শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৬:২০ পূর্বাহ্ন

শিক্ষাক্ষেত্রে বৈষম্য, হতাশায় নিমজ্জিত প্রাকস্তরের শিক্ষক-কর্মচারীরা

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় শনিবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

এফএনএস : এতে কোন সন্দেহ নেই যে বর্তমান সরকার শিক্ষাখাতকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে আসছে। শিক্ষাখাতে বাজেট বৃদ্ধির পাশাপাশি নানা উন্নয়নমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধি ছাড়াও বৃদ্ধি করা হয়েছে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা। শিক্ষা জাতীয় উন্নয়নের চাবিকাঠি। শিক্ষা সর্বশ্রেষ্ঠ বিনিয়োগ। এ উপলব্ধি থেকে বঙ্গবন্ধু ৩৭০০০ প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করেন। এর ধারাবাহিকতায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৩ সালে ২৬১১৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করেছিলেন। বর্তমান সরকারের আগে ১ম-৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মাঝে অর্ধেক পুরনো বই দীর্ঘ সময় থেকে বিতরণ করে আসা হচ্ছিল। শিশু শিক্ষার্থীদের হাতে বছরের শুরুতে পুরনো বই দেওয়ার বিষয়টি ভাবনায় আসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে। তিনি কেবল প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের নয়; ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণিসহ মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদেরও জানুয়ারি মাসের ১ তারিখে বই উৎসবের মাধ্যমে একযোগে সব শিক্ষার্থীর হাতে নতুন বই পৌঁছে দেন। কিন্তু তারপরও কিছুকিছু ক্ষেত্রে অসম্পূর্ণতা রয়ে গেছে। এই অসম্পূর্ণতাগুলো বাংলাদেশের শিক্ষাক্ষেত্রে এক ধরণের হতাশা তৈরি করছে। অন্যদিকে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দীর্ঘ অচলাবস্থায় শিক্ষা ব্যবস্থা একপ্রকার ভেঙে পড়ার দশায়। হতাশায় আক্রান্ত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। হতাশা বিরাজ করছে শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যেও। জানা যায়, সবচেয়ে বেশি হতাশায় নিমজ্জিত প্রাথমিক শিক্ষা খাতের শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। তাঁদের এই হতাশার পেছনে অনুঘটক হিসেবে কাজ করছে বেতন বৈষম্য ও পদোন্নতি জটিলতাসহ নানা কারণ। জানা যায়, সরকার বিভিন্ন সময়ে শিক্ষকদের বেতন ও পদমর্যাদা বাড়ালেও তা প্রায় সবই বিচ্ছিন্ন পদক্ষেপ। সহকারী শিক্ষক থেকে মহাপরিচালক পর্যন্ত কোনো ‘পেশাগত সিঁড়ি’ (ক্যারিয়ার ল্যাডার) নেই। যোগদানের পর একই পদে চাকরি করে বেশিরভাগকে অবসরে যেতে হয়। ৩৬ বছরের বিধিমালায় চলছে এ খাত। অবশ্য স¤প্রতি এ বিধিমালা সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে। কিন্তু তাতে শিক্ষা ক্যাডারের পদে দেখানো হয়েছে প্রশাসনের হিসাবে। এ খাতের শিক্ষার উন্নয়নে পেশাদার জনগোষ্ঠী সৃষ্টির লক্ষ্যে নিজস্ব ক্যাডার সার্ভিস গঠনের প্রস্তাব দীর্ঘদিনের। এ নিয়ে ২০০৩ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত কাজও হয়েছে। কিন্তু সেই ক্যাডার আজও হয়নি। এ খাতটি মূলত ভাড়া করা নেতৃত্বে চলছে। বাংলাদেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা অনেক, এবং এসব বিদ্যালয়ে নিযুক্ত আছেন অসংখ্য শিক্ষক কর্মচারী। প্রাথমিক বিদ্যালয় মূলত শিক্ষার প্রাথমিক স্তর, মূল স্তম্ভ। শিশুর বিকাশ সাধিত হয় এই স্তরে। কাজেই এই স্তরের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। সূত্র জানায়, দেশে প্রায় ১৫ লাখ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে ৪ লাখ ৭৭ হাজার ১২৫ জনই প্রাথমিক শিক্ষা খাতের। জনবলের বিচারে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সবচেয়ে বড় মন্ত্রণালয়। অথচ এ মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব কোনো ক্যাডার সার্ভিস নেই। মন্ত্রণালয়টির অধিদপ্তরগুলোর ঊর্ধ্বতন পদে আসীন অন্য ক্যাডারের কর্মকর্তারা। সরকারি চাকরি বিধি অনুযায়ী তারা সবাই প্রেষণে কর্মরত থাকায় মূল বেতনের সঙ্গে আরও ২০ ভাগ ভাতা নিচ্ছেন।শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়নের জন্য বিধিমালা প্রস্তুত করা হয়েছে, এবং সরকারি কর্মকমিশনে (পিএসসি) তা মতামতের অপেক্ষায় আছে। এ ছাড়া তাঁরা জানিয়েছে যে প্রাথমিক শিক্ষা ক্যাডার সৃষ্টি সংক্রান্ত বিষয়টি সরকারের সিদ্ধান্তের ব্যাপার। এটি অধিদপ্তরের কাজ নয়। কিন্তু সূত্র বলছে এই বিধিমালা বেশ পুরনো, যা আজও কার্যকর হয়নি। পিএসসিতে মতামতের অপেক্ষায় থাকা সংশোধিত নিয়োগ বিধিমালা ১৯৮৫ সালের হালনাগাদ সংস্করণ। ২০০৩ সাল পর্যন্ত সেটি দুবার সংশোধিত হয়েছে। এরপর কয়েক দফায় সংশোধনের উদ্যোগ নিলেও নানা সীমাবদ্ধতায় তা অনুমোদন পায়নি। বিভিন্ন ক্ষেত্রে একইভাবে সীমাবদ্ধতাসহ এবারের বিধিমালাও চ‚ড়ান্ত করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, ক্যাডার পদ দখল। এসব পদ শিক্ষা ক্যাডারের। বিশেষ করে মহাপরিচালক থেকে সহকারী পরিচালক পর্যন্ত অনায়াসে এ ক্যাডার থেকে নিয়োগ পেতে পারে। কিংবা পেশাগত সিঁড়ি তৈরি হলে পদোন্নতির মাধ্যমেও পূরণ করা সম্ভব। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, প্রথমত ৩১৮টি পদ এখনো প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতায় আনা হয়নি। দ্বিতীয়ত, উপপরিচালক পর্যন্ত প্রাথমিক খাতের কর্মকর্তারা পদায়ন পেলেও পরিচালকের ৮টি, দুজন অতিরিক্ত মহাপরিচালক এবং মহাপরিচালক পদ প্রশাসন ক্যাডারের দখলে আছে। আর প্রস্তাবিত বিধিমালায় মহাপরিচালকের পদ সম্পর্কে প্রেষণ উলে­খ করা হলেও ক্যাডার বলা হয়নি। কিন্তু পরিচালক পর্যন্ত বাকি ১০টি পদে ‘প্রশাসন’ ক্যাডারের কথা উলে­খ আছে। ফলে একদিকে শিক্ষা ক্যাডারের পদগুলো দখল হয়ে যাচ্ছে। আরেকদিকে প্রাথমিক শিক্ষায় নিয়োজিতদের ওপরে ওঠার পথও রুদ্ধ হচ্ছে। শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে শুধু শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যেই বৈষম্য প্রকট নয়, মহামারীকালে শিক্ষার্থীদের মধ্যেও সুস্পষ্ট বৈষম্য পরলক্ষিত হচ্ছে। জানা যায়, শহরকেন্দ্রিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষা কার্যক্রমে সব সময়ই এগিয়ে থাকে। সবার জন্য নূন্যতম সুযোগগুলো নিশ্চিত না করার ফলে গ্রাম-শহরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং ধনী-গরিবের বৈষম্য আরও বাড়ছে। এছাড়া দেশে দক্ষ শিক্ষকদের প্রণোদিত করা হচ্ছে না বলেও অভিযোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে যোগ্যরা নানাভাবে বৈষম্যের শিকার হয়। দেখা যায়, শিক্ষকদের মধ্যে যাঁরা রাজনীতি করেন, তাঁদেরই দাপট বেশি। প্রায় শোনা যায়, বিজ্ঞান, গণিত, ইংরেজি শিক্ষকদের মধ্যে যাঁরা ভালো পড়ান তাঁদের উৎসাহিত করা হবে, তাঁদের বয়সও বাড়ানো হবে। কিছু হয়েছেও। তবে কিন্তু কার্যকর ফল এখনো খুব একটা দেখা যায়নি। জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচি, ইউকেএইড, জার্মানির জিআইজেডের তত্ত¡াবধানে ক্লাসরুমকে উন্নত করার জন্য, ডিজিটাল করার জন্য প্রচুর অনুদান দেওয়া হচ্ছে, সরকারও বরাদ্দ বাড়িয়েছে। কিন্তু দৃশ্যমান উন্নতি এখনো অনুপস্থিত। রিপোর্ট বলছে, পুলিশের পরপরই শিক্ষা বিভাগ সবচেয়ে দুর্নীতিপরায়ণ বিভাগ। এই দুর্নীতি আমরা রোধ করতে পারছি না যেমন সত্য, আরেক সত্য হচ্ছে, আমাদের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে লেখাপড়ার মান প্রচন্ডভাবে নেমে গেছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com