এফএনএস: স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটানোর পাশাপাশি খাদ্য দ্রব্যের রপ্তানি বাড়াতে খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল বৃহস্পতিবার ‘ঘোড়াশাল পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার প্রকল্প’-এর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিটাক, বিসিক ও বিএসইসি কর্তৃক সমাপ্ত চারটি প্রকল্পের উদ্বোধনকালে (ভার্চ্যুয়াল) তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র এবং নরসিংদীর ঘোড়াশাল পলাশ ইউরিয়া সার কারখানায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে সংযুক্ত হন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা কৃষি পণ্য, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছি। কৃষি ও খাদ্য দ্রব্য উৎপাদনে আমরা যথেষ্ট সাফল্য অর্জন করেছি। গবেষণার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত আমরা নতুন নতুন ক্ষেত্রে বিভিন্ন ফসল উৎপাদন, বিভিন্ন ফলমূল, তরিতরকারি সবজি উৎপাদন, মাছ-মুরগী ডিম, মাংস উৎপাদন করতে সক্ষম হচ্ছি। তিনি বলেন, এগুলো প্রক্রিয়াজাত করতে পারলে অর্থাৎ ভ্যালু অ্যাডেড করতে পারলে আমরা যেমন বিদেশে রপ্তানি করতে সক্ষম হবো, পাশাপাশি নিজের দেশের মানুষেরও যেহেতু ক্রয় ক্ষমতা বাড়ছে সেখানে আমাদের বাজার স¤প্রসারণ হচ্ছে। আমরা সেদিকে লক্ষ্য রেখে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছি। শিল্পায়নের স¤প্রসারণে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের অর্থনীতি এটা ঠিক কৃষি ভিত্তিক। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে শিল্পায়ন আমাদের প্রয়োজন। শিল্পায়ন যেমন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে, রপ্তানি করার সুযোগ সৃষ্টি করে। পাশাপাশি আমাদের দেশের মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি করা যাতে আমাদের উৎপাদিত পণ্যের বাজার স¤প্রসারণ হয়। সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ হাতে নেই। তিনি আরও বলেন, ১০০টি শিল্পাঞ্চল গড়ে তুলছি। আমাদের গৃহীত পদক্ষেপের ফলে আমরা যখন স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করছি সেই সময় বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। পরিবেশবান্ধব শিল্পায়নে সরকারের পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে সরকার প্রধান বলেন, দেশব্যাপী আমরা পরিবেশবান্ধব শিল্পের প্রসার ঘটাচ্ছি। আমাদের পরিবেশ রক্ষা করাটা এখন সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। আমরা প্রতিটি শিল্প কলকারখানা থেকে শুরু করে যতো প্রতিষ্ঠান আমরা তৈরি করছি সেখানেই পরিবেশ বান্ধব যাতে হয় তার ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি। এমনকি গার্মেন্টস শিল্পের গ্রিন ইন্ড্রাস্ট্রিজ সারা পৃথিবীতে ১০টার মধ্যে এখন ৭টাই কিন্তু এখন বাংলাদেশে। পরিবেশ-প্রতিবেশের দিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা প্রতিটি পদক্ষেপ নিচ্ছি। সরকার প্রধান বলেন, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের প্রসারে ৫৭টি শিল্প নগরী, আমরা যখন ক্ষমতায় আসি আমরা স্থাপন করি। এবং ১৩ টি শিল্প নগরী স্থাপনের কাজ আমরা শুরু করি। আর বেসরকারি খাতকে আরও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে আমাদের কাঁচামাল আমদানির ওপর শুল্ক হ্রাস করা, বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করা, রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকা স¤প্রসারণ করা, এ ধরনের বিভিন্ন পদক্ষেপ আমরা হাতে নেই। তিনি বলেন, যার ফলে বাংলাদেশ অনেকটা অগ্রগতি লাভ করে। দ্বিতীয়বার আমরা যখন সরকার গঠন করি। তখন আমরা আরও অনেক পদক্ষেপ হাতে নিয়েছি। আমি জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই যে তারা আমাদেরকে বার বার ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে বলেই আজকে বাংলাদেশে উন্নয়ন করতে আমরা সক্ষম হয়েছি। দেশের রপ্তানি আয় বৃদ্ধির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৮-০৯ অর্থ বছরে আমাদের মোট রপ্তানি আয় ছিল ১৫ হাজার ৫৬৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২০-২১ অর্থ বছরে তা ৪৫ হাজার ৩৮৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে আমরা উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছি। বর্তমানে আমরা প্রায় ২০২ টি দেশ ও অঞ্চলে ৭৬৬ টি পণ্য রপ্তানি করতে পারছি। আমাদের সরকারের নীতি এবং কর্মসূচির ফলে বর্তমানে জিডিপিতে আমাদের শিল্প খাতের অবদান প্রায় ৩৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। ঘোড়াশাল পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার প্রকল্পের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ঘোড়াশাল এবং পলাশে ২টি পুরাতন ইউরিয়া সার কারখানার স্থলে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন, অত্যাধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর, শক্তি সাশ্রয়ী এবং পরিবেশবান্ধব নতুন সার কারখানা ‘ঘোড়াশাল পলাশ ইউরিয়া সার কারখানা’ স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করি। নতুন এ সার কারখানায় দৈনিক ২৮০০ মে. টন (বার্ষিক প্রায় ১০ লাখ মে. টন) দানাদার ইউরিয়া সার উৎপাদন হবে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে কার্বন ডাই অক্সাইড থেকে ১০ শতাংশ ইউরিয়া উৎপাদন বৃদ্ধি করা হবে। এই প্রকল্পটিতে ঋণ সহায়তা প্রদান করায় জাপান ও চীন সরকারের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন শিল্প মন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার।