দৃষ্টিপাত রিপোর্ট ॥ কয়েক বছর আগেও কুল ছিল বসতবাড়ী সংলগ্ন মৌসুমী ফল, পারিবারীক পরিবেশে, বাড়ীর ভিটা এলাকাতে রান্না ঘরের বা বরান্দার ধারে একটা দুইটা কুল গাছের অস্তিত্ব পরিলক্ষিত হতো। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে আর বাস্তবাতার নিরিখে কুল এবং কুল চাষ সীমা অতিক্রম করে অর্থনৈতিক গুরুত্বে পৌছেছে এবং বাণিজ্যিক ভাবে চাষ হচ্ছে কুলের। দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে কুল চাষের এবং চাষীরা। সাতক্ষীরার বাস্তবতায় কুল বানিজ্যিক পণ্যে পরিনত হওয়ায় দৃশ্যতঃ লাভজনক চাষে পরিনত হয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে কুল চাষে নামতে অনেক চাষী অনাগ্রহী ছিল কারন উৎপাদন, বাজার, বিক্রি, চাষ খরচ নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দে থাকলেও বর্তমান বছর গুলোতে সাতক্ষীরার কুল চাষে বিপ্লব ঘটেছে। এই জেলায় কুল চাষে বিপুল সংখ্যক চাষী সংশ্লিষ্ট হয়েছে এবং কুল ব্যবসায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ব্যবসায়ীরা অংশ গ্রহনের ফলে জেলার ঘরে ঘরে কুল কেন্দ্রীক অর্থনীতির সুবাতাস প্রবাহীত হচ্ছে। সাতক্ষীরার কুল জেলার সীমানা পেরিয়ে রাজধানী ঢাকা সহ বিভাগীয় শহর গুলোতে বাজার দখল করেছে। যতই দিন যাচ্ছে ততোই সাতক্ষীরায় কুল চাষ, কুল বাজার ও কুল ব্যবসা সম্প্রসারিত হচ্ছে। সামান্য খরচ এবং সময়ে উৎপাদন সেই সাথে লাভ জনক হওয়ায় জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল গুলোতে ছেয়ে গেছে কুল বাগান। বর্তমান কুলের মৌসুম চলছে। এক সময়ে টক এবং বিলতি বা মিষ্টি এই দুই নামের কুলের উপস্থিতি ছিল তারপর বানিজ্যিক পরিস্থিতি ও ব্যবস্থাপনা সেই সাথে বিভিন্ন জাতের কুল আবিস্কার ও সেই সকর কুল চাষ দৃশ্যতঃ সাতক্ষীরায় সাত থেকে দশ প্রজাতির কুল চাষ হচেছ। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিলাতি মিষ্টি কুল এবং কুলের বিভিন্ন প্রজাতির উৎপাদন ও চাষ বিদ্যমান, আপেল কুল, থাই আপেল, নারকেল, দেশী আপেল, কাস্মীর আপেল, বল সুন্দরী, জেলার দেবহাটার পারুলিয়া এলাকার কুল চাষী একরামুল কবির প্রবাল জানান এক বিঘা জমিতে কুল চাষে খরচ হয় দশ/এগার হাজার টাকা এবং উৎপাদন ভাল হলে পয়ত্রিশ চল্লিশ হাজার টাকার কুল বিক্রি করা যায়। মৌসুমের প্রথম দিকে কুল উৎপাদন করতে পারলে লাভ বেশী হয়, প্রথম দিকে বিলাতি মিষ্টি কুল কেজি প্রতি একশত সত্তর থেকে দুইশত টাকায় বিক্রিয় হয়। বর্তমান মধ্য মৌসুমে সব ধরনের কুলের মুল্য কিছুটা কম, আপেল কুল কেজি প্রতি পঞ্চাশ/ষাট টাকা নারকেল কুল সমমূল্যের। তথ্যানুসন্ধানে জানাগেছে জেলার কলারোয়া, পাটকেলঘাটা,তালা, সদর উপজেলা এবং দেবহাটায় সাম্প্রতিক বছর গুলোতে কুল চাষের ক্ষেত্র বিস্তৃত হয়েছে। খোজ নিয়ে জনাগেছে কালিগঞ্জ এলাকাতেও এবং শ্যামনগর, আশাশুনি উপজেলায় দিনে দিনে বাড়ছে কুল চাষ। পাটকেলঘাটা এলাকার এক চাষী জানান পাঁচ বিঘা জমিতে কুল চাষ অন্তত দুই লক্ষ টাকা লাভ করা সম্ভব। সাতক্ষীরা খুলনা সড়কের পাটকেলঘাটা সড়ক সংলগ্ন এলাকায় সড়কের দুই পার্শ্বে প্রতিদিনই ভ্রাম্যমান কুলদোকান বসছে এবং বিক্রিও ব্যাপ। কুলের অর্থনৈতিক এবং বানিজ্যের মহাসুযেগের পাশাপাশি মানব দেহের জন্য বিশেষ উপকারীও বটে এই ফল। কুল কেবল রসনা বিলাস নয়,বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে অতি পুষ্টিকর এবং ঔষধীগুন সমৃদ্ধ ফল। কুল রক্ত পরিস্কার করে হজম শক্তি বৃদ্ধি করে। পেটে গ্যাস,খাবারের অরুচি দুরীকরন মহাষৌধ হিসেবে কাজ করে কুল। জেলার বিভিন্ন কুল বাগান পরিদর্শন ও কুলচাষীদের সাথে কথা বলে জানাগেছে বিঘা প্রতি একশত দশ হতে একশত ত্রিশ মন ফলন পাওয়া সম্ভব। সাতক্ষীরার কুল চাষীদের প্রত্যাশা কৃষি দপ্তর হতে পর্যাপ্ত সুবিধা বিশেষকরে প্রশিক্ষন ও রোগ বালাই দমন পদ্ধতি বিষয়ে অবহিত করন করা হলে বিশেষ সুবিধা পাওয়া সম্ভব। যতই দিন যাচ্ছে ততোই সাতক্ষীরায় কুল চাছে গতি সঞ্চার হচ্ছে। সাতক্ষীলার অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করছে।