জি এম শাহনেওয়াজ ঢাকা থেকে ॥ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে আয়োজনে মন্ত্রণালয় ও দপ্তরগুলোর দায়িত্ব জানিয়ে দিল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। উপস্থিত সচিবসহ দপ্তরগুলোর কর্মকর্তারা সংবিধানের মধ্যে থেকে তাদের দায়িত্ব পালনের আশ্বাস দিয়েছেন ইসিকে। বলেছেন, কমিশন যেভাবে চাইবেন তার আলোকে সহায়তা করতে প্রস্তুত আছেন। সভায় পোষ্টাল ব্যালটে ভোটদান দিয়ে জোরালো আলোচনা হয়েছে। কমিশন থেকে এই প্রথম বিদেশে অবস্থানরতর প্রবাসী বাঙালিদের কিভাবে ভোটদানে সহায়তা করা যায় সেজন্য পরারাষ্ট সচিবের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। জবাবে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, প্রবাসীরা যাতে ভোটদানে উৎসাহিত হন, – সেজন্য বিদেশে বাংলাদেশী দূতাবাসগুলোতে প্রজেকশনের মাধ্যমে সব ধরণের প্রচারণামূলক কর্মযজ্ঞ চালানোর আশ্বাস দেয়া হয় ইসিকে। জাতীয় পরিচয়পত্রধারী প্রবাসী বাঙালিদের জন্য এ ধরণের ইতিবাচক উদ্যোগ এই প্রথম গ্রহণ করতে যাচ্ছে কমিশন। সারাবিশ্বের মধ্যে মধ্য প্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবে সবচেয়ে বেশি বাঙালি অবস্থান করছে। প্রবাসীর সংখ্যা ১ কোটির উপরে। ইসির সংশ্লিষ্টরা জানান, সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতির বিষয়ে সমন্বিতভাবে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়-বিভাগ এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানদের সঙ্গে সভা করে থাকে ইসি। এবারই প্রথম পৃথক পৃথক আলোচনা করছে কমিশন। জাতীয় নির্বাচনের আগে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ সার্বিক বিষয় নিয়ে মূল ফোকাসে থাকেন গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানগণসহ স্বরাষ্ট মন্ত্রণালয়। প্রাপ্তস তথ্যমতে, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার প্রস্তুতির মধ্যে বুধবার (১ নভেম্বর) নির্বাচন সংশি¬ষ্ট সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সংস্থার প্রধানদের নিয়ে এক সভার আয়োজন করে ইসি। এর আগে ৩০ অক্টোবর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে সভা করে ইসি। বুধবার সচিবদের সঙ্গে সভায়ন নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ মাথায় রেখেই নির্বাচনের জন্য সকল ধরণের প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন থেকে তাদেরকে বলা হয়েছে, কিছুদিনের মধ্যেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। দেশে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর হরতাল ও অবরোধ চলছে। এতে নির্বাচনী কার্যক্রম যাতে বাঁধাগ্রস্ত না হয়, সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। নির্বাচনী সকল মালামাল সঠিক সময়ে কীভাবে পৌঁছানো যায় তার পদক্ষেপ নিতে হবে। এছাড়া নির্বাচনে সংঘটিত অপরাধের বিচার, লেভেল পে¬ইং ফিল্ড তৈরি ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভোটের মাঠে পর্যাপ্ত সংখ্যক ম্যাজিস্ট্রেট রাখতে নির্দেশ দিয়েছে ইসি। গত একাদশ জাতীয় সংসদের তুলনায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সংখ্যা এবার বাড়ানোর হবে। জন-প্রশাসন মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে। তফসিল ঘোষণার পর মনোনয়নপত্র জমার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক শো-ডাউন থেকে আচরণ বিধি লঙ্ঘিত হয়, সেটা তদারকি করবে এই ম্যাজিস্ট্রেটরা। তবে প্রতীক বরাদ্দের পর মূল দায়িত্ব পালন শুরু করবেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা। তিনশ সংসদীয় আসনের হিসাব করে প্রত্যেক ম্যাজিট্রেটকে কয়েকটি কেন্দ্রের দায়িত্ব দেয়ার কথা জানানো হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব জানিয়েছেন, স্কুল-কলেজগুলোতে ভোটকেন্দ্র স্থাপন হয়। ভোট কার্যক্রমকে সুচারুভাবে যাতে সম্পন্ন করা যায় সেজন্য তফসিল ঘোষণার আগেই অবকাঠামো সংস্কার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ইসিকে। এছাড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে ডিসেম্বরের আগেই সকল পরীক্ষা শেষ করতে বলেছে ইসি। এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় নভেম্বরের মধ্যেই সকল পরীক্ষা শেষ করার প্রস্তুতির কথা জানিয়েছে। অর্থ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, ঋণ খেলাপী যাতে নির্বাচনে অংশ নিতে না পারেন সে বিষয়ে সিআইবির প্রতিবেদন অনুযায়ী তারা ব্যবস্থা নেবেন। আর তথ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নির্বাচনের যেকোন প্রচারণার কাজ যাতে স্কলে দিয়ে দ্রুত মানুষের কাছে পৌছানো যায় সে ব্যবস্থা করবে তার মন্ত্রণালয়। সূত্র বলছে, পার্বত্য বা দুর্গম এলাকায় হেলিকপ্টারে নির্বাচনী মালামাল পরিবহনের জন্য সংশি¬ষ্ট দপ্তরকে জানানো হয়েছে। এক্ষেত্রে পর্যাপ্ত সংখ্যক হেলিকপ্টার ব্যবহার করা যাবে বলে জানিয়েছে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রতিনিধি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বিদেশি পর্যবেক্ষক নিয়োগে সহায়তা প্রদান করতে বলা হয়েছে। তারা এ বিষয়ে সকল সহায়তা করবে বলে জানিয়েছে। ইতিমধ্যে বিদেশি পর্যবেক্ষক আসার জন্য আবেদন করেছে বলেও জানিয়েছে তারা।