মঙ্গলবার, ০১ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৫৩ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
দেশের সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে গেছে হাসিনার স্বৈরতন্ত্র: কূটনীতিকদের ইউনূস ভারতে নারী চিকিৎসককে ধর্ষণ-হত্যার প্রতিবাদে শাটডাউন কর্মসূচির ঘোষণা চিকিৎসকদের নলতা আহসানিয়া মিশন রেসিডেনসিয়াল কলেজের অধ্যক্ষের দুর্নীতি ॥ উত্তাল নলতা ॥ শিক্ষক কর্মচারীরা মতবিনিময় করলেন ডাঃ শহিদুল আলম ও চেয়ারম্যান আজিজুর রহমানের সাথে মহামারীর দ্বারপ্রান্তে গাজা আলোচনায় থাইল্যান্ড ॥ বন্দী থাকসিন মুক্ত হরিনগর বাজারে ক্ষতিগ্রস্ত দোকানদের মাঝে নগদ অর্থ প্রদান পাইকগাছায় একটি বাঁশের সাঁকো পারাপারে এলাকাবাসীর চরম ভোগান্তি মাথাভারি হচ্ছে প্রশাসনের ॥ বাড়ছে সরকারের দু:চিন্তা ডুমুরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান গাজী এজাজ আহমেদ এর পদত্যাগ দাবীতে-মানববন্ধন চাম্পাফুল ইউনিয়ন বিএনপির আয়োজনে শান্তি সমাবেশ অনুষ্ঠিত

সংসদ নির্বাচনে ইভিএম বাড়ছে সংশয়

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় রবিবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২২

জি এম শাহরেওয়াজ ঢাকা থেকে \ আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করা নিয়ে সংশয় বাড়ছে। এ ইস্যুতে রাজনৈতিক সমঝোতায় না পৌঁছানো, ইভিএম ত্র“টিমুক্ত এটির নির্ভরযোগ্য অবস্থান ইসির পক্ষ থেকে পরিস্কার করতে না পরার ব্যর্থতা এবং সর্বপরি আস্থাহীনতা – এটাই সংশয়ের কারণ বলে জানা গেছে। সূত্রমতে, শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ছাড়া বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল এ প্রযুক্তির বিপক্ষে। শুধু কি তাই; সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, শিক্ষাবিদ, এনজিও প্রতিনিধি ও সিনিয়র সাংবাদিকরাও ইভিএমে সুষ্ঠু ভোট নিয়ে সংশয়ে। দেখছেন নানা দুরভিসন্ধি। ফলে তিনশ সংসদীয় আসনে ইভিএম ব্যবহারের জন্য বিদায়ী কে এম নুরুল হুদা কমিশনের রেখে যাওয়া পরিকল্পনাটি নানা বিতর্ক ও বিরোধীতার মুখে ভেস্তে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। নানা বিতর্ক ও বিরোধীতা উপেক্ষা করে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম নির্বাচন করা হলে সেটি একশটি আসনের কম হবে। এদিকে, গত ২৭ ফেব্র“য়ারি শপথ নিয়েছেন কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধিন পাঁচ সদস্যের কমিশন। এখনও তারা দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ইভিএম যুক্ত করে ভোট আয়োজন করবেন কি না – এ নিয়ে কাজ শুরু করেনি। তবে নির্বাচন কমিশন সচিবালয় (ইসি) ইভিএমের প্রাথমিক সম্ভাব্যতা যাচাই করেছে। সেখানে একশটির কম আসনে এ প্রযুক্তি ব্যবহার করতে এখন সক্ষম বলে ইসির একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। অথচ তিনশ সংসদীয় আসনে ইভিএমে নির্বাচন করার উদ্দেশ্যে এই প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়েছিল। এটির উদ্যোক্তা ছিলো এক-এগারো সেনা-সমর্থিত তত্বাবধায়ক সরকারের পুর্নগঠিত ড. শামসুল হুদা কমিশন। কিন্তু নানামুখী বিতর্কের কারণে পুরো প্রক্রিয়াটি এখন হযবরল অবস্থায়। এটি আরও বেশি ফিকে হয়ে আসছে নতুন কমিশন পরিকল্পনা ছাড়াই বিভিন্ন নাগরিকদের সঙ্গে সংলাপে বসে ইভিএমের বিপক্ষে তাদের অবস্থান তুলে ধরায়। এ প্রসঙ্গে সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক আবু সাঈদ খান বলেছেন, গত সিটি নির্বাচনে আমরা ভোটটি আমি দিতে পারেনি; এটাই আমার ব্যর্থতা। কারণ নির্বাচনটি ইভিএমে হয়েছিল। আমি ভোটকক্ষের বুথে গিয়ে দেখি সেখানে একজন বসে আসেন; আমার ভোটটি তিনিই দিয়েছেন। এটা আমার জন্য ছিল লজ্জার। তাই ইভিএম ত্র“টিমুক্ত মনে হয়নি। এটি ব্যবহারের আগে ভোটাধিকার প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। ইসি সূত্রমতে, এই পরিস্থিতি উত্তরণে ইভিএম বিষয়ে অভিজ্ঞ ও দেশের কারিগরি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে সভা করবে নতুন কমিশন। বিভিন্ন অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপ শেষে এ ইস্যুতে মতবিনিময় করবেন তারা। জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, ইভিএমে আমরা চাইলেও তিনশ সংসদীয় আসনে নির্বাচন করতে পারব না। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৩ সালের শেষে অনুষ্ঠিত হবে। এখন পর্যন্ত ইসির কাছে দেশড়টি ইভিএম আছে। এগুলোকে সঠিকভাবে কাস্টমাইজ করে সংসদ নির্বাচনের উপযোগী করা হলেও ৭০ থেকে ৮০টির বেশি আসনে নির্বাচন করা সম্ভব হবে না। নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, ইভিএম নিয়ে প্রাথমিক সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়েছে। সেখানে একশটি আসনে করাও চ্যালেঞ্জ। আর তিনশ আসনে এটাকে ব্যবহার করে নির্বাচন করতে চাইলে এখনিই ক্র্যাশ প্রোগ্রাম হাতে নিয়ে মাঠে নেমে পড়তে হবে। অন্যথায় ব্যালটেই নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। তিনি বলেন, আগামী সংসদ নির্বাচন ইভিএমে হবে কি না এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। এ বিষয়ে অভিজ্ঞদের সঙ্গে বসে তাদের পরামর্শ নিয়ে আরও পরে চূড়ান্ত বলা যাবে আগামী নির্বাচন ইভিএমে করা সম্ভব কি না ? এনআইডির সিস্টেম ম্যানেজার আশরাফুল ইসলাম বলেন, ইভিএম নিয়ে এখনও কোনো অগ্রগতি নেই। কমিশন যে সিদ্ধান্ত নিবেন তার আলোকে আমরা অগ্রসর হব। তবে তিনশ আসনে ইভিএমে নির্বাচন করতে চাইলে সাড়ে ৪লাখ ইভিএম লাগবে। আছে দেড় লাখ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইসির এ কারিগরি কমিটির সর্বশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১৮ সালের ৭ নভেম্বর। সমপ্রতি আরেকটি সভায় আগের সভার সিদ্ধান্তগুলোর অগ্রগতি তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, ওই সভার বেশিরভাগ সিদ্ধান্তই বাস্তবায়ন হয়েছে। বর্তমানে ইভিএম কাস্টমাইজেশন ইসির নিজস্ব কর্মকর্তা দিয়েই শুরু হয়েছে। ইভিএমে ভিভিডিএটি (ভোটার ভেরিফিকেশন ডিজিটাল অডিট ট্রায়াল) প্রযুক্তির ব্যবহার হচ্ছে। এতে ভোটাররা কোন প্রতীকে ভোট দিচ্ছেন তা স্কিনে দেখতে পাচ্ছেন। ‘আপনার ভোটটি সম্পন্ন হয়েছে’ এমন শব্দ শুনতে পাচ্ছেন। এছাড়া কারিগরি কমিটির উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী মারা যাওয়ায় ওই পদটি বিলুপ্তির প্রস্তাব আসে। একই সঙ্গে কয়েকজন সদস্যের চাকরিগত অবস্থান পরিবর্তন হওয়ায় কমিটির পুনর্গঠনের বিষয়ে আলোচনা হয়। সূত্র আরও জানায়, নির্বাচনে ভোটার দ্রুত শনাক্ত করার বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসে। একই সঙ্গে ইভিএম নিয়ে এখনো বিভিন্ন মহলে বিতর্ক থাকায় তা নিরসনের ওপর জোর দেওয়া হয়। সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেন, ইভিএম নিয়ে এখন প্রশ্ন নেই বললেই চলে। অনেক দল রাজনৈতিক কৌশলগত কারণে এ প্রযুক্তি নিয়ে বক্তব্য দিচ্ছে। আমরা ইভিএম আরও গ্রহণযোগ্য করতে হ্যাকারদের আহŸান করতে পারি। হ্যাকাররা ইভিএম হ্যাক করার চেষ্টা করবে। তারা যদি সফল হয় তাহলে তাদের পুরস্কৃত করা যায়। তিনি বলেন, হ্যাকাররা চেষ্টা করলে হয়তো কিছু ত্রুটি বের করতে পারবে। ওইসব ত্রুটি সমাধান করতে হবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ ধরনের প্রচলন রয়েছে। প্রযুক্তিতে এ কৌশলের প্রয়াগ দরকার। তিনি আরও বলেন, নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব ‘রিচার্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সেল’ গঠন করা যেতে পারে। ওই সেল প্রতিনিয়ত ইভিএম নিয়ে গবেষণা করবে। কীভাবে এ প্রযুক্তির উন্নয়ন করা যায় সেই চেষ্টা করবে। সূত্রমতে, এক-এগারো তত্বাবধায়ক সরকারের পুনগর্ঠিত ড. শামসুল হুদার কমিশন প্রথম ইভিএম প্রযুক্তির উদ্ভাবন করেন। শুরুতে চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনের কয়েকটি ওয়ার্ডে এটি ব্যবহার হয়। পরবর্তী কুমিল­া ও নারায়নগঞ্জ সিটিসহ বেশ কিছু নির্বাচনে পরীক্ষামূলক ব্যবহার করা হয়। পরবর্তীতে কাজী রকিবউদ্দীন কমিশন খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী ও সিলেট সিটিতে ব্যবহার করতে গিয়ে কারিগরি ত্র“টিতে পড়ে পুরো ইভিএম অবস্থান থেকে সরে আসে। সদ্য বিদায়ী কে এম নুরুল হুদা কমিশন এটা ফিরিয়ে এনে ৩০০ আসনে ব্যবহারের চিন্তা করে। এর পেছনে ব্যাপক অর্থ ও শ্রম ব্যয় করলেও বিদায়ের আগে পরিপূর্ণ কিছু পরিকল্পনা রেখে যেতে পারেনি। নতুন কমিশন দায়িত্বে এসে সংলাপে বসছে বিভিন্ন অংশীজনদের সঙ্গে। তিনটি ধাপে সংলাপে বসে ক্ষমতাসীন সমমনা বেশির ভাগ নাগরিকই ইভিএমের বিপক্ষে মত দিয়েছেন। ফলে আগামী সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করতে চাইলে অংশীজনদের মতামতকে উপেক্ষা করে করতে হবে যা কাজি হাবিবুল আউয়াল কমিশনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com