি। এই ফলাফলে আমার শিক্ষকদের বিশেষ ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’ আত্মীয়-স্বজন, গ্রামের আশপাশের মানুষকে মিষ্টিমুখ করাবেন মারুফা। বিকাল নাগাদ বাবা মিষ্টি কিনতে হাটেও গিয়েছেন বলে জানিয়েছেন মারুফা, ‘বাবা ব্যস্ত ছিল। তাই সকালে হাটে যেতে পারেনি। একটু আগে হাটে গেছে। মিষ্টিতো সবাইকেই খাওয়াবো। বাড়ির লোক, আত্মীয় -স্বজন, পাড়াপ্রতিবেশীরাও বাদ পড়বে না।’ ক্রিকেট চালিয়ে গেলেও পড়াশোনা বন্ধ করবেন না মারুফা।তিনি বলেছেন, ‘আমি পড়াশোনা চালিয়ে যাবো। হয়তো খুব ভালোভাবে পড়তে পারবো না। কিন্তু যতটুকু পারি ক্রিকেট খেলার পাশাপাশি পড়াশোনাও ভালোভাবে চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবো। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।’ ভারতের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে সর্বোচ্চ ৭ উইকেট নিয়েছেন মারুফা। তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে তার শেষ ওভারের ঝলকে ম্যাচ টাই হয় বাংলাদেশের। এই সিরিজে মারুফার পারফরম্যান্স আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সাড়া ফেলে। অথচ তিন বছর আগেও মারুফার আজকের অবস্থান অকল্পনীয় ছিল। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল মারুফার জীবনযুদ্ধ নিয়ে একটি প্রতিবেদন, ‘ক্রিকেট-স্বপ্ন ‘নিষিদ্ধ’ জেনেও ক্রিকেটেই মারুফার বসবাস’। এই নিউজে উঠে এসেছিল মারুফার কঠিন জীবনযাপন। প্রতিবেদনটি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নজরে আসার পরই মূলত তার ভাগ্য বদল শুরু হয়। অনূর্ধ্ব-১৯ জাতীয় দল ছাড়া ডানহাতি এই পেসার সুযোগ পেয়ে যান সিনিয়রদের জাতীয় দলে। অথচ সৈয়দপুর-নীলফামারী সড়কের সঙ্গে লাগোয়া ঢেলাপীর হাটের পাশের গ্রামের মেয়ে মারুফার কল্পনাতেও ছিল না এতকিছু, ‘অনেকে শুনেই বলে ওই জায়গার মানুষ কীভাবে ক্রিকেটার হলো। ওখানকার মানুষ তো সহজে খেলাধুলায় এগোতেই পারে না। আমার উঠে আসাটা অনেকের কাছেই বিস্ময়ের। আমি এখানে (জাতীয় পর্যায়ে) আসার পর অনেক মেয়ে নতুন করে স্বপ্ন দেখছে। এগুলো মাঝে মধ্যে ভাবলে ভালো লাগে।’