সোমবার, ২২ জুলাই ২০২৪, ০৪:২৯ অপরাহ্ন

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলবে ২২ ফেব্র“য়ারি, প্রাথমিকের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দুই সপ্তাহ পর

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

এফএনএস: আগামী ২২ ফেব্র“য়ারি মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হচ্ছে। তবে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলার বিষয়ে আরও দুই সপ্তাহ পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে অনলাইন ব্রিফিংয়ে শিক্ষামন্ত্রী এসব কথা জানান। করোনাভাইরাস সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, যেসব শিক্ষার্থী দুই ডোজ টিকা পেয়েছে, তারা সশরীরে ক্লাসে যেতে পারবে। তবে যারা এখনও দুই ডোজ টিকা পায়নি, তারা অনলাইনে ক্লাস করবে। দীপু মনি বলেন, ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী মাধ্যমিক পর্যায়ের মোট শিক্ষার্থী প্রায় এক কোটি ২৮ লাখ। তাদের মধ্যে ২৬ লাখ ৫৭ হাজার শিক্ষার্থী প্রথম ডোজের টিকা পেয়েছে। দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছে ৩৪ লাখ ৫০ হাজার শিক্ষার্থী। আগামী ২১ ফেব্র“য়ারির মধ্যে প্রথম ডোজ পাওয়া শিক্ষার্থীদের দ্বিতীয় ডোজের আওতায় আনা হবে। তিনি বলেন, করোনার কারণে যেহেতু এক মাস শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল, তাই যেখানে শেষ হয়েছিল, সেখান থেকে শুরু করা হবে। আগের চেয়ে ক্লাস সংখ্যা বাড়ানো হবে। দ্রুত সময়ের মধ্যে চলতি বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের সংক্ষিপ্ত সিলেবাস শেষ করা হবে। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাসে পাঠদান পরিচালনা করতে হবে। এ বিষয়ে কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না। বর্তমানে ১২ বছরের নিচে শিক্ষার্থীদের করোনার টিকার আওতায় আনার চেষ্টা চলছে। এ বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও কাজ করছে। তারা অনুমোদন দিলে, আমরাও শিশুদের টিকার আওতায় আনার কার্যক্রম শুরু করবো। এদিকে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা নিতে দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে বৈঠক করা হবে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, যে সিলেবাসে ২০২১ সালের এইচএসসি-সমমান পরীক্ষা হয়েছে সে সিলেবাসে যেন সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হয় সেটি নিশ্চিত করতে এ বৈঠক করা হবে। তিনি বলেন, আমরা যে সিলেবাসে গত বছরের এইচএসসি পরীক্ষা নিয়েছি তার ওপর সকল সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে ভর্তি পরীক্ষা নিতে বলা হবে। আমরা আশা করি তারা আমাদের অনুরোধ মেনে নেবেন। পরবর্তী ক্লাসের জন্য যতটুকু প্রয়োজন তার ওপর সংক্ষিপ্ত সিলেবাস তৈরি করা হয়েছে। তাই এর ওপর ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করলে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। তিনি বলেন, আমরা ইতোমধ্যে গুচ্ছভর্তি পরীক্ষা আয়োজনকারীদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। বুয়েটসহ আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়েছে। সবার সঙ্গে একত্রে আলোচনা করতে আগামী সপ্তাহের মধ্যে দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে বসে এ বিষয়ে চ‚ড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে যেন সমন্বয় করে ভর্তি কার্যক্রম শুরু করে সে বিষয়েও পরামর্শ দেওয়া হবে। চলতি বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা কবে হবে- জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, চলতি বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা জুন থেকে আগস্টের মধ্যে শেষ করা হবে। তাদের সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা নেওয়া হবে। তবে পরীক্ষায় কোনো বিষয় বাদ দেওয়া হবে কিনা সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। পরীক্ষার আগে সেটি জানিয়ে দেওয়া হবে। এদিকে নতুন কারিকুলাম আগামী ২২ ফেব্র“য়ারি থেকে পরীক্ষামূলকভাবে শুরু করা হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। মাধ্যমিক স্তরে ২২ ফেব্র“য়ারি শুরু হলেও প্রাথমিকে তা মার্চ থেকে শুরু হবে। আর নতুন কারিকুলামে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাপ্তাহিক ছুটি দুই দিন কাটাতে পারবেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। আগে ছুটি ছিল শুধু শুক্রবার, এখন শনিবারও ছুটি থাকবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জানায়, ২০২২ সালে নতুন শিক্ষাক্রমের পাইলটিং করার কথা। আর ২০২৩ সাল থেকে পরিমার্জিত নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন শুরু হবে। ২০২৫ সালের মধ্যে মাধ্যমিক পর্যায়ের কারিকুলাম বাস্তবায়ন সম্পন্ন হবে। উচ্চ মাধ্যমিকের একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করা হবে ২০২৬ ও ২০২৭ সালে। নতুন শিক্ষাক্রম অনুসারে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকস্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাপ্তাহিক ছুটি দুই দিন করা হচ্ছে। সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, নতুন কারিকুলাম ট্রাইআউট ২২ ফেব্র“য়ারি থেকে শুরু হবে। প্রাথমিকে মার্চ থেকে শুরু হবে। মাধ্যমিকে ৬২টি এবং প্রাথমিকেও একই সংখ্যায় করার কথা রয়েছে। মহামারির ছুটির আগে ও পরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাধারণ ছুটিগুলো এখনো আছে। সাপ্তাহিক ছুটিও দুই দিন। এ বিষয়ে দুষ্টি আকর্ষণ করা হলে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, প্রাথমিকে শনিবার ছুটি রাখেন না। এখন থেকে রাখবেন সেই সিদ্ধান্ত হয়েছে। আমরা মনে করি, একজন শিক্ষক বা শিক্ষার্থীর সপ্তাহে দুটা দিন…, একটু যদি ব্রেক না হয়। এখন তো কম সময়ে ক্লাস করছিল তারপরও একটু ব্রেকটার দরকার আছে। সেটাকে যদি বাদ দিয়ে দিতে পারতাম, তাহলে কয়েকটা দিন বেশি পেতাম। মাসে চারটা দিন বেশি পেতাম সেটা ঠিক। আবার ধর্মীয় কিছু ছুটি আছে, নানা রকম বিষয় আছে। তিনি বলেন, আমাদের যেগুলো জাতীয় দিবস, সেই দিনে খুলে রাখার কথা ভাবিনি। জাতীয় দিবসে অনেক সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা থাকে। কিন্তু শ্রেণিকক্ষে পাঠদান হয় না। শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, রিকভারি প্ল্যানের মধ্যে যদি দেখি যেকোনো জায়গায় দিন কমালে আরও বেশি সুবিধা হবে, সেটা ভেবে দেখব। কিন্তু ঢালাওভাবে ভাবতে পারছি না। কারণ যারা কাজটি করেন তাদেরও তো সঠিকভাবে ডেলিভারি দিতে হবে। অনলাইনের চাপটাও আছে। শিক্ষকেরা ক্লাসেও পড়িয়েছেন আবার অনলাইনেও ক্লাস নিয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব আবু বকর ছিদ্দিকী, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ, কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের সচিব (চলতি দায়িত্ব) তারিকুল ইসলাম প্রমুখ। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে গত ১৩ জানুয়ারি থেকে ১১ দফা বিধিনিষেধ আরোপ করে সরকার। এরপর ২১ জানুয়ারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধসহ নতুন করে পাঁচ দফা নির্দেশনা দেয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। তাতে গত ৬ ফেব্র“য়ারি পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। পরে আরও দুই সপ্তাহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com