শুক্রবার, ২৬ জুলাই ২০২৪, ১২:২৫ অপরাহ্ন

রাজধানীতে নামছে দরজা বন্ধ বাস

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় রবিবার, ৬ নভেম্বর, ২০২২

## ব্যান্ড হবে পুরনো লক্কড়-ঝক্কর বাস ## গন্তব্য নির্দেশ করবে বাসের রং ## যাত্রী উঠবে-নামবে স্টপেজেই ## ৪২ রুটে কোম্পানি হবে ২২
জি এম শাহনেওয়াজ ঢাকা থেকে \ স্বস্তিতে মানুষের গন্তব্যে পৌঁছে দিতে রাজধানীতে নামানো হচ্ছে দরজা বন্ধ বাস। প্রতি এক কিলোমিটার দুরত্বে খুলবে – এ বাসের দরজা। এখান থেকেই যাত্রীদের উঠতে এবং নামতে হবে। তাই ভালো সেবা পেতে একজন যাত্রীকে নূন্যতম আধা-কিলোমিটার হাটার মানষিক প্রস্তুতি রাখতে হবে। যাত্রীদের ভোগান্ত্রি কমাতে রাখা হয়েছে স্মার্টকার্ড টিকেটিং পদ্ধতি। জনসংখ্যার চাহিদার বিপরীতে গণ-পরিবহনের সংখ্যা দাঁড়াবে ৯ হাজার ২৭টি। এর মধ্যে বড়বাস ৬ হাজার ৪৫৭টি এবং মিনি বাস ২ হাজার ৫৭০টি। এর মধ্যে বড় বাস, ৪২ সিটের বাসের পাশাপাশি ডাবল ডেকার বাস-ও রয়েছে। শহর ও উপ-শহর মিলিয়ে চলবে এই গণ-পরিবহনগুলো। বাস পরিচালনায় ২২ কোম্পানির অধীন ৪২ রুটে নিদিষ্ট সময় পর পর চলবে বাসগুলো। কোম্পানির বাসের রং হবে ৬ ধরণের এবং গন্তব্যের দিক নিদের্শনা থাকবে তিনটি ও স্থানের নাম দুইটি। যাত্রীদের গন্তব্য নির্দেশ করবে ওই রং, কালার বা ক্লাস্টার্স। রং-গুলো হচ্ছে, গোলাপী (পিংক), নীল, মেরুন, কমলা, গ্রীণ, বেগুণী, নর্থ (উত্তর), নর্থ-সাউথ (উত্তর-দক্ষিণ) এবং সাউথ (দক্ষিণ)। এছাড়া ঢাকার চাকা ও গুলশান চাকাও চলছে নিয়মিত রাজধানীর অভিজাত এলাকায়। পুরিপূর্ণভাবে এই বাসগুলো রাজধানী শহর ও এর আশপাশের উপ-শহরজুড়ে চলাচল করবে। সবগুলো নামার পর অবৈধ ফিটনেসবিহীন ও লক্কর-ঝক্কর বাসগুলো তুলে দেয়া হবে। চলার অনুপযোগী বাসগুলোর বিরুদ্ধে চালানো হবে জোরালো উচ্ছেদ অভিযান। তবে লোকাল সার্ভিস ও সিটিং দুই ধরণের সেবা সার্ভিস রাখার প্রস্তাব রয়েছে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ)। ডিটিসিএ মনে করছে, আধুনিক ও রুচিশীল বাস রাজধানীসহ আশপাশের এলাকাজুড়ে নামানো হলে ব্যক্তিগত গাড়ীতে চলাচল ছাড়বে মানুষ। মানুষ পছন্দ করে ঝামেলা ছাড়াই নিজ গন্তব্যে পৌঁছাতে। সেই কাজটি করতে কাজ করছেন তারা। সমন্বয়ের দায়িত্বে রয়েছে ডিটিসিএ। নথির তথ্য বলছে, ভালো মানের বাস কোম্পানী যাতে এই কাজে যুক্ত হয়, – সেজন্য তাদের উৎসাহিত করতে সহজ শর্তে ঋণ সুবিধার প্রস্তাব করা হয়েছে। লাখে সর্বোচ্চ ঋণের সুদ হার হবে ৪ থেকে ৫ শতাংশ। বর্তমানে সাধারণ ঋণের সুদ হার ৯ শতাংশ। প্রায় ৪ হাজার বাস কেনার কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। পর্যায়ক্রমে আরও বাস কেনা হবে। বর্তমানে দুটি নতুন রুটে এই সার্ভিস চলাচল করছে। জানতে চাইলে ডিটিসিএ’র নির্বাহী পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) সাবিহা পারভীন বলেন, ২১, ২২ ও ২৬ নং ক্লাস্টার্সের সবুজ রংয়ের বাস ইতিমধ্যে পাইলটিং (পরীক্ষামূলক)ভাবে চলাচল করছে। স্বস্তিতে মানুষ যাতে চলাচল করতে পারে সেজন্য ৭০টি বাস স্টপেজ নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। এ স্টপেজগুলো সিটি করপোরেশনের পাশাপাশি সড়ক ও জনপথ (সওজ) কর্তৃপক্ষ নির্মাণ করেছে। প্রতি এক কিলোমিটার পর পর একটি স্টপেজ থাকবে। স্টপিজের দু’পাশের দুরত্ব নির্ণয় হয়েছে আধা-কিলোমিটার। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। মানুষ হেটে বাস স্টপিজে পৌঁছে টিকিট কেটে গন্তব্যে যাবেন। তিনি বলেন, বৈধ ও অবৈধ উভয় বাসের স্টপিজ থাকতে হবে। কিন্তু বর্তমানে রাজধানীর গণপরিবহনগুলো এলোমেলো চলছে। যততত্র থামিয়ে যাত্রী উঠাচ্ছে; আবার যাত্রীরাও উঠছে। এভাবেই মানুষ অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। এখন নতুন যে বাসগুলো নামানোর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে, প্রথমে মানুষ ও বাস চালকরা তা মানতে রাজি হবেন না। তাই শুরুতে কাউন্সিলিং করতে হবে, পরে বাধ্য করতে হবে। তাহলেই রাজধানীতে যানজট কমবে এবং মানুষ স্বস্তিতেই গন্তব্যে পৌঁছাবে। তিনি বলেন, গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরানোর জন্য সিটি করপোরেশন ও এ সংক্রান্ত টিম কাজে করবে; সহায়তা করবে সরকার , – এটাই মূল কথা। ডিটিসিএ’র তথ্যমতে, রাজধানীর শহর কেন্দ্রীক ও উপ-শহরগুলোতে গণ-পরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরাতে নতুন বাস নামানোর সিদ্ধান্ত হয়। এ লক্ষ্যে ২০১৫ সালে প্রস্তাব ছিল ২২টি রুটে ৬টি কোম্পানির তত্বাবধানে বাসগুলো চলবে। ওই প্রস্তাবে গন্তব্যের নিদের্শনা ছিল না। পরবর্তী পর্যায়ে করোনা পরিস্থিতির মধ্যে ডিটিসিএ কর্তৃপক্ষ ৪২ রুটে ২২ কোম্পানির তত্বাবধানে ৯ ধরণের চিহ্ন রং সংবলিত বাস নামানোর প্রস্তাব দিয়েছে। বর্তমানে স্টপিজ নির্মাণ কাজ চলছে। গোলাপী রংয়ের বাসের নং (রুট-১, ২, ৩ ও ৪ ) আবদুল­াহপুর হয়ে মতিঝিল-সায়েদাবাদ-সদরঘাট-ঝিলমিল। নীল রংয়ের বাস (রুট-৫, ৬, ৭ ও ৮) আবদুল­াহপুর হয়ে আজিমপুর-হেমায়েতপুর। মেরুন রংয়ের বাস (৯, ১০, ১১, ১২ ও ১৩) হেমায়েতপুর থেকে কাঁচপুর হয়ে নারায়নগঞ্জ-স্টাফ কোয়ার্টার-সদরঘাট। কমলা রংয়ের বাসগুলো (রুট-১৪, ১৫, ১৬, ১৭, ১৮, ১৯ ও ২০) মিরপুর-১২ থেকে ভাসানটেক-রুপগঞ্জ-চিড়িয়াখানা-দোয়ারিপাড়া-ইসিবি চত্বর হয়ে আজিমপুর-সদরঘাট-ঝিলমিল-কাঁচপুর-নারায়নগঞ্জ। গ্রীণ রংয়ের বাস নং (২১, ২২, ২৩, ২৪, ২৫, ২৬, ২৭ ও ২৮) ঘাটারচর থেকে নারায়নগঞ্জ-মেঘনাঘাট-ভূলতা-তালতলা আবদুল­াহপুর। বেগুনী রংয়ের বাস নং (২৯, ৩০, ৩১, ৩২, ৩৩ ও ৩৪) কাঁচপুর, ধলেশ্বরী, ডেমরা ও নারায়নগঞ্জ থেকে মিরপুর হয়ে আবদুল­াহপুর। নর্থ লেখা সংবলিত বাসগুলো (রুট-৩৫, ৩৬ ও ৩৭) কালিয়াকৈর-শেরপুর-কাপাসিয়া-গাজীপুর-ঘোড়াশাল থেকে আবদুল­াহপুর। নর্থ-সাউথ লেখা সংবলিত বাসগুলো -৩৮, ৩৯ ও ৪০ চন্দ্রা, ন্যাশনাল পার্ক, পাটুরিয়া-মানিকগঞ্জ থেকে হেমায়েতপুর। সাউথ লেখা সংবলিত বাসগুলো ৪১ ও ৪২ মুন্সীগঞ্জ, মাওয়াঘাট ও নবাবগঞ্জ থেকে সায়েদাবাদ হয়ে ঝিলমিল। ঢাকার চাকা লেখা সংবলিত বাসগুলো রুট-২ নতুনবাজার-পুলিশ প্লাজা থেকে কাকলী হয়ে গুলশান-২ এবং গুলশান চাকা সংবলিত বাসগুলো রুট-১ নতুনবাজার থেকে কাকলি পর্যন্ত। সবুজ রং সংবলিত রুটের বাসগুলো রাজধানীর অভ্যন্তরীন বিভিন্ন এলাকা ঘূরে ঘূরে চলবে এই বাসগুলো।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com