শনিবার, ২০ জুলাই ২০২৪, ০৫:২১ অপরাহ্ন

রাজনৈতিক দল ও বিশেষজ্ঞদের অভিমত

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় রবিবার, ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

## বিতর্কিত তদবিরবাজ ব্যক্তিকে সার্চ কমিটি ইসি নিয়োগে সুপারিশ জানাবে না ## আইনি কাঠামোয় সার্চ কমিটি: আওয়ামী লীগ ## সার্চ কমিটি নিরপেক্ষ নই : বিএনপি
জি এম শাহনেওয়াজ ঢাকা থেকে \ তদবিরকারী এবং বিতর্কিত কোনো ব্যক্তিকে আগামী পাঁচ বছরের জন্য সাংবিধানিক পদের জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগের জন্য সুপারিশ যাতে না করেন, – সে জন্য সার্চ কমিটির প্রতি আহবান জানিয়েছেন দেশের প্রবীণ রাজনৈতিক ব্যক্তি ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। তারা বলছেন, কে সার্চ কমিটির সদস্য হলেন সেটা বিবেচ্য নয়। বিবেচ্য বিষয় এই কমিটি কাদেরকে সুপারিশ করলো সেটাই। কমিটিকে অবশ্যই দলমত নির্বিশেষে নিরপেক্ষ ও যোগ্য-মেধাসম্পন্ন ব্যক্তিদের নাম সুপারিশ করবে; এটাই জাতি প্রত্যাশা করে। তবে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল ক্ষমতাসী আওয়ামী লীগ ও সংসদের ছায়া বিরোধী দলের ভূমিকায় থাকা বিএনপির অবস্থান বিপরীত মেরুতে। আওয়ামী লীগ বলছে, আইনি কাঠামোর মধ্যে এই সার্চ কমিটি গঠন করা হয়েছে; এ নিয়ে বিতর্কের সুযোগ নেই। আর বিএনপি বলছে, সার্চ কমিটি নিরপক্ষ না। কারা আছে, কারা নেই মন্তব্য করতে চাই না। কারণ নিরপেক্ষ অন্য ব্যাপার। শুক্রবার রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ নির্বাচন কমিশন (ইসি) নিয়োগে সার্চ কমিটি গঠনের অনুমোদন দেন। গতকাল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে কমিটির সদস্যদের নাম প্রকাশ পেয়েছে। আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসানকে প্রধান করে (সভাপতি) প্রধান বিচারপতির মনোনীত হাইকোর্টের বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী (পদাধিকার বলে), সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন (পদাধিকারবলে) এবং রাষ্ট্রপতির মনোনীত দুজন বিশিষ্ট নাগরিক সাবেক নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন ও কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক আনোয়ারা সৈয়দ হক। কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা দেবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের (ইসি) মেয়াদ ১৪ ফেব্র“য়ারি শেষ হচ্ছে। এই সব ব্যক্তি আগামী পাঁচবছরের জন্য ইসি কমিশনের জন্য সদস্য মনোনয়নে সুপারিশ করবেন। সার্চ কমিটির সদস্যদের মধ্যে আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও সাবেক নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ ছহুল হোসাইন আওয়ামী লীগ থেকে নৌকা প্রার্থীর পক্ষে লড়তে মনোনয়ন চেয়েছিলেন। এসব ব্যক্তি সার্চ কমিটিতে কতটুকু নিরপেক্ষ ভূমিকা রাখতে পারবেন তা নিয়েই কথা বলেছেন প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। তবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এ ইস্যুতে বিপরীত অবস্থানে রয়েছে। আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারন সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ এ প্রসঙ্গে বলেন, সার্চ কমিটি নিয়ে বিতর্কের সুযোগ নেই। কারণ আইনি যে কাঠামো রয়েছে তার আলোকে এই কমিটি। তবে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, নির্বাচন কমিশন তখনই কার্যকর হবে যখন নিরপেক্ষ সরকার থাকবে। নির্বাচন তো নির্বাচন কমিশন করে না, নির্বাচন করে প্রশাসন। আর প্রশাসন থাকে সরকারের অধীনে। তাই বাংলাদেশের মানুষ বিশ্বাস করে – এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। সার্চ কমিটি বা যা-ই করা হোক, যে নির্বাচন কমিশনই হোক। এই সরকার থাকলে আমরা কোনো নির্বাচনে যাব না এবং এই নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। সার্চ কমিটি আমার কাছে নিরপেক্ষ মনে হয় না। কারা আছে, কারা নেই…নিরপেক্ষতা অন্য ব্যাপার। কে থাকল-কে থাকল না তাতে নিরপেক্ষ হয়ে গেল না। বিএনপি নির্বাচন কমিশন নিয়ে আগ্রহী না। এটার বিষয়ে আমরা কোনো মন্তব্য করতে চাই না। ওর্য়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সাংসদ রাশেদ খান মেনন বলেন, প্রথমে কোন আইনের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠন হতে যাচ্ছে; যদিও এই আইনটি অসম্পূর্ণ। তারপরেও বলবো, – সার্চ কমিটি যাদের নাম সুপারিশ করবেন সেটা প্রকাশ পাবে না ও সংসদেও আলোচনা হবে না। তিনি বলেন, সংসদ অধিবেশনে আগামীতে ইসিতে যারা আসবেন তাদের বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক যে লম্বা বক্তব্য দিয়েছিলেন, – আশা করি স্বচ্ছতা ও দক্ষতার ভিত্তিতে কাজটি হবে। বর্তমান ও বিগত নির্বাচন কমিশন নিয়ে অভিযোগ উঠেছিল। এবার যারা সিইসি ও কমিশনার হবেন তারা যাতে মেরুদন্ড সম্পন্ন ব্যক্তি হন, -সেই দাবি থাকল সার্চ কমিটির কাছে। তদবির বাংলাদেশে একটা সংস্কৃতি হয়ে দাঁড়িয়েছে উলে­খ করে মেনন বলেন, যারা তদবির করেন তারা সম্মানিত লোক না। আইনে যে যোগ্যতা ও স্বচ্ছতার কথা বলা হয়েছে এটা তদবিরের সঙ্গে যায় না। এ ধরণের তদবির আমাদের কাছে ও রাজনৈতিক দলের কাছে যাবে। নির্বাচন সম্পর্কে অভিজ্ঞ ও সৎজ্জ্ন ব্যক্তি তাদের নাম প্রস্তাব করবো। সার্চ কমিটি-ও সেটা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবে। জাসদের সভাপতি ও সাংসদ হাসানুল হক ইনু মেনন বলেন, দল থেকে আমরা কোনো ব্যক্তি নাম দেবো কি না এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। দিলেও ওই নাম প্রকাশ করব না। তিনি বলেন, যেকোনো তদবির সংস্কৃতিটাই বাঞ্জনীয় না। যারা যোগ্য মনে করবেন তাদের জীবন বৃন্তান্তসহ নাম সার্চ কমিটিকে দিবেন; এই দেয়াটা ক্ষতির কিছু নেই। রাষ্ট্রপতির মনোনীত সার্চ কমিটির সবাই সম্মানিত, যোগ্য ও নীতিবান ব্যক্তি বলেই আমি জানি। তারা কর্মজীবনে দক্ষতা ও সততার পরিচয় দিয়েই এই পর্যন্ত এসেছেন। যে ১০জন ব্যক্তির নাম সুপারিশ করবেন প্রত্যকটি নামই গ্রহণযোগ্য হবে। এই সার্চ কমিটির সদস্যরা জন-আকাঙখা পূরণে ভূমিকা রাখতে পারবেন কি না জানতে চাইলে জাসদের সভাপতি ইনু বলেন, নির্বাচনেও জন-আকাঙ্খা পূরণ হয় না। তাই জন-আকাঙ্খা একটা তুলনামূলক বিষয়। এই সার্চ কমিটি কোনো বিতর্কিত ব্যক্তিকে সাংবিধানিক পদের জন্য মনোনয়ন দেবেন না বলেই আমি বিশ্বাস করি। স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, সার্চ কমিটির যারা সদস্য হয়েছেন এখন তাদের অতীত ইতিহাস – আমি দেখতে চাই না। যারা দায়িত্ব পেয়েছেন তারা জাতির স্বার্থে অত্যন্ত নিরপেক্ষভাবে কাজ করবেন। তিনি বলেন, এই কমিটি কাকে বাছাই করছেন তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিভাবে তারা কাজটি করছেন। এই পদ্ধতিটা অবশ্যই স্বচ্ছ ও পরিস্কার থাকতে হবে। যারা যেখানে নাম দিক না কেনো সার্চ কমিটি যার নাম প্রস্তাব করবেন অবশ্যই ওই নামটির জাস্টিফিকেশন থাকতে হবে। এই বিশেষজ্ঞ বলেন, নাম প্রস্তাবের ক্ষেত্রে কোনো দল, মত ও তাদের পূর্বের রাজনৈতিক সম্পর্ক, – এগুলোর দ্বারা তারা প্রভাবিত হবেন না; এটাই আমরা আশা করব। এটা হলে জাতিকে অনেক ধরণের বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হবে। কারণ প্রত্যেকটি মানুষই ভালো; প্রত্যেক জনের মধ্যেই কিছু ত্র“টি থাকে। এখানে বিশ্বাস যোগ্যতার সঙ্গে কাজটা করাটাই বড় কাজ। তিনি বলেন, নির্বাচন, নির্বাচন কমিশনের একক প্রচেষ্টায় একটা সুষ্ঠু নির্বাচন হয় না। কিন্তু ইসির একটা বড় প্রচেষ্টা থাকে। ভালো নির্বাচন করার সাহসিতা ও মানষিকতা আছে সে ধরণের ব্যক্তিদের ইসিতে নিয়োগ দিতে হবে। বিগত ড. শামসুল হুদা কমিশন থেকে বর্তমান কে এম হুদা একটা ছক বদ্ধ নির্বাচন কমিশন। এবারো তার ব্যতিক্রম আমরা দেখতে পারছি না। নির্বাচন বিষয়ে অভিজ্ঞ এই ব্যক্তি বলেন, যেই লোকগুলো ইসিতে আসার জন্য তদবির করছেন তাদেরকে ডিসকলিফিকেশন ধরে নিয়ে তাদের বাদ দিতে হবে। আমার জানা মতে, অনেক লোক তদবিরে নেমে গেছে। এসব বিষয়ে সার্চ কমিটিকে সর্তক থাকতে হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com