শুক্রবার, ২৬ জুলাই ২০২৪, ০১:১০ অপরাহ্ন

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে নতুন আশা, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে মিয়ানমারবিষয়ক রেজল্যুশন গৃহীত

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২২

এফএনএস: জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে প্রথমবারের মতো মিয়ানমারের পরিস্থিতি নিয়ে একটি রেজল্যুশন গৃহীত হয়েছে। দেশটিতে বিদ্যমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, জরুরি অবস্থা, বন্দি মুক্তিসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানের বিষয়টিকে এতে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন এ তথ্য জানিয়েছে। রেজল্যুশনটির ওপর ভোট আহŸান করা হলে তা ১২-০ ভোটে অনুমোদিত হয়। ভোট পর্বে এই প্রস্তাবনার বিপক্ষে কোনো সদস্য ভেটো দেয়নি। তবে চীন, ভারত ও রাশিয়া ভোট দেওয়া থেকে বিরত ছিল। ভোট দেওয়া শেষে সংযুক্ত আরব আমিরাত, ফ্রান্স, মেক্সিকো, গ্যাবন ও নরওয়ে তাদের বক্তব্যে রেজল্যুশনে রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়টি অন্তর্ভুক্তির প্রশংসা করে এই সমস্যা সমাধানে নিরাপত্তা পরিষদের জোরালো ভ‚মিকার দাবি জানায়। রেজল্যুশনটি উত্থাপনের জন্য যুক্তরাজ্যকে ধন্যবাদ জানায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। জাতিসংঘের স্থায়ী মিশন জানায়, এই রেজল্যুশন রোহিঙ্গা বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের অবস্থানের প্রতি জাতিসংঘের সবচেয়ে ক্ষমতাধর অঙ্গটির শক্তিশালী সমর্থনেরই বহিঃপ্রকাশ। রাশিয়া-ইউক্রেন সংকটসহ অন্যান্য বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের প্রেক্ষাপটে গৃহীত রেজল্যুশনটি রোহিঙ্গা সংকটের প্রতি বিশ্ব স¤প্রদায়ের দৃষ্টি আরও সুসংহত করতে সহায়ক হবে বলে আশা করা যায়। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়ে ২০১৭ সালে আট লাখের বেশিসহ এই পর্যন্ত ১২ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা লোকজন বাংলাদেশে প্রবেশ করে। সরকার তাদের অস্থায়ীভাবে আশ্রয় দেয়। শুরু থেকেই তাদের মাতৃভ‚মি মিয়ানমারে নিরাপদ, টেকসই ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের জন্য জোরালো দাবি জানানো হচ্ছে। এই প্রস্তাবনা অনুমোদনের ফলে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানের বিষয়টি নিরাপত্তা পরিষদের নিয়মিত কার্যকলাপের অংশ হয়ে গেল। একইসঙ্গে এটি রোহিঙ্গা সমস্যার দ্রুত ও স্থায়ী সমাধানে বাংলাদেশের এই সংক্রান্ত অব্যাহত প্রচেষ্টাকে ত্বরান্বিত ও আরও শক্তিশালী করবে। রেজল্যুশনটিতে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয়, নিরাপত্তা ও মানবিক সহযোগিতা দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রশংসা করা হয়। পরিষদ রোহিঙ্গা সঙ্কটের মূল কারণগুলো চিহ্নিত করে তাদের নিরাপদ, টেকসই ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের জন্য অনুক‚ল পরিবেশ সৃষ্টির জন্য মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে আহŸান জানায়। মিয়ানমারের বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতা যে রোহিঙ্গাদের নিজ বাসভ‚মি মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করবে এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তাকে ঝুঁকিতে ফেলবে, সে বিষয়টি রেজল্যুশনে দৃঢ়ভাবে তুলে ধরা হয়। এই সমস্যা সমাধানে আসিয়ানের সদস্য রাষ্ট্রসমূহের ২০২১ সালে গৃহীত পাঁচ দফা ঐক্যমত্যের দ্রুত ও পুনর্বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয় এবং এর বাস্তবায়নে জাতিসংঘের কোনো সহযোগিতার প্রয়োজন হবে কি না, সে বিষয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব ও মিয়ানমারবিষয়ক বিশেষ দূতকে ২০২৩ সালের ২৩ মার্চের মধ্যে নিরাপত্তা পরিষদে একটি প্রতিবেদন পেশ করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন রেজল্যুশনটিতে বাংলাদেশের স্বার্থ সংরক্ষণে উলে­খযোগ্য ভ‚মিকা পালন করে। বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আবদুল মুহিত নিরাপত্তা পরিষদের গুরুত্বপূর্ণ স্থায়ী ও অস্থায়ী বিভিন্ন সদস্য রাষ্ট্রের সঙ্গে প্রয়োজনীয় দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন এবং বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো যাতে রেজল্যুশনে অন্তর্ভুক্ত হয়, সে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। রেজল্যুশনটির পেন হোল্ডার (মূল স্পন্সর) পরিষদের অন্যতম স্থায়ী সদস্য যুক্তরাজ্য। বিগত তিন মাস ধরে রেজল্যুশনটির নেগোসিয়েশন শেষে এটি নিরাপত্তা পরিষদে গৃহীত হয়। নিরাপত্তা পরিষদের ডিসেম্বর ২০২২ এর সভাপতি ভারত এবং তাদের সভাপতি থাকাকালীন সময়েই রেজুল্যুশনটি নিরাপত্তা পরিষদে গৃহীত হলো। এর ফলে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে বহুপাক্ষিক ক‚টনীতিতে এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রচেষ্টায় সফল হলো বাংলাদেশ।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com