শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:২৯ অপরাহ্ন

যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পরও হামলা

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় রবিবার, ৬ মার্চ, ২০২২

এফএনএস : চারদিকে ভয়াল যুদ্ধ। শিশু, বৃদ্ধ, নারীরা অকাতরে প্রাণ হারাচ্ছেন। পালানোর সুযোগ নেই। মুহুর্মুহু রাশিয়ান সেনাদের বোমা আর গুলি ছিন্নভিন্ন করে দিচ্ছে হৃৎপিণ্ড। সাজানো সংসার, সুরম্য অট্টালিকা চোখের নিমেষে শেষ। ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে হাউমাউ করে কাঁদছেন কোনো এক মা। দূরে দাউ দাউ করে জ্বলছে আগুন। বাতাসে বারুদের গন্ধ। মানুষের পালানোর পথ নেই। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি বার বার যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন। সরাসরি, মুখোমুখি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে আলোচনায় বসার প্রস্তাব দিয়েছেন। অনেকটা পরে হলেও গতকাল মারিউপোল এবং ভলনোভাখা শহরে সাময়িক যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেয় রাশিয়া। সঙ্গে সঙ্গে চলে উদ্ধার তৎপরতা। কিন্তু মারিউপোল সিটি করপোরেশন থেকে বলা হয়, যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেয়া হলেও রাশিয়া তা মানছে না। তারা এই ঘোষণা দিয়ে অব্যাহত হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ঘোষণার পর ইউক্রেনের মারিউপোল শহরের বাসিন্দাদের উদ্ধার কার্যক্রম শুরু হয়। এ জন্য আয়োজন করা হয় কয়েক ডজন বাস। এ ছাড়া ব্যক্তিগত গাড়ি আছে যাদের, তাদেরকে এতে করেই শহর ত্যাগের নির্দেশনা দেয় সিটি কাউন্সিল। কয়েকদিন ধরেই পুরোপুরি অবরুদ্ধ ছিল মারিউপোল শহর। রাশিয়ার ঘোষণা করা যুদ্ধবিরতি অব্যাহত থাকার কারণে প্রায় ৯ হাজার ইউক্রেনীয় নিরাপদে শহর ছাড়তে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেন মারিউপোল শহরের ডেপুটি মেয়র সেরহি ওরলভ। তিনি বিবিসিকে জানিয়েছেন, শুক্রবার রাতে দুই পক্ষের মধ্যে যুদ্ধবিরতির আলোচনা হয়েছে। গতকাল স্থানীয় সময় সকাল ৯টা থেকে ওই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। তিনি আরও বলেন, এরপরেই আমরা তাৎক্ষণিকভাবে বাসিন্দাদের শহর ত্যাগের কার্যক্রম শুরু করি। আমরা প্রায় ৫০টি বাস সংগ্রহ করি এবং এতে ৬ হাজারের বেশি মানুষ মারিউপোল ছেড়ে জাপোরিজঝিয়া যেতে পারবেন। এ ছাড়া ব্যক্তিগত গাড়িতে করেও মানুষ শহর ছাড়তে পারবেন। সব মিলিয়ে আমাদের ধারণা ৭ থেকে ৯ হাজার মানুষ শহর ছাড়তে পারবেন। ডেপুটি মেয়র জানান, বর্তমানে শহরের সঙ্গে কোনো ট্রেন যোগাযোগ চালু নেই। কারণ ট্রেন লাইন রাশিয়ার বাহিনী ধ্বংস করে দিয়েছে। যুদ্ধবিরতি কতোক্ষণ চলবে তা জানাতে পারেননি ওরলভ। তিনি বলেন, রোববারও এই যুদ্ধবিরতি অব্যাহত থাকবে কিনা সে বিষয়ে রাশিয়ার তরফ থেকে কিছু বলা হয়নি। এদিকে ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রী ইরিনা ভেরেশ্চুক হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, যুদ্ধবিরতিকে ব্যবহার করে রাশিয়া যেন তার সেনাবাহিনীকে এগিয়ে নিয়ে না আসে। ইউক্রেনের বাহিনীর অবস্থানগুলোর দিকে রুশ বাহিনী অগ্রসর হচ্ছে কিনা তা পর্যবেক্ষণ করছে তার সরকার। তিনি বলেন, আমরা এই রাস্তাগুলো দিয়ে বেসামরিক নাগরিক, নারী ও শিশুদের উদ্ধার করে আনবো। একইসঙ্গে শহরে যারা থেকে যাবেন তাদের কাছে মানবিক সাহায্যও পৌঁছানো হবে এ রাস্তা দিয়ে। সাময়িক যুদ্ধবিরতি মানা হচ্ছে না: ইউক্রেনের মারিউপোল সিটি কাউন্সিল থেকে দাবি করা হয়েছে, ওই শহর থেকে বেসামরিক জনগণকে সরে যাওয়ার জন্য যে সাময়িক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে রাশিয়া ও ইউক্রেন, তা পুরোপুরি মানা হচ্ছে না। অনলাইন বিবিসি এ খবর দিয়ে বলছে- টেলিগ্রামে পোস্ট করা এক বার্তায় সিটি কাউন্সিল বলেছে, জেপোরোজিয়া অঞ্চলে যুদ্ধ চলছেই। এই অঞ্চলটিকে হিউম্যান করিডোর হিসেবে ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। সেখানে সাময়িক যুদ্ধবিরতি মেনে চলতে রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন ইউক্রেনের কর্মকর্তারা। শহরটির ডেপুটি মেয়র শেরহি ওরলভ বলেছেন, যুদ্ধবিরতি ঘোষণা দেয়া সত্ত্বেও হামলা অব্যাহত আছে। তিনি বলেন, আমরা জানতে পারছি, শহরে এখনো গোলা নিক্ষেপ হচ্ছে। রাশিয়ানরা এখনো আমাদের উপরে বোমা ও সমরাস্ত্র ব্যবহার করছে। প্রকৃতপক্ষে মারিউপোলে কোনো যুদ্ধবিরতি নেই। যে রুটে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়েছে, সেখানে আসলে তা নেই। আমাদের বেসামরিক লোকজন সরে যেতে প্রস্তুত। কিন্তু রাশিয়ার গোলা নিক্ষেপের কারণে তারা পালাতে পারছে না। রাশিয়ার বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা জারি করলো সিঙ্গাপুর: পশ্চিমা দেশগুলোর পাশাপাশি এবার সিঙ্গাপুরও নিষেধাজ্ঞা জারি করলো রাশিয়ার বিরুদ্ধে। এটি দেশটির জন্য এক বিরল পদক্ষেপ। সিঙ্গাপুর জানিয়েছে, ইউক্রেনে হামলা করার কারণে রাশিয়ার বিরুদ্ধে তারা নিষেধাজ্ঞা জারি করতে যাচ্ছে। নিষেধাজ্ঞার অংশ হিসেবে তারা রাশিয়ায় রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ করবে এবং দেশটির কয়েকটি ব্যাংকের সঙ্গে লেনদেন সীমিত করবে। এ খবর দিয়েছে এনডিটিভি। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম প্রধান অর্থনৈতিক কেন্দ্র সিঙ্গাপুর। রুশ ব্যাংকের পাশাপাশি ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেনেও লাগাম টানতে যাচ্ছে দেশটি। ফলে রাশিয়ার সঙ্গে ক্রিপ্টোকারেন্সির লেনদেনে কড়াকড়ি আরোপ করার ঘোষণা দিয়েছে সিঙ্গাপুর। শনিবার দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এই নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি জানায়। রাশিয়ার যে ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে তা হলো, ভিটিবি, ভিনেশেকোনোম ব্যাংক, প্রমসভিয়াজ ব্যাংক ও ব্যাংক রসিয়া। এদিকে ব্লুমবার্গ জানিয়েছে, এই নিষেধাজ্ঞার কারণে সিঙ্গাপুরের প্রতিষ্ঠানগুলো রাশিয়াকে কোনো আর্থিক সেবা প্রদান করতে পারবে না। এরফলে রাশিয়ার পক্ষে তহবিল সংগ্রহ কঠিন হয়ে উঠবে। উলে−খ্য, ২০২১ সালে রাশিয়ার সঙ্গে ৩.৭ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য হয় সিঙ্গাপুরের। দেশটির মোট আমদানির মাত্র ০.৮ শতাংশ আসে রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে। ফেসবুক নিষিদ্ধ করলো রাশিয়া: রাশিয়ায় নিষিদ্ধ করা হলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক। শুক্রবার দেশটির মিডিয়া নিয়ন্ত্রক সংস্থা রসকোমনাদজর ফেসবুকের বিরুদ্ধে এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ফেসবুকে রুশ গণমাধ্যম ও সাইটগুলোর প্রতি যে ‘বৈষম্যমূলক’ আচরণ করা হচ্ছে, তার জবাব দিতেই এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। এক বিবৃতিতে তারা জানিয়েছে, ২০২০ সালের অক্টোবরের পর থেকে আমরা অন্তত ২৬টি কেস পেয়েছি যেখানে রাশিয়ার গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে ফেসবুক। সামপ্রতিক সময়ে এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটি রাশিয়া টুডে, জভেজদা টিভি, আরআইএ ও স্পুটনিকসহ বেশকিছু রুশ গণমাধ্যমের এক্সেস সীমিত করে দিয়েছে। রুশ গণমাধ্যম আরটি জানিয়েছে, ফেসবুকের মূলত কোম্পানি মেটা আরটি ও স্পুটনিকের মতো গণমাধ্যমগুলোর অ্যাকাউন্ট এক্সেস কেড়ে নিয়েছে। মেটা’র অভিযোগ এই রুশ গণমাধ্যমগুলো প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে। তবে এবার পাল্টা আঘাত হানলো রাশিয়া। দেশটিতে মেটা’র অধীনে থাকা অ্যাপগুলো ব্যবহারের সুযোগ বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। এ নিয়ে মেটা প্রেসিডেন্ট নিক ক্লেগ বলেন, এ সিদ্ধান্তের মাধ্যমে রাশিয়ান ব্যবহারকারীদের নির্ভরযোগ্য তথ্য উৎস থেকে বিচ্ছিন্ন করা হবে। হোয়াইট হাউসও এই পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছে, এটি গভীরভাবে উদ্বেগজনক। তবে দেশটিতে ইনস্টাগ্রাম এবং হোয়াটসঅ্যাপ এখনো কাজ করছে। ফেসবুকের পাশাপাশি টুইটার ব্যবহারও সীমিত করেছে রসকোমনাদজর। রাশিয়ায় ৫০২টি স্টোরের সবগুলোই বন্ধ করে দিচ্ছে জারা: রোববার থেকে রাশিয়ায় নিজেদের ৫০২টি স্টোরের সবটাই বন্ধ করে দিচ্ছে আন্তর্জাতিক পোশাক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান জারা। এর মালিকানা প্রতিষ্ঠান ইন্ডিটেক্স এ ঘোষণা দিয়েছে। একই সঙ্গে পে-পল তার সার্ভিস সাময়িক বন্ধ করে দিচ্ছে। এ খবর দিয়ে অনলাইন বিবিসি বলছে, রাশিয়ায় জারা’র আটটি ব্র্যান্ডের পোশাকের দোকান আছে। এগুলো হলো- জারা, পুল অ্যান্ড বিয়ার, মাসিমো দুতি, বুশকা, স্ট্রাডিভ্যারিয়াস, ওইশো, জারা হোম এবং উতেরকুয়ে। এসব ব্র্যান্ডের যেসব স্টোর আছে রাশিয়ায় তার সবটাই বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। বিবিসিকে ইন্ডিটেক্স বলেছে, রাশিয়ায় তাদের ৯ হাজার কর্মচারী আছে। সার্ভিস সাময়িক স্থগিত করার ফলে তাদেরকে কি সাপোর্ট দেয়া যায়, তা নিয়ে কোম্পানি পরিকল্পনা করছে। অন্যদিকে বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে রাশিয়ায় শীর্ষস্থানীয় স্মার্টফোন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান স্যামসাং তাদের শিপমেন্ট স্থগিত করবে। তবে তা পুরোপুরি বন্ধ হবে কিনা তা এখনো পরিষ্কার নয়। ওদিকে অনলাইনে অর্থ লেনদেনকারী কোম্পানি পে-পল রাশিয়ায় তাদের কর্মকাণ্ড বন্ধ করে দিয়েছে। তারা রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসনের নিন্দা জানিয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com