শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৯:০৯ পূর্বাহ্ন

সুরের রানীর বিদায়

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় সোমবার, ৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

এফএনএস : রোববার যখন সন্ধ্যা নামলো মন্দ-মন্থরে, সব সংগীত যেন সত্যিই ইঙ্গিতে থেমে গেল। সুরসম্রাজ্ঞী লতা মঙ্গেশকরের দেহ পঞ্চভূতে বিলীন হয়ে গেল মুম্বইয়ের শিবাজী পার্কে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দিলি− থেকে উড়ে এসে শেষ শ্রদ্ধা জানালেন প্রয়াত কিংবদন্তিকে। শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করলেন মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ভব ঠাকরে, এনসিপি নেতা শারদ পাওয়ার, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পীযূষ গোয়েল, সস্ত্রীক ক্রিকেট তারকা শচীন টেন্ডুলকর, অভিনেতা শাহরুখ খান, শ্রদ্ধা কাপুরসহ বহু বিশিষ্টজন। শিবাজী পার্কে উজ্জ্বল আলো জ্বলছিল। জনতার কণ্ঠে ধ্বনি ছিল- ‘যব তক চাঁদ সুরজ রহেগা লতা দিদি অমর রাহেগা’। সেনাবাহিনীর গান-স্যালুট, লতার সেই বিখ্যাত গান- ‘মেরে বতন কি লোগ’-এর সুরের মধ্যে দিয়ে চিতাগ্নি জ্বলে উঠলো। আর মাইক্রোফোনে বেজে উঠলো লতার সেই বিখ্যাত গান- ‘যব নাম গুম হো জায়গা, চেহেরা বিছল জায়েগা, মেরি আওয়াজ মেরি পেহচান হ্যায়…’ সুরের মধ্যে। গানের মধ্যে বেঁচে থাকবেন লতা, যিনি গতকাল স্থানীয় সময় সকাল আটটা বারো মিনিটে মুম্বইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে প্রয়াত হন। মাসখানেক এই হাসপাতালে ছিলেন তিনি। করোনা নিয়ে ভর্তি হন। পরে তার নিউমোনিয়া হয়। আইসিইউ হয়ে তিনি পৌঁছান ভেন্টিলেটরে। তবে, একটু সুস্থ হওয়ার পর তাকে ভেন্টিলেটর মুক্ত করা হয়েছিল। শনিবার দুপুর থেকে আবার অবস্থা সংকটজনক হওয়ার পর আবার ভেন্টিলেটরে পাঠানো হয়। রোববার ভোরে শেষবারের মতো জ্বলে উঠেছিলেন চিকিৎসায় সাড়া দিয়ে। তারপর ঠিক আটটা বেজে বারো মিনিটে সব শেষ। একটি যুগের অবসান। ছত্রিশটি ভাষায় গান গেয়েছেন লতা। তিন হাজারের বেশি গান তার কণ্ঠে। বাংলা গান গেয়েছিলেন একশ’ পঁচাশিটি। বাগদেবীর বরপুত্রী ছিলেন লতা। সরস্বতী পুজোর বিসর্জনের দিন বিসর্জিত হলেন ভারতের সরস্বতী। সত্তর বছর তিনি গান গেয়ে গেছেন। প্রজন্মের পর প্রজন্ম তার গান শুনে বড় হয়েছে। অভাব অনটনের সংসারে তিনি মারাঠা ছবিতে শিশুশিল্পী হিসেবে অভিনয় শুরু করেন। তারপর মারাঠি ছবির প্লেব্যাক গায়িকা। গুলাম হায়দার তাকে ফিল্মিস্থান স্টুডিওতে নিয়ে যান পরিচালক শশধর মুখোপাধ্যায়ের কাছে একটি ছবির প্লেব্যাক সিঙ্গার হিসেবে তাকে নেয়ার জন্য। কিন্তু, চিকন গলা এই যুক্তি দেখিয়ে তাকে ফিরিয়ে দেয়া হয়। সুরকার গুলাম হায়দার বলেছিলেন, একদিন আসমুদ্র হিমাচল নতজানু হবে এই কণ্ঠের কাছে। শুধু আসমুদ্র হিমাচল নয়, গোটা বিশ্ব কুর্নিশ করেছে লতা মঙ্গেশকরকে। বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করেন লতাজির উদ্দেশ্যে। যে পাকিস্তান একদা বলেছিলো, তোমাদের লতা মঙ্গেশকরকে আমাদের দাও, কাশ্মীর তোমরা নিয়ে নাও- সেই রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করেন প্রয়াত লতাকে। আমেরিকা, বৃটেন, কানাডা থেকেও শোক বার্তা আসে। ভারতের রাজনীতিকরাও শোক জানিয়ে টুইট করেন। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সোমবার রাজ্যে অর্ধদিবস ছুটি ঘোষণা করেন। পনেরো দিন রাজ্যের সর্বত্র লতার গান বাজানোর নির্দেশ দেন। রোববার ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতাল থেকে লতার মরদেহ আনা হয় পেডার রোডের প্রভুকুঞ্জে। তারপর পেডার রোড থেকে শিবাজী পার্ক পর্যন্ত চোখের জলে শেষ যাত্রা। অসংখ্য সাধারণ মানুষ পা মিলিয়েছিলেন শেষ যাত্রায়। অভিনেতা অমিতাভ বচ্চন, রণবীর কাপুর, অলোকা ইয়াগ্নিক তাদের শেষ শ্রদ্ধা জানিয়ে যান। তারপর শবদেহ বহনকারী সেনাবাহিনীর শকটে লতার দেহ নিয়ে যাওয়া হয় শিবাজী পার্কে। পেডার রোড থেকে শিবাজী পার্ক পর্যন্ত সমস্ত ট্রাফিক সিগন্যাল সবুজ করে দেয়া হয়। রাতে সূর্য পশ্চিমবহিনী হওয়ার পর লতার ভাই হৃদয়নাথ মঙ্গেশকরের পুত্র আদিনাথ তার মুখাগ্নি করেন। বসন্ত আসার আগেই ভারতের কোকিলকণ্ঠী লতা মঙ্গেশকর বিরানব্বই বছর বয়সে চলে গেলেন। রেখে গেলেন অগণিত গান। গানের মধ্যে বেঁচে থাকবেন লতা। একদিন খেতে পেতেন না তিনি। মালাড থেকে পায়ে হেঁটে স্টুডিওতে আসতেন। আজ তিনি বিশ্বের হৃদয়ে। লতা মঙ্গেশকরদের মৃত্যু হয় না। একটি যুগের অবসান হয় এই প্রয়াণে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com