মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫, ১১:২৪ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::

সিলেট বিভাগে এ পর্যন্ত ১০ জনের মৃত্যু

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২১ জুন, ২০২২

এফএনএস: প্রাকৃতিক দুর্যোগে সিলেট বিভাগে এ পর্যন্ত ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে দুই জন, বন্যায় সিলেট সদরে তিন জন, সুনামগঞ্জের ছাতকে তিন জন, মৌলভীবাজারে দুই জন শিশুসহ নয় জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আরেকজন মৃত্যু হয়েছে টিলা ধসে। মৃত্যুদের মধ্যে সাত জন বন্যার পানিতে নিখোঁজ ছিলেন। স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় সিলেট বিভাগে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে বিপর্যয় ঘটে। এতে উপদ্রুত এলাকাগুলোতে মোবাইল নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন রয়েছে। ফলে দুর্গত মানুষের তথ্য দেওয়া-নেওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না। ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে লড়াই করে কোনো মতে বেঁচে থাকা মানুষগুলোকে উপদ্রুত এলাকা থেকে উদ্ধারে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগ দেয় সেনা ও নৌবাহিনী। গতকাল সোমবার থেকে বৃষ্টি না হওয়ায় কমছে বন্যার পানি। আর উপদ্রুত এলাকাগুলোর সঙ্গে ক্রমশ যোগাযোগ বাড়তে থাকায় সিলেট বিভাগের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসছে মৃত্যুর খবর। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সিলেট সদর উপজেলায় পৃথক ঘটনায় দাদী-নাতিসহ তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে কান্দিগাঁও ইউনিয়নে নিহতরা হলেন- সদর উপজেলা ছাত্রলীগ নেতা এ কে আবুল কাশেম (২৪) ও তার দাদী ছুরেতুন নেছা (১০৫)। তাদের বাড়ি সুজাতপুর গ্রামে। অপর ব্যক্তি হলেন আব্দুল হাদি (১৮)। তিনি নলকট গ্রামের বাসিন্দা। এছাড়া গত রোববার বন্যার পানিতে পড়ে থাকা বিদ্যুতের তারে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে এক কিশোরের মৃত্যুর খবরটিও নিশ্চিত করেছেন জালালাবাদ থানার ওসি নাজমুল হুদা। তিনি বলেন, এ কয়দিনে বিদ্যুৎহীন থাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক ছিল না। যে কারণে অনেক খবর মিলেনি। এখন আস্তে আস্তে চারদিক থেকে প্রকৃত অবস্থার খবর আসবে। এছাড়া আবুল কাশেম নামে এক ব্যক্তি তার পরিবারের সঙ্গে মদীনা মার্কেট এলাকায় বসবাস করেন। বন্যার পানি বাড়ার খবর পেয়ে গ্রামের বাড়ি থেকে বৃদ্ধ দাদী ও চাচাতো বোনকে উদ্ধার করতে বৃহস্পতিবার সকালে একটি নৌকা নিয়ে যান। নৌকা নিয়ে দাদীকে নিয়ে শহরে ফেরার পথে সুজাতপুর আইডিয়াল স্কুল এলাকায় পানির ¯্রােতে নৌকাটি ডুবে যায়। এ সময় তার ছোট চাচাতো দুই বোন উল্টে যাওয়া নৌকায় ধরে প্রাণে বাঁচলেও দাদী নাতীকে ধরে বাঁচার চেষ্টা করেন। এতে দু’জনই পানিতে তলিয়ে যান। শুক্রবার দাদী ছুরেতুন নেছার লাশ ভেসে উঠে। গত রোববার সকালে আবুল কাশেমের লাশ একই জায়গায় ভেসে উঠে। দু’জনের লাশ দাফন সম্পন্ন হয়েছে। সিলেট সদরের কান্দিগাঁও ইউনিয়নের নলকট গ্রামে গত বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বন্যার পানির তীব্র ¯্রােতে আব্দুল হাদি (১৮) নামে এক তরুণ ভেসে যান। গত রোববার তার বাড়ির পাশে লাশ ভেসে উঠে। হাদি নলকট গ্রামের প্রবাসী কাছা মিয়ার ছেলে। নলকট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মালিক মামুন লাশ উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। সুনামগঞ্জের ছাতক পৌরসভার কানাখালি রোডের আখড়া এলাকায় পিযুষ (৪০) ও ছৈলা-আফজালাবাদ ইউনিয়নের রাধানগর এলাকার জুনেদ (২৭) পানিতে ডুবে মারা গেছেন। জুনেদ গত শনিবার ছাতক থেকে বাড়িতে ফেরার পথে নিখোঁজ হন। গত রোববার তার লাশ উদ্ধার করা হয়। ছাতক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মামুনুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এদিকে ছাতকের জাউয়া বাজার থেকে নিখোঁজ স্কুলছাত্রী হানিফা বেগমের (৯) লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গত রোববার বিকেলে পাশের কাইতকোনা এলাকা থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহত হানিফা বেগম শান্তিগঞ্জ উপজেলার বড়মোহা গ্রামের মৃত জিলু মিয়ার মেয়ে। মামার বাড়িতে বেড়াতে এসে বানের পানিতে ডুবে মারা যায় হানিফা। নিহত হানিফার মামা ছফেদ আলী পীর জানান, হানিফাসহ তারা নৌকাযোগে বাড়ি ফিরছিলেন। জাউয়া ডিগ্রি কলেজের কাছে তাদের বহনকারী নৌকা ডুবে যায়। নৌকার আরোহীরা সবাই রক্ষা পেলেও হানিফাকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। সে বানের পানিতে ভেসে যায়। ঘটনার দু’দিন পর গত রোববার বিকেলে তার লাশ ভেসে উঠে। খবর পেয়ে তার লাশ স্বজনরা উদ্ধার করে নিয়ে আসেন। এ ঘটনায় হানিফার পরিবারে শোকের মাতম চলছে। অপরদিকে, মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের আদিত্যের মহাল এলাকায় ঢলের পানিতে গত শনিবার তলিয়ে যাওয়া এক শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গত রোববার তার লাশ ভেসে উঠে। তবে ওই শিশুর নাম জানা যায়নি। এছাড়া উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের আয়েশাবাদ চা বাগানে টিলা ধসে রাজন ব্যানার্জি (৬০) নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া গত শনিবার নগরের খরাদিপাড়া এলাকায় বন্যার পানিতে পড়ে থাকা টিভির বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে টিটু চৌধুরী (৩৫) মারা যান। তিনি সুনামগঞ্জের শাল­া উপজেলার হরিপুর গ্রামের ধীরেন্দ্র চৌধুরীর ছেলে। তবে টিটু চৌধুরী তার মাকে নিয়ে খরাদিপাড়া এলাকায় ভাড়া থাকতেন। টিটু চৌধুরী ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ছিলেন বলেও জানা গেছে। অপরদিকে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি সুকান্ত চক্রবর্তী জানান, একজন নিখোঁজের খবর পেয়েছি। ত্রাণ বিতরণ কাছে ব্যস্ত থাকায় এ বিষয়ে তিনি বিস্তারিত তথ্য জানাতে পারেননি। গোয়াইনঘাট থানার ওসি কে এম নজরুল ইসলাম, কানাইঘাট থানার ওসি তাজুল ইসলাম এবং এসএমপির দক্ষিণ সুরমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামরুল কামরুল হাসান তালুকদার বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বন্যায় এখনো নিখোঁজের বা লাশ উদ্ধারের খবর পাননি।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com