সোমবার, ২২ জুলাই ২০২৪, ০৬:১৯ অপরাহ্ন

রাজধানীতে হাজার হাজার অবৈধ গোডাউনে \ কেমিক্যালের বিপুল মজুতে বিপর্যয়ের শঙ্কা

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১ মার্চ, ২০২২

এফএনএস : ঢাকা মহানগরীতে হাজার হাজার অবৈধ গোডাউনে বিপুল পরিমাণ কেমিক্যাল মজুত রাখা হয়েছে। ওসব গোডাউনে যে কোনো সময় মারাত্মক দুর্ঘটনার তীব্র আশঙ্কা রয়েছে। আমদানি করা কেমিক্যাল বিস্ফোরক অধিদপ্তরের অনুমোদিত গোডাউনে মজুতের নিয়ম থাকলেও বাস্তবে তা মানা হচ্ছে না। রাজধানীতে মাত্র ১৩৭টি কেমিক্যাল গোডাউনের বিস্ফোরক অধিদপ্তরের অনুমোদন থাকলে রাজধানীতে কেমিক্যাল গোডাউন রয়েছে প্রায় ৫ হাজার। আবাসিক, মার্কেট ও জনবহুল বিপণিবিতানেও গোডাউন স্থাপন করা হয়েছে। ওসব গোডাউনে মজুত রয়েছে বিপুল পরিমাণ অতি দাহ্য পদার্থ ও কম দাহ্য পদার্থ। সিটি কর্পোরেশন ও বিস্ফোরক অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বৈধ লাইসেন্স ছাড়াই রাজধানীর আরমানিটোলা, বাবুবাজার, মিটফোর্ড, চকবাজার, লালবাগ, ইসলামপুর ও চাঁনখারপুলসহ আশপাশের এলাকার আবাসিক ভবনে বিপুলসংখ্যক কেমিক্যাল গোডাউন গড়ে তোলা হয়েছে। বিস্ফোরক অধিদপ্তর ৩১ ধরনের কেমিক্যালকে বিপজ্জনক হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ওসব কেমিক্যাল আমদানি ও মজুতের অনুমতি দিয়ে থাকে বিস্ফোরক অধিদপ্তর। সেজন্য গোডাউনের নকশা, আমদানির লাইসেন্স, অগ্নিনির্বাপণ সনদসহ কমপক্ষে ১৫টি শর্ত পূরণ করতে হয়। কিন্তু বিস্ফোরক অ্যাক্ট-১৮৮৪ এবং সিলিন্ডার বিধিমালা-১৯৯১ তোয়াক্কা না করেই গড়ে তোলা হয়েছে বিপুলসংখ্যক অবৈধ কেমিক্যাল গোডাউন। অধিকাংশেরই বৈধ কাগজপত্র ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের অনুমোদন নেই। অথচ বিস্ফোরক অধিদপ্তর, সিটি করপোরেশন ও পুলিশের সামনেই গোডাউনে বিভিন্ন কেমিক্যাল মজুত করা হচ্ছে। অনিরাপদ অবস্থায় ওসব কেমিক্যাল গুদাম থেকে ট্রাক, পিকআপ ও ঠেলাগাড়িতে করে বিভিন্ন স্থানে পরিবহন করা হয়। যা জানমালের জন্য হুমকিস্বরূপ। সূত্র জানায়, অনিরাপদ ও অবৈধ গোডাউনে কেমিক্যাল মজুতের কারণে নগরীতে আশঙ্কাজনক হারে অগ্নিকান্ডের ঘটনা বেড়েছে। বেশির ভাগ ব্যবসায়ী শুধু ট্রেড লাইসেন্স নিয়েই কেমিক্যাল ব্যবসা করছে। তারা চরম বিপজ্জনক কেমিক্যাল মজুত, পরিবহন ও বিক্রির ক্ষেত্রে আইনের বাধ্যবাধকতা মানছে না। রাসায়নিক ব্যবসার জন্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নতুন ট্রেড লাইসেন্স দেয়া বন্ধ রেখেছে। ২০১৯ সালের পর আর কোনো লাইসেন্স দেয়া হয়নি। এমনকি আগের লাইসেন্সও নবায়ন করা হয়নি। কিন্তু রাজধানীতে কেমিক্যাল গোডাউনের ব্যবসা ঠিকই চলছে। বিগত ২০১০ সালের ৩ জুন পুরান ঢাকার নিমতলীতে কেমিক্যাল গোডাউনের বিস্ফোরণে ১২৭ জন নিহত হয়। ওই ঘটনার পর প্রশাসন কিছুটা নড়েচড়ে বসলেও পরে গোডাউন উচ্ছেদ অভিযান থেমে যায়। তাছাড়া বিগত ২০১৯ সালের ২০ ফেব্র“য়ারি চকবাজারের চুড়িহাট্টায় কেমিক্যাল গোডাউনে বিস্ফোরণে ৭১ জন নিহত হয়। ওই ঘটনার পর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন একটি টাস্ক ফোর্স গঠন করে কেমিক্যাল গোডাউন উচ্ছেদে অভিযান চালায়। মাত্র ৩৩ দিন অভিযান পরিচালনা করে ১৭০টি কেমিক্যাল গোডাউন সিলগালা করা হয়। কিন্তু তারপর অদৃশ্য কারণে ওই অভিযান থেমে যায়। ফলেহাজার হাজার অবৈধ কেমিক্যালের দোকান ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান অনুমোদনহীনভাবে অবাধে বাণিজ্য চালাচ্ছে। এদিকে এ বিষয়ে বাংলাদেশ কেমিক্যাল অ্যান্ড পারফিউমারি মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নুরুল মোস্তফা জানান, বিস্ফোরক অধিদপ্তর অনুমোদিত ৩১ ধরনের কেমিক্যালের বাইরে আরো বহু ধরনের কেমিক্যাল আমদানি করা হয়। ওসব কেমিক্যাল সিটি করপোরেশনের ট্রেড লাইসেন্সের বিপরীতে আমদানি ও মজুদ করা হয়। তবে গত ১০ বছর ধরে সিটি করপোরেশনের ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন স্থগিত রয়েছে। ওসব কেমিক্যাল মজুত করার জন্য শিল্প মন্ত্রণালয় মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক নির্মাণ করছে। সেটি চালু না হওয়া পর্যন্ত পুরান ঢাকায় শুধু বাণিজ্যিক ভবনগুলোতে কেমিক্যাল গোডাউন রয়েছে। তবে ওসব কেমিক্যালের মধ্যে শিল্প-কলকারখানায় ব্যবহৃত বিপজ্জনক ৩১ কেমিক্যাল নেই। অন্যদিকে এ ব্যাপারে বিস্ফোরক অধিদপ্তরের প্রধান পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ জানান, অবৈধভাবে কেউই বিস্ফোরক আমদানি করতে পারে না। চুড়িহাট্টায় কেমিক্যাল গোডাউনে বিস্ফোরণের পর বিস্ফোরক অধিদপ্তর থেকে পুরান ঢাকায় কোনো কেমিক্যাল গোডাউন স্থাপনের অনুমোদন দেয়া হয়নি। অবৈধভাবে কেউ গোডাউন স্থাপন করলে ওই বিষয়ে তথ্য পেলে বিস্ফোরক অধিদপ্তর অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। এ ব্যাপারে নজরদারি থাকা প্রয়োজন হলেও বিস্ফোরক অধিদপ্তরের জনবলের অভাবে তা করতে পারছে না। তারপরও ঢাকা সিটি করপোরেশনের মধ্যে কোথাও কোনো অবৈধ গোডাউন থাকলে ওই বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com