শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৬:১৮ পূর্বাহ্ন

রাতের ভোটের সাক্ষী হবে না নতুন ইসি -সিইসি আওয়াল

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১ মার্চ, ২০২২

## সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালনে আশাবাদ ## ইভিএম সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা নেই ## রাজনৈতিক সমঝোতার আহবান
ঢাকা ব্যুরো \ নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, তার নেতৃত্বাধীন নতুন নির্বাচন কমিশন রাত ও দিনের ভোট পর্বের (এপিসোড) সাক্ষী হবে না। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, নিষ্ঠা ও সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করব। গতকাল সোমবার ইসির মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের সঙ্গে নতুন নির্বাচন কমিশনের প্রথম মতবিনিময় সভায় সিইসি এই মন্তব্য করেন। এ সময় দেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচনে অংশ না নিয়ে মাঠ ছেড়ে না পালানোর আহবান জানান তিনি। রাজনৈতিক পক্ষগুলোকে নতুন সিইসি হাবিবুল আওয়াল বলেন, আমরা অনুনয়-বিনয় করব, আপনারা নিজেদের মধ্যে সমঝোতা সৃষ্টি করেন। একটা চুক্তিবদ্ধ হন, যে নির্বাচনটা সুন্দরভাবে পরিচালনা করবেন। ওখানে সহিংসতা থাকবে না। কেউ কাউকে বাধা দেবে না। সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, নির্বাচন কমিশনের শক্তি অসীম নয়। রাজনৈতিক দলগুলো যদি নিজেদের মধ্যে সমঝোতা করতে না পারে, তবে আমরা ‘মুরুব্বি হতে পারবো না।’ আমরা সুন্দর নির্বাচনের মাধ্যমে জাতিকে গুড গভর্ন্যান্স এবং ভালো সংসদ গড়ে তোলার চেষ্টা করবো। এদিক থেকে আমাদের কোনও কার্পণ্য থাকবে না। সিইসি বলেন, লেভেল প্লেইং ফিল্ড ইসি এককভাবে করতে পারে না। রাজনৈতিক নেতৃত্বকে নিজেদের মধ্যেও একটা সমঝোতা সৃষ্টির চেষ্টা করতে হবে। আমার অভিজ্ঞতা, আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা কমে আসে। না হলে কিন্তু দূরত্ব বাড়তে থাকে। রাজনৈতিক দলগুলোর কাউকে না কাউকে অহংকার ত্যাগ করে আলোচনা করতে হবে। নির্বাচন করতে গেলে আমাদের ভূমিকা কী হবে? আমরা কতটা সংযত থাকবো? পারস্পরিক ঐক্যে সহযোগিতামূলক আচরণ করবো? নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেওয়া বিএনপিকেও আমন্ত্রণ জানাবেন বলে জানান সিইসি। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, রাজনৈতিক নেতৃত্বের যে দায়িত্বটা রয়েছে সেটা যদি শেয়ার না করেন, তাহলে নির্বাচন কমিশন এককভাবে যে কাজ করবে সেখানে সীমাবদ্ধতা দেখা দেবে। আমাদের দায়িত্ব আছে, রাজনৈতিক নেতৃত্বের কাছে আবদার করা, বিনয় করা, অনুনয় করা। রাজনৈতিক নেতৃত্বকে আমরা সহযোগিতা করবো। রাজনৈতিক নেতৃত্ব যদি রাজনৈতিক নেতৃত্বকে সহায়তা না করে, পলিটিক্যাল লিডারশিপের যদি ন্যূনতম সমঝোতা না থাকে, আমি তো তাদের মরুব্বি হতে পারবো না। উনারা আমাদের চেয়ে অনেক বেশি জ্ঞানী, অনেক বেশি অভিজ্ঞ। আমরা অনুনয়-বিনয় করবো, আপনারা নিজেদের মধ্যে সমঝোতা সৃষ্টি করেন। একটা চুক্তিবদ্ধ হন যে নির্বাচনটা সুন্দরভাবে পরিচালনা করবেন, ওখানে সহিংসতা থাকবে না, কেউ কাউকে বাধা দেবে না। সিইসি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন অর্থবহ করার জন্য স্ব-স্ব অবস্থান থেকে করণীয় না করলে, উনারা নিজেদের প্রশ্ন করবেন নাকি আমাদের প্রশ্নবিদ্ধ করবেন? তাহলে আমি সবিনয়ে বলবো, আমাদের ক্ষমা করবেন। আপনাদের কিছু যদি ব্যর্থতা থাকে তবে সেটাও স্বীকার করুন। সবাই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা রিস্টোর করুন। একটা ভালো সংসদ উপহার দেওয়ার চেষ্টার ত্র“টি থাকবে না। বিএনপি নির্বাচনে যাবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে, এ বিষয়ে সাংবাদিকরা দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, বিএনপি যদি এমন ঘোষণা দিয়েও থাকে, আমরা কী তাদের চা খাওয়ার আমন্ত্রণ জানাবো না? কোনও কথাই শেষ কথা নয়। তিনি বলেন, আজকে আমরা যে সভা করেছি সেটা নিজেদের মধ্যে পরিচিতি পর্ব ছিল। কমিশনের কর্মপরিধি সম্পর্কে সচিব আমাদের অবহিত করেছেন। সেজন্য তাকে ধন্যবাদ জানিয়েছি। আমরা খুব অভিজ্ঞ নই। তবে কিছুটা অস্বচ্ছ হলেও ধারণা আছে। এখানে আমাদের অভিজ্ঞতা ও দায়িত্ব ভিন্ন হতে হবে। নির্বাচন পরিচালনার টপ লেভেল দায়িত্ব ইসিকে নিতে হবে। হাবিবুল আউয়াল বলেন, আমরা আন্তরিকতা, সততা, নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবো। আমরা কতটা সৎ ছিলাম বা অসৎ ছিলাম, কতটা দায়িত্বপূর্ণ ছিলাম বা দায়িত্বহীনভাবে কর্তব্য পালন করেছি, সেটি পরে মূল্যায়ন করতে পারবেন। কিন্তু আমরা অন্তরের অন্তস্থল থেকে আশা ও প্রত্যাশা করি, সকলে নির্বাচনে অংশ নিয়ে গণতন্ত্রকে সুসংহত করার চেষ্টা করবেন। সাংবিধানিক শপথ অনুযায়ী দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করবো : সিইসি বলেন, যারা নির্বাচন করবেন তাদের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করার দায়িত্ব কমিশনের রয়েছে। কর্মপদ্ধতি কী হবে সেটি ঠিক করিনি। তবে জানতে কিছু জ্ঞান আহরণ করেছি। সাংবিধানিক শপথ অনুযায়ী, দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করবো। তিনি বলেন, নির্বাচন বিশাল কর্মযজ্ঞ। বিশেষ করে জাতীয় নির্বাচন। যেখানে রাজনৈতিক দলগুলোর আগ্রহ থাকে। সবার আবেগ বুঝতে হয়। নির্বাচন সুষ্ঠু করতে রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা রয়েছে। নির্বাচনের বটম লেভেলে দলগুলোর অনেক কর্মী থাকে, তাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে। মাঠ ছেড়ে চলে আসলে হবে না : রাজনৈতিক দলগুলোকে উদ্দেশ করে সিইসি বলেন, মাঠ ছেড়ে চলে আসলে হবে না। মাঠে থাকবেন। কষ্ট হবে। জেলেনস্কি পালিয়ে যেতে পারতেন, কিন্তু তিনি পালাননি। তিনি রাশিয়ার সঙ্গে প্রতিরোধ যুদ্ধ করে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, নির্বাচনি প্রতিদ্ব›দ্বীতা হবে। প্রতিদ্ব›দ্বীতা হলে কিছুটা ক্যাওয়াজ ও ধস্তাধস্তি হয়। আমি অস্বীকার করবো না আমাদের নির্বাচন কেন্দ্রের শৃঙ্খলা দেখতে হবে। আমাদের যে সামর্থ্য দক্ষতা কতটুকু সে অনুযায়ী আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টার সঙ্গে আরোপিত দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করবো। এ বিষয়ে তিনি গণমাধ্যমের সহযোগিতা কামনা করেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ব্যর্থতা, সফলতা মূল্যায়নের প্রশ্ন আসবে। গণমাধ্যম থেকে আমরা জ্ঞান আহরণের চেষ্টা করি। এই মুহূর্তে আগের কমিশনের দোষ ত্র“টি নিয়ে বলতে চাচ্ছি না। কোনও শিক্ষণীয় থাকলে আমরা সেটি করবো। বিএনপির আস্থা ফেরানোর চেষ্টা করবো : বিএনপিকে আস্থায় আনার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে হয় না। সরকার কিন্তু নির্বাচন করে না। একটি সরকার তো থাকবেই। ওয়ান ইলেভেনে একটা সরকার ছিলে, আবার নির্দলীয় সরকারও ছিল। তাদের অধীনেও কমিশন থাকে। তারা নির্বাচনের দায়িত্ব দিয়ে থাকে কমিশনকে। আমাদের ওপর যে দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে, আমরা চেষ্টা করবো ভোটাররা যাতে ভোট দিতে পারে। তাদের আস্থা অর্জনের চেষ্টা করবো। তিনি বলেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে যদি সরে আসি তাহলে হবে না। কর্মীদের কেন্দ্রে কেন্দ্রে থাকতে হবে। মাঠ যদি খোলা পায় তাহলে অবাধে ভোট দিতে থাকবে এটাই স্বাভাবিক। আমরা এটা চাই না। চাই দ্বা›িদ্বক মাঠ। প্রতিদ্ব›িদ্বতা হবে। যদি সবাই মাঠ ছেড়ে দেয় ইসি অতটা কেয়ার করতে পারবে না। বিএনপির ভোটে না আসার ঘোষণার বিষয়ে সিইসি বলেন, বিএনপি যদি ঘোষণা দিয়েও থাকে, তাদের কি আহŸান জানাতে পারবো না যে আপনারা আসেন। একটু চা খান। কোনও কিছুই শেষ নয়। নো সে ইজ ফাইনাল সে ইন পলিটিক্স (রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই)। তিনি বলেন, আমাদের সামর্থ্য শক্তি অসীম নয়। এটি সব সময় আপেক্ষিক। পক্ষ বিপক্ষে কথা হয়। নির্বাচন কমিশন অসীম শক্তির অধিকারী নয়। যার যার স্ব-স্ব অবস্থান থেকে করণীয় না করলে হবে না। কারও ব্যর্থতা থাকলে স্বীকার করতে হবে। সিইসি বলেন, নির্বাচনের মাঠ উত্তপ্ত। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড কমিশন একা তৈরি করতে পারে না। পলিটিক্যাল লিডারশিপ আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি মিলিয়েই কিন্তু হয়। কিন্তু আমরা যদি মুখ ফিরিয়ে থাকি, তাহলে দূরত্ব বাড়বে। রাজনৈতিক দলগুলোর কাউকে না কাউকে অহংকার বাদ দিয়ে আলোচনা করতে হবে। আমরা সবাইকে নির্বাচনমুখী করতে চাই : সিইসি বলেন, নির্বাচনে দলীয় কর্মী থাকে। তারা ভোটারদের নিয়ে যায়। তাদের যে ভূমিকা নেই তা নয়, তাদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। যদি গ্রাউন্ড লেভেলে নির্বাচন ব্যবস্থা দুর্বল হয় তাহলে সমস্যা তৈরি হয়। আমরা সবাইকে নির্বাচনমুখী করতে চাই। তবে আমাদের কোনও ত্রুটি থাকবে না। তিনি বলেন, আপনার কি মনে হয় আমি রাতে গিয়ে সিল মারবো? আমি সরকারি কর্মকর্তা ছিলাম, অনেকেই তো ছিলেন। এটা আপেক্ষিক বিষয়। অনুকূল পরিবেশের কথা বলেছি। নির্বাচন কমিশন এককভাবে সে লক্ষ্য অর্জন করতে পারবে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বসবো, অবজারভ করবো। আমি গুরুত্ব দেই ভোটকেন্দ্রকে। প্রতিটি দলের স্ব-স্ব এজেন্ট আছে, তাদের তাড়িয়ে দিলে জানাতে হবে। তাদের সেখানে অবস্থান করতে হবে। আমরা আশাবাদী, আমাদের ওপর আস্থা রাখেন: সিইসি বলেন, ভোট ভোটের নিয়মে হবে। আগের রাতে হতো কিনা জানি না। আমি অস্ট্রেলিয়ায় বসে দিনে ভোট দিয়েছি। আমি জানি সেটি হয় কিনা। তবে আমরা সেদিকে যেতে চাই না। যদি দেখেন, আমরা সেটি করেছি, আপনারা তখন বলতে পারেন। যদি মানুষের আস্থা বিনষ্ট হয়, তাহলে সেটি ফেরানোর চেষ্ট কি আমরা করবো না? আমাদের আপনারা পর্যবেক্ষণে রাখেন, আমরা তো সেখানে বাধা দেবো না। রাজনৈতিক দলগুলো চুক্তিবদ্ধ হতে পারে তারা কেন্দ্রে কোনও সহিংসতা করবে না, সংঘাত তৈরি করবে না। বিনা-প্রতিদ্ব›দ্বীতায় নির্বাচন নিয়ে তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করব। আমাদের সামর্থ্য অসীম নয়। আন্তরিকভাবে চেষ্টা ঘাটতি থাকবে না। নির্বাচনের সময় অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিক সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করব। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবো। কোনো কর্মকর্তা বা কারো বিরুদ্ধে অনিয়ম পেলে বিধি মোতাবেক আইনি ব্যবস্থা নেবো। ইভিএমের বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত নেবো : ইভিএম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ইভিএম নিয়ে কি সিদ্ধান্ত হবে সেটি এখনই বলতে পারবো না। আমরা আলোচনা করবো। ইভিএমের ভালো-মন্দ আলোচনা করবো। আমি নিজেও ইভিএম ভালো করে বুঝি না। ব্যালটের ভালো মন্দটাও বসে দেখবো। পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে। আমরা নির্বাচন সংশ্লিষ্ট আইনগুলোও পর্যাপ্ত কিনা সেটি দেখবো। নির্বাচন পরিচালনায় আমরা গুরুত্ব দেবো। আমরা সেনসেটাইজ করবো। পর্যবেক্ষণও করবো। সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশিদা সুলতানা, ব্রি. জে. (অব.) আহসান হাবীব খান, সাবেক সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর ও আনিছুর রহমান। এর আগে নতুন নির্বাচন কমিশনের সদস্যরা প্রধান নির্বাচন কমিশনের নেতৃত্বে গতকাল সকালে প্রথম বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে কমিশন সদস্যরা সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় মিলিত হন। কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন গত ২৬ ফেব্র“য়ারি নিয়োগ পাওয়ার পর শপথ নেয় ২৭ ফেব্র“য়ারি। গতকাল সোমবার তারা প্রথম কাজে যোগ দিয়েই সকাল ১১টায় পরিচিতি সভা করেন। এরপর আসেন সংবাদ সম্মেলনে। বর্তমান কমিশনের মেয়াদ শেষ হবে ২০২৭ সালের ২৬ ফেব্র“য়ারি।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com