মীর আবু বকর ॥ বাঙালি জাতির প্রাণের উৎসবের দিন পহেলা বৈশাখ। বছরের প্রথম শুধু বাঙালি নয়, বাংলা ভাষাভাষী আদিবাসী ও নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর জন্য অনন্য দিন।নববর্ষই বাঙালি জাতিকে একত্রিতের মাধ্যমে মিলনমেলায় পরিনত করে।বাঙালি জাতি এদিনে ধর্ম, বর্ণ সব কিছুর ঊর্ধ্বে উঠে নববর্ষকে আমন্ত্রণ জানায়।বাঙালি জাতি সকল জরা-জীর্ণকে পিছনে ফেলে সম্ভাবনার নতুন বছরে প্রবেশ করে।পহেলা বৈশাখে বর্ণিল উৎসবে মেতে থাকে পুরো জাতি।পহেলা বৈশাখ একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গড়তে বাঙালি জাতিকে শিক্ষা দেয়। বাঙালি এই প্রাণের উৎসবের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত আবহমান বাংলার কৃষি।পহেলা বৈশাখ শুধু ফসল আর উৎসব নয়, ব্যবসায়ীদের হালখাতার মাধ্যমে নতুন খাতা খোলা হয়। নববর্ষ কেবল উৎসব-আনন্দের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় গ্রামীণ সংস্কৃতি এবং জাতীয় সংস্কৃতির প্রাণ। বিশ্বের সব জাতিই নিজ সংস্কৃতির অঙ্গ হিসেবে বর্ষবরণ পালন করে। সারা দেশের ন্যায় সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে মঙ্গল শোভাযাত্রা, গান পুরস্কার বিতরণ সহ বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে পহেলা বৈশাখ উদযাপন করছে।পহেলা বৈশাখ রবিবার সকাল সাড়ে ৭টায় কালেক্টর চত্বরে আমাদের নিজস্ব ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সব নিদর্শন সাথে নিয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রায় মিলিত হয়। এখানে চোখে পড়ার মত ছিল কৃষকের কৃষিপণ্য,বাউল বাদ্যযন্ত্র, বায়োস্কোপ, গ্রামীণ বধু, চোরকি ঘোরানো,সহ গ্রামীণ ঐতিহ্যর বাহারী বেশ ধারণ। শুধু তাই নয় গ্রামীণ ঐতিহ্য কুলা, বাঁশের বিভিন্ন সমগ্রী, কাঠের তৈরি পন্য সহ ছিল বিভিন্ন প্রাণীর ছবি সম্বলিত পোস্টার লিফলেট।তবে বিগত বছরের ন্যায় গরুর গাড়িও ঘোড়ার গাড়ির উপস্থিতি চোখে পড়েনি। পরে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবিরের নেতৃত্বে কালেক্টর চত্বর থেকে বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়ে শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কে সাংস্কৃতিক ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে মিলিত হয়। পরে শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কে তিন দিনব্যাপী বৈশাখী মেলার উদ্বোধন করেন। এর পূর্বে কালেক্টরেট পার্ক চত্বরে জাতীয় সংগীত, এসো হে বৈশাখ গান সহ বাঙালি সংস্কৃতির বিভিন্ন গান পরিবেশন করা হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন,জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির, পুলিশ সুপার মুহাম্মদ মতিউর রহমান সিদ্দিকী পিপিএম,স্হানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক মাশরুবা ফেরদৌস, বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিক আহমেদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা আনছারুজ্জামান,অতিঃ জেলা প্রশাসক সার্বিক মোঃ সরোয়ার হোসেন, অতিঃ জেলা প্রশাসক রাজস্ব কাজী আরিফুর রহমান, অতিঃ পুলিশ সুপার ডিএসবি মোঃ আতিকুল ইসলাম,অতিঃ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বিষ্ণুপদ পাল,সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ শোইয়েব আহমেদ,বিশিষ্ট খেলোয়াড় আফরা খন্দকার প্রাপ্তি, আফঈদা খন্দকার প্রান্তি,মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদের সাধাঃ সম্পাদক শেখ শরিফুল ইসলাম,জেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ শাহজাহান কবির, সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এস এম আব্দুল্লাহ আল মামুন, জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ডিডি শেখ মোঃ হাসেম আলী, জেলা তথ্য অফিসার মোঃ জাহারুল ইসলাম, টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ ফেরদৌস আরেফিন, জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা মোঃ রিয়াজুল ইসলাম সহ জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ,শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।সঙ্গীত পরিবেশন করেন বিশিষ্ট কন্ঠশিল্পী আবু আফফান রোজ বাবু, চৈতালি মূখাজী, শামীম পারভীন রত্না সহ শিল্পীরা।উল্লেখ্য মুঘল সম্রাট আকবর শাসন আমল থেকে বাংলা নববর্ষ বা পহেলা বৈশাখ উদযাপন হয়ে আসছে। সমগ্র অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন জেলা শিল্পকলা একাডেমীর সাধাঃ সম্পাদক শেখ মুশফিকুর রহমান মিল্টন।