শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৬:৫৭ পূর্বাহ্ন

সর্বোচ্চ ৭৫ কিমি বেগে আঘাত হানে সিত্রাং

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় বুধবার, ২৬ অক্টোবর, ২০২২

এফএনএস: বাংলাদেশের উপক‚লে তাÐব চালিয়েছে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং। ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৭৫ কিলোমিটার বেগে এটি আঘাত হেনেছিল। এর প্রভাবে সারাদেশেই বৃষ্টি হয়েছে। তবে রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে বরিশাল ও মাদারীপুরে। ঘূর্ণিঝড়টির ব্যাপ্তি ছিল ৪০০ কিলোমিটার। অন্যান্য ঘূর্ণিঝড় থেকে একেবারেই ব্যতিক্রম এটি। এটি যখন লঘুচাপ ছিল তখন থেকেই মেঘ ছাড়া শুরু করে। সবশেষ বাংলাদেশের স্থলভাগে এসে নিম্নচাপে পরিণত হয় ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং। এরপর এটি আরও এগিয়ে বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল ও উত্তর-পূর্বাঞ্চল হয়ে শক্তি ক্ষয় করে ভারতের আসামের দিকে চলে যায়। আবহাওয়াবিদ রুহুল কুদ্দুস বলেন, সিত্রাং ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৭৫ কিলোমিটার বেগে আমাদের উপক‚লে আঘাত করে। গোপালগঞ্জে ৭৫ এবং চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, কক্সবাজার, পটুয়াখালীতে বাতাসের সর্বোচ্চ গতি ছিল ৭৪ কিলোমিটার। তিনি জানান, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে গত সোমবার সকাল থেকে গতকাল মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত বরিশালে বৃষ্টি হয়েছে ৩২৪ মিলিমিটার। এই আবহাওয়াবিদ বলেন, ইতিহাসে বরিশালে এত বৃষ্টি আর কখনও হয়নি। এর আগে ২০১৯ সালের ১০ নভেম্বর বরিশালে ২৬২ মিলিমিটার সর্বোচ্চ বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছিল। অন্যদিকে মাদারীপুরে ৩১৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এটাকেও রেকর্ড বলছেন আবহাওয়াবিদ রুহুল কুদ্দুস। তিনি বলেন, এর আগে ১৯৯৫ সালের ১২ জুন মাদারীপুরে সর্বোচ্চ ২৪৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল। এছাড়া ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের কারণে ঢাকায় ২৫৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। তবে এর আগে ঢাকায় ৩৪০ মিলিমিটার বৃষ্টির রেকর্ড রয়েছে। গত সোমবার ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাসে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছিল, গত সোমবার মধ্যরাত থেকে গতকাল মঙ্গলবার সকাল নাগাদ বাংলাদেশের উপক‚ল অতিক্রম করবে ঘূর্ণিঝড়। কিন্তু বাস্তবে এটি গত সোমবার রাত ৯টায় আঘাত হানে। ঘূর্ণিঝড়টি যেভাবে দ্রæত এসেছিল, সেভাবেই দ্রæত চলে যায়। ফলে গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকেই স্বাভাবিক হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আবহাওয়াবিদ রুহুল কুদ্দুস বলেন, গত সোমবার রাত ২টা ৩ মিনিটে গোপালগঞ্জে ৭৫ কিলোমিটার বাতাসের গতিবেগ রেকর্ড করা হয়েছিল। এর আগে বিকেল ৪টায় বরিশালে বাতাসের গতি ছিল ৫২ কিলোমিটার। ৪০০ কিলোমিটারের ব্যাপ্তির একটি ঘূর্ণিঝড়। পইপই হিসাব করে কী আপনি মিলাতে পারবেন? তিনি আরও বলেন, ঘূর্ণিঝড়টি তিনদিন আগে থেকে মেঘ ছাড়া শুরু করে। তাহলে কী আপনি বলবেন সাইক্লোন আঘাত হানা শুরু করেছে। যখন কেন্দ্রটি যায় তখন আমরা বলি এটি অতিক্রম করছে। অনেক সময় ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রে শান্ত বাতাস থাকে, অনেক সময় কেন্দ্র অতিক্রমের সময় ভালো আবহাওয়াও থাকে। সেন্টারের আগে-পরে আবহাওয়াটা বেশি খারাপ থাকে। যদি পুরো ঘূর্ণিঝড়টি অতিক্রমের সময় ধরা হয় তবে, পুরো সময়টা সিগন্যালের মধ্যে রাখতে হবে। রুহুল কুদ্দুস বলেন, পূর্বাভাসের সঙ্গে বাস্তব অবস্থার হেরফের তো একটু হবেই। এ ঘূর্ণিঝড়টি অন্য ঘূর্ণিঝড়ের থেকে ব্যতিক্রম। এটি যখন থেকে লঘুচাপ তখন থেকেই মেঘ ছাড়া শুরু করে। একটা সিস্টেম মেঘ ছেড়ে দিলে তার শক্তি ক্ষয় হতে থাকে। এটি অগ্রসর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনটি অংশে ভাগ হয়ে গিয়েছিল। ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মৃত্যুঞ্জয় মহাপাত্রকে বলা হয় সাইক্লোন ম্যান। তিনিও শেষপর্যায়ে সংশয়ে ছিলেন যে এটি প্রবল ঘূর্ণিঝড় হবে কি না। আবহাওয়াটা অনেক অনিশ্চিত। আপনি একটি মডেল দেখতে পারেন, সেটি মিলে যেতে পারে। মডেলে বিভিন্ন ভেরিয়েশন আছে। এই আবহাওয়াবিদ আরও বলেন, সবকিছু মিলিয়ে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হয়। আমি যখন সিগন্যাল বাড়াবো, সেখানে সরকারের কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ আছে। বিমানবন্দর বন্ধে করে দিতে হয়। সিগন্যালের সঙ্গে অনেক কিছু সম্পর্কিত। তাই পই পই হিসাব করে আপনি মিলাতে পারবেন না। এরসঙ্গে অনেক ফ্যাক্টর আছে। সব ঘূর্ণিঝড়ের প্রকৃতি ভিন্ন জানিয়ে তিনি বলেন, প্রত্যেকটি ঘূর্ণিঝড় তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য নিয়ে আসে। এটাই ঘূর্ণিঝড়ের সৌন্দর্য। সব ঘূর্ণিঝড় যদি একরকম হয়, তাহলো তো পূর্বাভাস দেওয়া সহজ হয়ে যেত। ২০ অক্টোবর আন্দামান সাগর এবং তৎসংলগ্ন দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়। পরে শক্তি সঞ্চয় করে সেটি ২৩ অক্টোবর সন্ধ্যায় ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ে পরিণত হয়। এটি উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিকে এগোচ্ছিল। ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেওয়ার পর উত্তর-পূর্ব দিকে মোড় নিয়ে বাংলাদেশের উপক‚লের দিকে এগোতে থাকে। ঘূর্ণিঝড়টি উপক‚লের কাছাকাছি এলে মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৭ এবং চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৬ নম্বর বিপৎসংকেত দেখাতে বলে আবহাওয়া অধিদপ্তর। সিত্রাং আরও কাছাকাছি আসলে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের বিপৎসংকেত বাড়িয়ে ৭ করা হয়। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, গত সোমবার মধ্যরাত থেকে গতকাল মঙ্গলবার সকালের মধ্যে সিত্রাংয়ের মূল অংশের উপক‚ল অতিক্রম শুরু করার কথা ছিল। কিন্তু শেষের দিকে এটি গতি অনেকটাই বাড়িয়ে গত সোমবার রাত ৯টায় ভোলার কাছ দিয়ে বরিশাল-চট্টগ্রাম উপক‚ল অতিক্রম শুরু করে। পরবর্তী তিন থেকে চার ঘণ্টার মধ্যে উপক‚ল অতিক্রম শেষ করে। এরপর সবশেষ সমুদ্রবন্দরগুলোতে জারি করা বিপৎসংকেত নামিয়ে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত জারি করে আবহাওয়া বিভাগ। তবে অমাবস্যা তিথি ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে এরইমধ্যে উপক‚লীয় এলাকার বিস্তীর্ণ অঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এদিকে প্রাথমিকভাবে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে সৃষ্ট ঝড়ে গাছ পড়ে ও নৌকাডুবিতে ছয় জেলায় অন্তত ১৯ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com