এফএনএস : রাজধানীর ব্যস্ত এলাকায় টাকার বিনিময়ে গাড়ি পার্কিংয়ের সুযোগ রেখে নতুন নীতিমালা তৈরি করছে ঢাকা যানবাহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ)। বিগত ২০১৯ সালের খসড়া নীতিমালায় কিছু পরিবর্তন এনে তা চূড়ান্ত করা হচ্ছে। ওই লক্ষ্যে ডিটিসিএ ইতিমধ্যে অংশীজনের সঙ্গে বৈঠক করেছে। সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালকের মতে, আগের খসড়ার সঙ্গে নতুন নীতিমালার বড় ধরনের পরিবর্তন নেই। নীতিমালা চূড়ান্ত করে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে এবং মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিলে তার প্রয়োগ শুরু হবে। যদিও ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) ৩ বছর আগে রাজধানীর কিছু সড়কের অংশ বিশেষ পার্কিংয়ের জন্য নির্ধারিত করে দিলেও তা সফল হয়নি। ঢাকা যানবাহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, যত্রতত্র পার্কিং ঢাকায় যানজটের অন্যতম কারণ। আর তা বন্ধেই নীতিমালা চূড়ান্ত করা হচ্ছে। ২০১৯ সালের খসড়া নীতিমালায় কিছু পরিবর্তন এনে তা চূড়ান্ত করছে ঢাকা যানবাহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ)। খসড়া নীতিমালার উদ্দেশ্য হিসেবে বলা হয়েছে, সরকারি, করপোরেট ও বেসরকারি খাতের সহযোগিতায় পার্কিং অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে। ব্যক্তিগত গাড়ি কমাতে গণপরিবহনের ব্যবহার উৎসাহিত করা হবে এবং পার্কিং ব্যবস্থাপনায় প্রযুক্তির ব্যবহার করা হবে। ডিটিসিএ’র অধিক্ষেত্র এলাকা অর্থাৎ ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, গাজীপুর সিটি করপোরেশন, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন এলাকা এবং বৃহত্তর ঢাকা অর্থাৎ ঢাকা, গাজীপুর, নারায়াণঞ্জ, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ ও নরসিংদী জেলার জন্য নীতিমালা প্রযোজ্য হবে। ওসব এলাকার স্থানীয় কর্তৃপক্ষ নীতিমালা অনুসরণ করে পার্কিং পরিষেবা দেবে। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এবং রাজউক রাজধানী এলাকায় পার্কিংয়ের স্থান চিহ্নিত করবে। বহুতল ও ভূগর্ভস্থ পার্কিং লট নির্মাণ করা যাবে। ভূগর্ভস্থ পার্কিং লট নির্মাণের ক্ষেত্রে যে জমিতে নির্মাণ করা হবে, তার সুবিধা বজায় রাখতে হবে। সূত্র জানায়, পুলিশের প্রতিবেদন অনুযায়ী রাজধানীর যানজটের অন্যতম কারণ স্কুলে শিক্ষার্থী নিয়ে আসা প্রাইভেটকার। নীতিমালায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পার্কিং সুবিধা রাখার বাধ্যবাধকতার কথা বলা হয়েছে। নীতিমালায় বলা হয়েছে, আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শপিংমল, হাসপাতাল, স্টেডিয়াম, কারখানা, নৌ, বাস ও বিমান টার্মিনালে পর্যাপ্ত পার্কিং ব্যবস্থা রাখতে হবে। মাসে ৬৫ হাজার টাকা গ্যারেজ ভাড়া ধরে বাসে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু রাজধানীর রাতের যানজটের অন্যতম কারণ সড়কের পাশে বাস, ট্রাক রাখা। নীতিমালায় বলা হয়েছে, বাস, ট্রাকসহ বাণিজ্যিক যানবাহন রাতে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের অনুমতিতে সড়কে ফি’র বিনিময়ে পার্কিং করতে দেয়া যেতে পারে। জরুরি প্রয়োজনে রিকশা, ভ্যানের মতো অযান্ত্রিক যানবাহনের জন্যও পার্কিংয়ের স্থান চিহ্নিত করতে হবে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ফি’র বিনিময়ে যেসব সড়ক পার্কিংয়ের জন্য চিহ্নিত করবে, কেবল সেখানেই গাড়ি পার্ক করা যাবে। সূত্র আরো জানায়, নীতিমালায় আরো বলা হয়েছে- মেট্রোরেল ও রেলওয়ে স্টেশন, বাস ও লঞ্চ টার্মিনালে পার্ক অ্যান্ড রাইড সুবিধা রাখা যেতে পারে। প্রাইভেটকার ব্যবহারকারী সেখানে গাড়ি পার্ক করে গণপরিবহনে চড়ে গন্তব্যে যাবেন। ডিটিসিএ, সিটি করপোরেশন, পুলিশ, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ও বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত কমিটি সুপারিশ করবে কোন সড়কে গাড়ি পার্ক করা যাবে। অর্থাৎ কমিটি অন স্ট্রিট পার্কিং স্থান নির্ধারণ করবে। পার্কিং সুবিধার জন্য ইজারাদার, ঠিকাদার নিয়োগ করা যাবে। তারা কর্তৃপক্ষের হয়ে গাড়ি থেকে ফি আদায় করবে। স্বচ্ছ পার্কিং ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করবে। অব্যবস্থাপনা ও অদক্ষতার জন্য তাদের কঠোর শাস্তি পেতে হবে। যদিও কী শাস্তি পেতে হবে তা নীতিমালায় বলা নেই। তাছাড়া রাজধানীর অধিকাংশ আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনে পার্কিংয়ের জায়গায় অবৈধভাবে দোকান, ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হয়েছে। রাজউক মাঝেমধ্যে উচ্ছেদ অভিযান চালালেও অবস্থার উন্নতি নেই। নীতিমালায় বলা হয়েছে, ওসব নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করতে হবে। আর নীতিমালায় যেসব এলাকায় পার্কিং সুবিধা নেই সেখানে বেসরকারি উদ্যোগে পার্কিং লট নির্মাণকে উৎসাহ দেয়ার কথা বলা হয়েছে। জনবহুল এলাকায় আবাসিক ও বাণিজ্যিক প্লটেও মালিকরা পার্কিং লট নির্মাণ করে ভাড়া দিতে পারবে। আর স্থানীয় কর্তৃপক্ষ পার্কিং ফি নির্ধারণ করবে। তবে তা শহরের বিভিন্ন স্থানের গুরুত্ব অনুযায়ী ভিন্ন হবে। বহুতল পার্কিং লটকে আর্থিকভাবে লাভবান করতে তার ৫০০ মিটারের মধ্যে কেউ সড়কে গাড়ি পার্ক করতে পারবে না। ফি নগদ প্রদান না করে ‘পার্কিং চার্জেজ ব্যারিয়ার’ এর মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আদায় করা যেতে পারে। নীতিমালা বাস্তবায়নে সড়কে ও ফুটপাতে অবৈধ পার্কিংয়ে বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হয়েছে। নির্ধারিত স্থানের বাইরে গাড়ি পার্ক করলে তা জব্দ করার ক্ষমতা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে দিতে হবে বলেও নীতিমালায় উলেখ করা হয়েছে। এদিকে ঢাকা যানবাহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত সচিব নীলিমা আখতার জানান, আগের খসড়ার সঙ্গে বড় ধরনের পরিবর্তন নেই। নীতিমালা চূড়ান্ত করে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিলে তার প্রয়োগ শুরু হবে। অন্যদিকে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব নজরুল ইসলাম জানান, মন্ত্রণালয় পার্কিং খসড়া নীতিমালা এখনো পায়নি । পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় ধাপগুলো সম্পন্ন করে অনুমোদন দেয়া হবে।