দৃষ্টিপাত রিপোর্ট ॥ হাডুডু খেলা গ্রাম বাংলার চিরায়ত নান্দনিক সৌন্দর্যে ভরা এক নাম, আধুনিক সময়ে বা সময়ের বিবর্তনে বাস্তবতার নিরিখে হাডুডু খেলাকে কাবাডি খেলা বলা হয় আর এই কাবাডি খেলা বাংলাদেশের জাতীয় খেলা। গ্রামের মেঠোপথ, বাড়ীর আঙ্গীনায়, গাছ গাছালিতে ভরা বিশ/ত্রিশ হাতের সমতল জায়গা হলেই হাডুডু খেলা সম্ভব। সব বয়সের, সব শ্রেনির মানুষের অতি পছন্দনীয় খেলা হাডুডু, প্রতি দলে বারজন খেলোয়াড়ের উপস্থিতি থাকে। তবে গ্রামাঞ্চলে স্থান স্বল্পতা কারনে ৬/৭ জন করে প্রতিদলে থেকে খেলা করে। গ্রামের আবাল বৃদ্ধ বনিতা সকলেই অতি রোমাঞ্চের সাথে উপভোগ করে হাডুডু খেলা। অতীতে শীত মৌসুম ব্যতিত সারা বছর যাবৎ হাডুডু খেলার আসর বসত, দুর দূরান্ত হতে লোকসমাগম হতো, প্রতিপক্ষকে স্পর্শ করে ফিরে নির্দিষ্ট ঘরে ফিরতে পারলে স্পর্শের শিকার খেলোয়াড় আউট আর স্পর্শ করতে যেয়ে ধরা পড়লে সেই আউট। কোন কোন সময় হাত পায়ের আঘাতে পক্ষ প্রতিপক্ষ আহত যে হয় না তা নয়, হাডুডু খেলা কেবল শক্তি প্রদর্শন নয় কৌশলও বিশেষ ভাবে কার্যকর, আধুনিক সভ্যতা, প্রযুক্তি এবং বিভিন্ন মুখ সৌখিন খেলার উপস্থিতির কারনে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য হাডুডু খেলা হারিয়ে যেতে বসেছে। বর্তমান প্রজন্মের জন্য হাডুডু খেলা অনেকটা অপরিচিত হতে চলেছে। এমন এক সময় ছিল যে সময় গ্রামে গ্রামে হাডুডু খেলার মহা আয়োজন চলতো। এক গ্রামের সাথে অন্য গ্রামের, এক ক্লাবের সাথে অন্য ক্লাবের পুরস্কার ও থাকতো আকর্ষনীয়। বাংলাদেশের বাস্তবতায় গ্রাম বাংলার অত্যন্ত জনপ্রিয় খেলা বর্তমানে আমাদের জাতীয় খেলার গৌরব অর্জন করেছে। কাবাডি জাতীয় খেলা হওয়ায় এর গুরুত্ব বহুগুনে বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৯৭৩ সালে দেশে কাবাডি ফেডারেশন গর্বিত হয়। ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ সর্বপ্রথম ভারতের বিরুদ্ধে কাবাডি (হাডুডু) টেস্ট খেলে। ১৯৮০ সালে এশিয়া কাবাডি প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। আমাদের দেশে গ্রামে গ্রামে কাবাডি খেলার প্রচলন পুরোপুরি থেমে যাইনি। সাতক্ষীরার বাস্তবতায় প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেমন হাডুডু খেলার উৎসব বসে অনুরুপ ভাবে শহরের ঝকঝকে এলাকাতেও দেখা যায় কাবাডি খেলা, বর্তমানে শীতের সময় গুলোতে হাডুডু খেলার আয়োজন দেখা যাচ্ছে। গতকাল জেলার দেবহাটা উপজেলার কোড়া গ্রামে বেশ জমজমাট আয়োজেন অনুষ্ঠিত হয়েছে হাডুডু খেলা। বর্তমান প্রজন্ম হাডুডু খেলা হতে অনেক অনেক পিছিয়ে গ্রামীন পরিবেশের সাথে একাকার আমাদের জাতীয় খেলা কাবাডি (হাডুডু) কে এগিয়ে নিতে হবে। বাঁচিয়ে রাখতে হবে। আর যদি এই খেলা হতে মুখ ফিরিয়ে নিই তাহলে আগামী প্রজন্ম হাডুডু খেলা নামক খেলার সাথে পরিচিত হতে পারবে না।